এরা পড়বে না। এরা পড়তে আসেনি।
এরা টিভিও যে খুব দেখতে চায়, তাও নয়। এমনকি, তা বিস্ময়করভাবে ফুটবল বিশ্বকাপও হলেও নয়। না ইউরো কাপ, বা, না কোপা দেল আমেরিকা সুদ, ফুটবলের সব টুর্নামেন্টেই এরা নিরাসক্ত। আর্খেন্তিনা বনাম ব্রাসিল ম্যাচের মতো খেলার প্রতিও এরা নিঃস্পৃহ থেকে যায়। অবশ্যই কেউ বলতে পারেন, যে, নিজেদের দেশ তো আর সেগুলোতে নেই, নিজেদের পতাকা, নিজেদের জার্সি তো আর নেই, সুদূর ভবিষ্যতেও সে সম্ভাবনাও নেই, যে, আগ্রহ থাকবে। তাদের প্রতি আমার বিনীত প্রশ্নঃ ভারতীয় ফুটবলদলের জার্সির রঙটা এরা বলতে পারবে তো? আচ্ছা, ছাড়ুন ও কথা; হ্যাঁ, আমরা জানি, যে, ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের অবস্থান কোথায়, এবং, খেলতে একটু-আধটু পারে, এমন দেশের সঙ্গে খেলা হলেই ভারত নিশ্চিত হারবে। অতএব সত্যিই, জার্সি – ফার্সি তুলে আবেগ জাগানোয় কোনো লাভ নেই, কেননা, শেষমেশ হাতে থাকবে, সেই মনখারাপ। একই কথা হকির ক্ষেত্রেও সত্যি; সেখানেও, আমাদের দেশের মান ক্রমশঃ পড়তির দিকে; ফলতঃ, জার্সির রঙ ফিকে হতেই থাকছে।
কিন্তু ক্রিকেট? সেই খেলায় তো ভারত মহাশক্তিধর একটা দেশ। কই, ভারতীয় ক্রিকেট ম্যাচ, এমনকি, অষ্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের মতো দেশ প্রতিপক্ষ হলেও তো এরা মাঠমুখো হওয়ার জন্য বায়না ধরে না, বা, পনেরো মিনিট আগে তো দূর, পনেরো মিনিটের জন্যও তারা টিভির সামনে বসে না!
খেলা, বিশেষ করে আউটডোর গেমসের প্রতি এদের কোনো টানই নেই।
এরা শুধু মোবাইলে গেম খেলতে এসেছে।
যে কথাটা প্রকৃত প্রস্তাবে বিস্ময়কর এবং খুবই আশংকাজনক, সেটা হলো, এদের প্রিয়তম গেমসের তালিকায় থাকা সব গেমেই ব্লাডশেড, যেখানে, লেভেল ক্রস করলেই নতুন নতুন অস্ত্রসম্ভার। অপোনেন্ট তথা মানুষ মারার জন্য।
এদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা হলো, যে, কোন্ খেলার গ্রাফিক্স কিরকম ইত্যাদি, কোন্ কী টিপলে সবচেয়ে তাড়াতাড়ি উল্টো দিকের মানুষটাকে মারা যায়, কতো তাড়াতাড়ি পরের লেভেলে যাওয়া যায়।
মানুষ, যে কিনা এখন আর বন্ধু নয়, স্বজন নয়, আত্মীয় নয়, শুধু, শুধুই অপোনেন্ট।
এরা মানুষ মারার গেমই খেলে।
গেম, মানে হলো গিয়ে, খেলা, মানুষ মারার। অর্থাৎ, মানুষ মারাটা এদের কাছে খেলা, খেলাই, আর কিছু নয়; খেলা মাত্র।
যেখানে শুধু রক্ত আর রক্ত।
যেখানে শুধু মৃত্যু আর মৃত্যু।
...মানুষের। অপোনেন্টের।
এরা কোনোদিন ❝বুকের দুয়ার খুলে❞ বলে উঠতে পারবে না ❝এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না❞!
পারবে যে না; সেটাই আমাদের মেনে নিতে হবে, নইলে, আমরা আবার অব্সোল্যিট হয়ে যাবো ওদের কাছে। যেমন কিনা কম্পিউটারের অপারেশন সিষ্টেম; কে যে নাম রেখেছিলো উইন্ডোজ; জান্লা, জান্লা দিয়ে, বিশেষ করে দক্ষিণ-মুখো হলে হাওয়া আসে, জান্লা, যেখানে উত্তরদিকে মাথা করে শুতে নেই, জাষ্ট নেই, কোনো এক কারণে যেটা কোনো এক প্রজন্ম, তার আগের প্রজন্মের কাছ থেকে জানতে ভুলে গেছে; জান্লা, পশ্চিমমুখো হলে সেই তাঁদের পাঁচ ওয়াক্তের নমাজ, যাঁরা, ধর্মসূত্রে, মুসলিম; জান্লা, পূবমুখো হলে, যার নীচে, চিরকালের জন্য হারিয়ে যাওয়া স্বজনের জন্য ফ্রেমবন্দী ফটো রেখে সেই তাঁরা স্বস্ত্যয়ন, তর্পণ ইত্যাদি করে থাকেন, যাঁরা, ধর্মসূত্রে, হিন্দু।
পূর্ব প্রজন্ম সবসময় উত্তর প্রজন্মের কাছে মাথা নুইয়ে আপস করে এসেছিলো, আসছে এবং আসবে; এ যে অস্তিত্ব রক্ষার দায়।
...তবুও দ্যাখার যে, শেষ পর্যন্ত কোন্ পক্ষ রয়ে যায়, সময়ের অক্ষদন্ডে...
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment