এ সময়টা বোধহয় আড়মোড়া ভাঙার, এরপরেই তো কিছুটা সানুনাসিক স্বরে বলে উঠতে হবে "বেলা যে পড়ে এলো, জলকে চল"। তাছাড়া কোথা থেকে যে পিঠে এতো আঁচ এসে লাগছে; সরে বসাই ভালো। কেউ ফিরবে, নিজেদের মতো করে, তারাও তো প্রস্তুতি নিচ্ছে দেখছি। কেউ কেউ অবশ্য আরও খানিকক্ষণ থাকলে ভালো।
এখনো কিছুটা আলো আছে, এই সময়েই ওঠা ভালো, পরে ধুমসো আঁধার নেমে গেলেই চিত্তির। সবচেয়ে বড় কথা, আমাকে যারা পৌঁছে দিয়ে ফিরবে নগরজীবনে তাদের কথা একদম না ভাবা সম্ভবত অনুচিত। এইসব বিকেলে জাল ছোট হয়ে আসে, অনেকানেক মত মুছে যায়; ভাস্বর হয়ে বাজে ঈশ্বরের মত, সেইমতো চলার পথ।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
যে কথা বলার নয়, ভালোবাসায় গিয়ে সেই কথা বলে ফেলি অস্ফুটে, মুহূর্তে নৈঃশব্দ্য ধরে যায়, হারিয়ে যেতে থাকে অপাপবিদ্ধতা। এই হলো বেঁচে থাকা, যার থেকে বহু দূরে এক শিশুর মুখাবয়ব দেখতে পাই আমি, সে কি তীব্র গতি তার, হাত্তা ধরে ফেলেছে কাটা ঘুড়ির, ছুটে আসছে আমার দিকে। এবার আমি কোনদিকে যাবো?
অনিন্দ্য ঘোষ ©
মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। সব কিছুই এখন আকর্ষণীয় মোড়কে মুড়ে হাজির করা হয় জীবনের কাছে।
শুধু কি জীবন? জীবনের পরেও মরচুয়ারী র্যাপিং বলে ভারী সাজানো গোছানো শব্দ ইদানীং এসেছে হাসপাতাল অথবা নার্সিংহোম থেকে।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
আবারও ট্রেন। আবারও তাকে দেখতে না পাওয়া। শুধু তার শব্দ শুনে তাকে সত্যি বলে ধরে নেওয়া। আবারও। ...এবং আবারও ভালোবাসা।
১৬-ই জানুয়ারী থেকে আমার দিন গোনা পাল্টে গ্যাছে; - শুরু হয়েছে কাউন্ট ডাউন, বাবার ঠিক কতোদিন পরে আমি। হ্যাঁ, মাঝে অবশ্য মা আছে; আর মরার পরেও কাউকে কষ্ট, যেমন কিনা সন্তানশোক, না দিতেই ইচ্ছে করে। আমার আগে এক রোনেওয়ালি, সমান্তরালে আরো এক, কিন্তু এটা তো সত্যি যে পিছে কেউ নেই। অতএব, কাউন্ট ডাউনে... আপত্তি কিসের !
কেউ যেন ভেবে এই ভুলটি না করে যে, অবসাদ গ্রাস করছে আমায়। বরং বলতে পারি খুব আরামপ্রদভাবে আমি স্থাণু হয়ে যাচ্ছি, জড়োসড়ো হয়ে যাচ্ছি, স্টুপর হয়ে যাচ্ছি; - শুধু এক্সটেনশন কর্ড লাগিয়ে দুটো প্লাগ গুঁজে টিভিটা চালাতে উঠতে হবে ভেবে আমার পছন্দের খেলা দ্যাখা আমি ছেড়ে দিই, ডেকচেয়ার ছেড়ে উঠি না, যেন ওতে নষ্ট হবে বিপুল সময়। অনর্থক। অবশ্য সেভাবে ভাবলে পৃথিবীটাই তাই। সব মানুষের জন্য ভালো দিন তো এলো আর না। তার চেয়ে তিন হাঁটু এক করে আমি নিজেকে ব্যাকরেষ্টে হালকা করে ছেড়ে দিই, মাঝেমাঝে মোবাইলে দেখে নিই স্কোরকার্ড। ভালো কোনো পরিবর্তন কি এলো? নাকি, আরো খারাপ দ্যাখাচ্ছে গ্রুপাবস্থান?
তো, এইভাবে দিন, এইভাবে রাত। ঘুমের ওষুধেও যা, ওষুধ ছাড়াও মোটামুটি তাই। ট্রেন চলে যায়। আমার বাবা যেভাবে চলে গ্যালো। বাবার শেষশয্যার চোখদুটো... মনে পড়ছে।
দ্রষ্টব্যঃ অনেক গানের প্রভাবদুষ্ট হয়ে এই লিখন প্রয়াস।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
জেভিয়ার জেন্স, ফরাসি নাম, কে জানে বাবা ঠিকমতো উচ্চারণ হলো কিনা, যাই হোক, যেটা বলছিলাম, তাঁর একটা ছবি আছে, নাম, ফ্রন্টিয়ার্স (২০০৭)।
চলচ্চিত্রটা সম্প্রতি দেখলাম, বিশেষ কোনো যৌন গন্ধ নেই, যা আছে, তা হলো, গ্র্যাফিক ভায়োলেন্স এবং গ্যোর। এবং তার জন্যই ছবিটা প্রায় সারা পৃথিবীতে, বিশেষতঃ ইউরোপে NC -17, যাকে বলে কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
এই প্রেক্ষিতে আমি ভারতের কথা ভাবি, প্রহার ছবিতে যথেষ্ট গ্র্যাফিক ভায়োলেন্স ছিলো; অথচ সেটার দরজা ছিলো সবাইয়ের জন্য খোলা এবং ইংল্যান্ডে পেরেন্টাল গাইডেন্স ছিলো ১৮ বছর।
আবার পার্চড ছবিতে রাধিকা আপ্টের খোলা বুকের একটা দৃশ্যের জন্য, ছবিটা অ্যাডাল্ট।
আমরা আসলে বুঝিই না যে, কিশোর মনে হিংস্রতা কি মারাত্মক প্রভাব ফ্যালে। যে কেউ NCRB বা সম্ভবপর হলে কনসার্ন্ড DCRB - এর ডেটা চেক করুন, এবং কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কিশোর/কিশোরীর সঙ্গে কথা বলুন; আমার ধারণা, এবং আমি মনে করি, যে আমার এই ধারণা একশো শতাংশ সঠিক যে, কিশোর অপরাধের মধ্যে যেগুলো হ্যেইনাস নেচারের, সেগুলোর প্রায় প্রত্যেকটা যে কোনো না কোনো চলচ্চিত্র থেকে নেওয়া, সেটার প্রমাণ পাবেন।
আমাদের কাছে এককণা যৌনতা ট্যাবু; কিন্তু কি হাস্যকর, হিংস্রতা নয়। অথচ প্রকৃতি কিন্তু অন্য কথা বলছে, একটি মেয়ের, এই ট্রপিক্যাল রিজিওনে পিউবারটি শুরু হয় বারো-তেরো বছর বয়সে এবং একটি ছেলের তেরো-চোদ্দ বছর বয়সে। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে সেক্সুয়াল অ্যায়োকেনিং যে ওই বয়সেই শুরু হয়ে যাবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
...তবুও ডিপ ক্লিভেজ দ্যাখানো হয়েছে, শুধুমাত্র এই কারণে অনেক বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের, বিশেষতঃ পুত্রসন্তানদের সেই সিনেমাটা দেখতে দ্যান না। তাঁরা ভুলে যান, তাঁদের বাড়ীর বাইরে একটা পৃথিবী আছে; যেখানে রানিং ওয়াটারের স্ট্যান্ড পোস্টে অনেক মেয়ে স্নান করে এবং তাঁদের পুত্রসন্তান সেই পথে হেঁটে যেতে গিয়ে সে দৃশ্য দেখে ফ্যালে ও দ্যাখে। তাঁরা এও ভুলে যান, তাঁদের কিশোরের একটি মা এবং বোন / দিদি আছে, তাঁরাও নিজস্ব ঘরে পোশাক পাল্টান, যে ঘরে সেই কিশোরের অবাধ আনাগোনা। স্বাভাবিক। এবং তাঁদের পোশাক পরিবর্তনের সময় পুত্র এবং দাদা / ভাইয়ের না জেনে ঢুকে পড়াটাও আচম্বিত নয়। তাহলে তাঁরা কি এটাই চান যে মাস্টার্বেট করার সময় তাঁদের সুপুত্র সেইসব দৃশ্যই ভাবুক? আমি জানি, চান না। কিন্তু সেদিন কোন একটা স্টাডি থেকে পড়ছিলাম, যে, নকচারাল এম্যিশনের সময় একজন বয়ঃসন্ধির ছেলে, যতো স্বপ্ন দ্যাখে, তার নাইনটি পার্সেন্ট ইন্সেস্টিক। কেন যে পিডিএফে রাখা স্টাডিটা ইন্টারনেট থেকে নামালাম না ! পরে অনেক চেষ্টা চরিত্র করেও পরে স্টাডিটাকে আর পেলাম না।
এই লিখনের উদ্দেশ্য কি তাহলে কিশোর / কিশোরীদের জন্য, অন্ততঃ, সফট পর্নোগ্রাফি প্রোমোট করা? - না, মোটেও তা নয়, বক্তব্য একটাই, আর সেটা হলো কিশোর / কিশোরীদের জন্য সফটকোর বা হার্ডকোর পর্নোগ্রাফি, বা কমার্শিয়াল / প্যারালাল সিনেমায় দ্যাখানো ন্যুডিটি বা সেমি ন্যুডিটি যতটা ক্ষতিকর, গ্র্যাফিক ভায়োলেন্স এবং গ্যোর তার চেয়ে অনেকবেশী ক্ষতিকর এই কারণে সেটা তার বা তাদের মনে ক্ষত যথা ছাপ ফেলে যায়, যার ফল সুদূরপ্রসারী।
নির্ভয়া ম্যাসাকারের কথা খেয়াল করুন, সেখানে একটি কিশোর ছিলো, যে ধর্ষণ করেছিলো এবং মেয়েটির লোয়্যার প্রাইভেট পার্টে জগার ঢুকিয়ে দিয়ে তাতে মোচড় মেরেছিলো। কিশোরটির বয়স তখন ষোলো, সেক্সুয়াল অ্যায়োকেনিংয়ের সময়, এবং সেটাই হয়তঃ ট্রিগার করেছিলো, ধর্ষণে। যদিও আমি, ব্যক্তিগতভাবে বারো বছরের বেশী যে কোনো কারোর কোনওরকমের সেক্সুয়াল অফেন্ডারের শাস্তির পক্ষে, ষোলো বছরের কম হলে ইনস্টিটিউশ্যানাল কারেকশনাল মেজারকেই সমর্থন করি এবং তার ফ্রেশ স্টার্ট যাতে না হয়, সেটাই চাই; যেমন চাই না, একটু বকুনি খেয়ে তার বাড়ী ফিরে যাওয়া।
...কিন্তু ওই জগার ঢোকানোটা কিসের তাগিদে?
শেষ করার আগে, আমি যেটা সব কিশোর / কিশোরীর বাবা-মাকে জানাতে চাই, সেটা হলো, অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এককণা যৌনদৃশ্য দেখে ফ্যালার চাইতে গুরুত্ব দিন এমনভাবে, যাতে, আপনার সন্তান এককণা হিংস্র দৃশ্য যেন না দ্যাখে।
আমাদের মনের মধ্যে যৌনতার চেয়ে হিংস্রতা বেশী ঘোরে, বুভুক্ষু হাঙরের মতো। আমরা আমাদের সবচেয়ে আদিম প্রবৃত্তিটাকে ফেলে আসতে পারিনি; - নিজের কথা ভাবুন, চলন্ত ট্রেনে কাটা পড়া মানুষকে দ্যাখবার জন্য কেমন সুন্দরভাবে ভিড়ের মধ্যে মিশে যান আপনি।
আর এটা বোঝবার জন্য সাইকোলজি পড়ার দরকার নেই, সাধারণ জ্ঞান বা কমন সেন্সই যথেষ্ট।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
একটা সময় আসে, যখন খুব প্রিয় কোনো জামার দিকে তাকিয়ে একদম আচমকা মনে হয়ঃ এটা পুরোনো হয়ে গ্যাছে, আর এটাকে পরা যায় না। জামা থেকে ফেসবুক হয়ে জীবন, যা আমার ব্যবহার্য, তার সবকটাই ব্যবহার করতে গিয়ে আমার এই জামা-অনুভূতি বারংবার ফিরে ফিরে আসে। জীবন, তাও বেশ পুরোনো হলো, ঠিক পঁয়ষট্টি পার্সেন্ট লিনেন আর পঁয়তিরিশ পার্সেন্ট কটন না হলেও, পিওর কটনই ছিলো বোধহয়; ইদানীং দেখি, এদিক - ওদিক পিঁজেও গ্যাছে, যে কোনো দিন ফেঁসে যেতে পারে। ...তবুও সেটাকে কি পরম মমতায় ব্যবহার করে চলেছি; আর স্পেকুলেট করার চেষ্টা করেছি, মানুষ কখন, ঠিক কখন, সুইসাইড নোট লেখে আর তারপর, হ্যাং করে যায়। কিন্তু জামাটা হালকা ক্ষারে কেচে, নীল দিয়ে, ফুলবাবুটি হয়ে থাকার কি নির্ভেজাল প্রচেষ্টা আমার ! তাহলে আমি চাইটা কি? - বেঁচে থাকা, বেঁচে নেওয়া আর মৃত্যুর মধ্যে প্রকৃতপ্রস্তাবে, আমার লোকাস স্ট্যানডাইটা ঠিক কোথায়? - বেঁচে থেকে, নিতে নয়, বেঁচে থেকে, মৃত্যুর রেহটরিক ব্যঞ্জনা দিতে? নাকি মৃত্যুকে পায়ের তলায় রেখে বেঁচে নিতে? নাকি মৃত্যুর মেটাফর দিয়ে বেঁচে থাকা ঢাকতে? আমার যতদূর ধারণা হয়, তৃতীয়টাই সত্যি; - মরচুয়ারী র্যাপিংয়ের ভিতর থেকে নিয়মমাফিক শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে আমার; এমনটাও হতে পারে, চলছে নয়, আদতকথায়, শ্বাস-প্রশ্বাস চালাচ্ছি আমি নিজেই। অথচ মৃত্যুপ্রয়াসের কথায় আমার মগজ জেগে ওঠে, অর্থাৎ, জাস্ট, মৃত্যু বিলাসিতা। বা ব্যাপারটা এইরকমও হতে পারে, যে, একটু একটু করে মরে যেতে যেতে সম্পূর্ণ মারা গেছি আমি অনেকদিন; আমার খোলসের আড়ালে এদিক ওদিক যায়, বসে,খায়, ঘামে, ঘুমোয় এক উদাসীনতার ফসিল। আমি সত্যিই জানি না, জিনিসটা ঠিক কি? - যদি, যার প্রতিফলন আয়নায় পড়ে, সেটা আমিই, তাহলে, মোটের ওপর ব্যাপার বোধহয় এই যে, কিছু মায়া রয়ে গ্যাছে। জানি না, পিঁজে যাওয়া জামা, ওহ, কি জ্বালা; সেক্ষেত্রে, বহুব্যবহৃত, ফেঁসে আসা জীবন নিয়ে এই মায়াপুরাণ কবে ফুরোবে আমার !
অনিন্দ্য ঘোষ ©
বছর দশেক আগের একটা লেখা থেকে সংস্কার করে পুনর্লিখন।
নাকি কথা ছিলো পাশে থাকার, সাথ দেওয়ার, ভালো-মন্দ দ্যাখার। কার পাশে কে? কার ঘরে আয়না আছে? এখন?
অথচ মানুষই মানুষকে নির্দিষ্ট করেছে। পাঁচ বছর প্রতি এমনটাই হয়। সেদিন আওয়ামি সিদ্ধান্ত শেষ কথা বলে। বাদবাকী সময় সাধারণ মানুষ হলো একদম শেষের প্রসঙ্গ। আজব হলো এই যে, সবার মুখে মুখোশ; - না কোভিডের নয়, ভালো মানুষের। এমনই সে মুখোশের এঁটে থাকা যে, মুখে-মুখোশে একাকার, টেনে ছেঁড়বারও সুযোগ নেই।
তবুও, লহমায় দেখা যায় আসল মুখ, যদি সেসময় চোখ থাকে, মনোযোগ থাকে। উপলব্ধ হয় যে, এ মুখ মানুষের নয়, শয়তানের প্রতিনিধির।
আর সে-ই বা কোথায়, যার কথা ছিলো শয়তানকে টেনে মঞ্চ থেকে নামানোর, নামিয়ে বলারঃ রাজা, তোর কাপড় কোথায়?
অনিন্দ্য ঘোষ ©
কি ভাবছেন? এগুলো সব নতূন লেখা?
আরে ধূস, এগুলোর প্রত্যেকটাই প্রায়, ফেসবুকে আগে লেখা, আমি এখানে যেটা করলাম, সেটা হলো, সবকটাকে একসঙ্গে ঘাড় ধরে টেনে এনে, ওই যাকে বলে অ্যাগ্লোম্যারেট বা কংগ্লোম্যারেট করা, সেইটুকুই করে, জাস্ট, কপি-‘ন-পেস্ট করে দিলাম।
ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment