Wednesday, January 4, 2023

মাটির গান

 

 

দক্ষিণ ২৪ পরগণা এক বেমক্কা বিচিত্র জেলা; দূর-দূরান্তের প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে আদ্ধেকের বেশী পরিষেবা পৌঁছোয় না, বুকের বাঁ দিকে তীব্র ব্যথা হলে, নাহ, অ্যাম্বুলেন্স নয়; দেখতে হয়, নদীতে জোয়ার আছে কিনা; ভাঁটা থাকলে, কেস গুরুচরণ। আবার গ্রাম এসে মেশে শহরতলীতে, যেখানে বেসরকারি নার্সিংহোমে, মৃত্যুর দিকে অনেকটা পা বাড়িয়ে ফেলা মানুষকে স্যালাইন দিতে ভুলে গিয়ে অ্যাকাউন্টসের খুঁটিনাটি চেক করে কর্মীরা, আর নার্সিংহোমের বাইরে, প্লাষ্টিকের চেয়ারে বসে খৈনি টিপতে টিপতে খোশ গল্প জোড়ে অ্যাটেনডেন্ট, আর ওদিকে, আই সি ইউ-তে কোমায় চলে যাওয়া পেশেন্টের গা থেকে সরে গেছে কম্বল, আই সি ইউ-এর প্রচন্ড ঠান্ডায় অচেতন রোগীর শরীরের রোমকূপ খাড়া হয়ে গেছে, এমনতরটাই, বলতে গেলে, সচরাচর।  শহরতলী এসে মেশে ঘোরতর শহরের সঙ্গে, যেখানে, মৃত্যুর সঙ্গে যোঝবার মতো অ্যাপারেটাস আছে, ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা আছে। 

 

... আর সব কিছু ফেল মেরে গেলে? কেহ কাটে ঝাড়ের বাঁশ, কেহ পাকায় দড়ি। 

তা হোক, যতক্ষণ প্রাণ ততক্ষণ শরীর। আর তার পরে, বডি। তো, শরীর বা দেহতত্ত্ব নিয়ে গান যে বাংলায় কম, তা তো নয়ই, বরং সবচেয়ে বেশী।  অ্যাতোটাই বেশী যে, একই গান, টেরিট্যরি ভেদে, লিরিকে পাল্টে যায়। দক্ষিণ ২৪ পরগণার কথা তোলার কারণ, এই জেলার যত গভীরে যাই, সুগায়ক শ্রী অনুপম রায় যেমন যেতে বলেছেন, ততই এই জেলার সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ফুটে উঠতে থাকে।

নীচের গানটা পেরুজ করুন; এ ব্যাপারে আমি তো নেহাতই শ্রুতি সম্বল, প্রথম ভার্সনটা কিন্তু দোখনো, মানে, টিপিক্যাল (ইন্ডিভিজুয়াল নয়) দক্ষিণ ২৪ পরগণার গহন থেকে উঠে এসেছে। পরে শ্রদ্ধেয় লালন ফকিরের দুটি গানের কিয়দংশ উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু কেন করা হয়েছে, সেটা, আমার অন্ততঃ জানা নেই।

 

 

কে বানালে এমন ঘর, 

ধন্য কারিগর 

তার বলিহারি কারিগরি 

কারিগরের কোথায় ঘর

 

এ ঘরের নয় দরজা 

অসংখ্য জানালা আছে

নেই কো জানা তা

অনন্ত ভাবছে বসে

এ ঘরের অন্ত পাই কিসে

 

এ ঘর চল বললেই আপনি চলে

এমনি মজার ঘর

ধন্য কারিগর 

কে বানালে এমন ঘর

ধন্য কারিগর 

 

 

লালন ফকিরঃ

 

...মূলাধার কুঠুরি নয়টা

তার উপরে চিলেকোঠা।

তাহে এক পাগলা বেটা

বসে একা একেশ্বরে।

ধন্য ধন্য বলি তারে...

 

আবার অন্য এক গানে পাচ্ছি -

 

আট কুঠুরি নয় দরজা আঁটা 

মধ্যে মধ্যে ঝরকা কাটা।

তার উপরে সদর কোঠা

আয়না মহল তায়

কেমনে আসে যায়

খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়...

 

এখানে একটা দোষ স্বীকার করে যাওয়া বাঞ্ছনীয়, কসমিক সেক্স ছবিটা যখন প্রথম দেখেছিলাম, প্রচুর খিল্লী করেছিলাম। পরবর্তীকালে, এর ওর নানাবিধ সাহায্য নিয়ে বৃহৎ তন্ত্রসার বইটির বেশ খানিকটা পড়ে, আর যা বুঝি, এটুকু অন্ততঃ বুঝেছিলাম, ওভাবে খিল্লী ওড়ানো এক্কেবারে উচিত হয়নি। এক্কেবারেই না। ওদিক দিয়েও একটা রাস্তা আছে। জানি না, অডি বা মার্সিডিজ বেঞ্জ ওখান দিয়ে চালানো যাবে কিনা।

 

...বিরল দু-এক প্রাজ্ঞজনেদের মুখে শুনেছি, ওদিকের পথটা প্রথমে একটু সরু। কিছুদূর যাওয়ার পর অডি বা মার্সিডিজ বেঞ্জ চলারই রাস্তা। এমনটাও নাকি ঘটেছে, অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে, অনেকেই, শুঁড়ি পথ ধরে আগের রাস্তা ছেড়ে, এই রাস্তায় গেছেন।

 

...তা এসব শুনে আমার লাভ কি? আমার দু পা থাকতেও আমি শিশিরে ভয় করবো নাকি? 

 

 

...বাল।

 

 

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

 

No comments: