Monday, March 6, 2023

প্রেমের দিনগুলোতে ভালোবাসা

 

 

 

 

 

কৈফিয়তঃ  

 

আত্মজীবনী মানুষ, যেমনটা সচরাচর, লিখতে শুরু করে ৬০ তে পা দেওয়ার পর শ্মশানের লাইনে, খুঁজে পেতে নেওয়া, নিজের জায়গাখানি নিশ্চিত হলে, কাগজ কলম নিয়ে, বাল্যকালের দিকে তাকায়, টেলিফটো লেন্সটা জুম করে পঁয়ষট্টিতে বসে সে লেখে আটাশ বছরের কথা, এবং সেটা যদি গ্রাহ্য হয়, তাহলে, এটাও আরো বেশী করে গ্রাহ্য হওয়া উচিত, কারণ ঊনপঞ্চাশে বসে আমি রঙ চাপাচ্ছি আমার ২৬ - ২৭ বছরের ক্যানভাসে ছবি আঁকতে তো আর শিখিনি, তাই চেষ্টা করছি প্রেমের দিনগুলোতে, ভালোবাসার শব্দের কোলাজ বানাতে; যদি তাতে কিছু ছবি ফুটে ওঠে...

 

লিখতে চাইলেই, বাহুল্য যে, আমাদের ভালোবাসার কোলাজে অবধারিতভাবেই বিভিন্ন মুখ, মুখোশ, অশ্রু, কান্না আর মৃত্যুর নানান গড়ন দেখা যায়; আমি দেখার চেষ্টা করছি, সবকিছুর ঝাপসা, পাঁশুটে আদল থেকে, জোর করে, টপকে বেরিয়ে আসতে পারে কিনা সে, ওই যে, যার পোশাকি নাম ভালোবাসা  

 

সার্বিক শুভকামনা রাখা রইলো

 

অতঃপরঃ

 

আমাদের ভালোবাসার দিনগুলো কবে যেন শুরু হয়েছিলো? হিসেবটা আমি এইভাবে কষি যে, আমাদের যৌথ দারিদ্র্য একটু হলেও কমলো যেন কবে নাগাদ...

তার থেকে আরো দশ বছর ট্যাকিওনে চড়ে গেলে, ওই যে, আমাদের ভালোবাসার দিনগুলোর শুরু দেখা যাচ্ছে একাডেমির থিয়েটার, নান্দীকার আয়োজিত থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল; সে ফেস্ট বাদ দিলে, মনে আছে, তখন, গ্রুপ থিয়েটারের একটা স্বাভাবিক শো এর সবচেয়ে কম দামের টিকিট ছিলো পাঁচ টাকা তখন বিকেল দিয়ে আমার মুগ্ধতার শুরু, নাটকের প্রতি এবং নাটক দেখতে যাওয়া, পাশে বসা, আমার জীবনের নাটকের লীড রোলের প্রতি কতো ভালো ভালো নাটকের স্বাদ, গন্ধ, অর্থাৎ কিনা তাদের সার্বিক যে আমরা ভাগ করে নিয়েছি...

 

সিনেমা জগতে অ্যালিয়াস ফ্রসেঁজ, কদাচিৎ ম্যাক্সমুলার ভবন (আমি নিশ্চিত নই, তবে ওই প্রতিষ্ঠানের মতো কিছুই ফাস্‌বাইন্‌ডারের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো), গোলপার্কে স্প্যাগেত্তি ওয়েস্টার্ন কিছু ছবি আর নন্দনে পাঁচটি টংকার বিনিময়ে পাওয়া, খামে যে ব্রাউন পেপার ইউজ করা হয়; তারই থান থেকে কেটে কেটে দেওয়া টিকিট, সিনেমা দেখে বেরিয়ে নেসকাফের চা চান তেংয়ে কফি, সঙ্গে, আসার পথে, জয়িতার কিনে আনা এক-এক-দিন-এক-এক-রকম কুকিজের বাক্স 

 

... মনে পড়ছে, ২০০০ সালের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সে কি রমরমা, কি তার গ্র্যাঞ্জার; ট্রিবিউটঃ গোদার অন সেভেনটি, হোমেজ, এলিসেও সুবিয়েলা (সুবিয়েলা সেবার সশরীরে এসেওছিলেন, স্প্যানিশ ভাষা বেশ কিছুটা শিখে ফেলার দৌলতে, কিছু কথোপকথনের সুযোগ মিলেছিলো নন্দনের লিফটের সামনে, বালি দেওয়া সিগারেটের দগ্ধাবশেষ গোঁজার ষ্ট্যান্ডের থেকে একটু দূরে; খুবই সামান্য কথার বিনিময়; আর সমস্যা তো গ্রামারে নয়, সমিস্যে ভোকাবুলারিতে যেটুকু বুঝেছিলাম, আপামাথা একজন কবি, যিনি, সিনেমা মাধ্যমটাকে বেছে নিয়েছেন, তাঁর অনুভবের প্রকাশের জন্য।) তাঁর শেষ কথাটা মনে থাকবেঃ আর্খেন্তিনা এসো কথা হবে তোমাদের বাংলার সাম্প্রতিক কবিতার অনুবাদ এনো আর আসার আগে আমাকে জানিও কেমন করে জানাবো সেটা কিন্তু আর ঠিক হয়নি

 

গোদারের ট্রিবিউট ওপরে লিখেছিলাম বটে, এখন মনে হচ্ছে রেট্রোস্পেক্টিভ লিখলে ভালো করতাম, কারণ, ইনি গোদার যে, ফিরে ফিরে দেখতে হয় তাঁকে, এটা ফুল-তুলসী দিয়ে অর্ঘ্য ছুঁড়ে দেওয়ার কেস নয়  নাহ, হেল মেরি, ফার্স্টনেমঃ কারমেন বা ডিটেকটিভ এর মতো সিনেমা আসেনি ঠিকই, কিন্তু ব্রেথলেস তো এসেছিলো... আর ইস্টউইন্ডের খবর সম্ভবতঃ সে'সময়ের বাম সরকারের কেষ্টবিষ্টুরা জানতেন না, এরকমই ধারণা যায় আমার নচেৎ, ওই একটা ছবি, যে কটা ভেন্যু সিলেক্টেড ছিলো, তার সবকটাতেই দিনে দুবার করে স্ক্রীনিং হতো; ওই যেমন করে বালগোপালের ভোগ রান্না হয় আর কি...

 

শালী স্মৃতি যদি নখরাবাজী না করে, তাহলে, আলেকজান্ডার সকুরভের মলচ এবং টরাসও এসেছিলো সেবারেই পরেরবার পাসোলিনি মনে আছে, চসারের ক্যান্টারবেরি টেলস, যা, আমার সামান্য পড়ায় এরোটিকা বলেই মনে হয়েছে, হ্যাঁ ফ্রেম ন্যারেটিভের মধ্যেই, ওই যে একটা আখ্যান থেকে অন্য আখ্যানে চলাচল, সেটা সম্পূর্ণতঃ এরোটিকার ক্রাচে ভর দিয়ে, আর পাসোলিনি, দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস সিনেমা থেকে সবার আগে এরোটিকাটাকে মুছে দিলেন, পিঁয়াজের খোসাচ ছাড়ানো মাফিক খুলে নিলেন এরোটিকার ছাল-বাকল কিভাবে? - সবচেয়ে সহজ পন্থায়, সব চরিত্রই নগ্ন, কিন্তু একান্ত প্রয়োজন না হলে, কেউই কারোর ন্যুডিটির দিকে তাকাচ্ছে পর্যন্ত না, ম্যাক্সিমাম হাতে হাত, বাস; তাও অবরে-সবরে মনে পড়ে গিয়েছিলো এবং এখনো গেলো সেই অমোঘ বাক্যঃ পোশাকের নীচে আমরা সবাই আইডেন্টিক্যালি নেকেড সত্যিই তো, কারোর নগ্নতা, যেকালে, বেশী নয়, কমও নয়, তাহলে দেখার জন্য আর আছেটা কি?

 

অ্যাতো কিছু ইন ডিটেইলস বলার কারণ? - মন্ত্র, তা দৈবাদিষ্ট হলেও, গুরুকে দিয়ে উচ্ছিষ্ট করিয়ে নিতে হয়, নইলে হাজার জপেও সবকিছু নন্‌জপড্‌ থেকে যায়; আমাদের ভালোবাসাও ঠিক একইপথে সম্মৃদ্ধ হচ্ছিলো

কিন্তু ওই...পুঁথি বেড়ে যাওয়ার বড়ো হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হচ্ছে বাস্তবতা বড়োই কর্কশ কিনা

 

এভাবেই চলছিলো দিনগুলো, খিদে পেলে কোনোদিন ঝালমুড়ি আর চা, কোনোদিন সমষ্টি করা টাকায় এগরোল... এভাবেই মনে আছে, একদিন গোলপার্ক থেকে বেরিয়ে শিয়ালদার লেবুতলা অবধি হেঁটেছিলাম, পরীক্ষামূলকভাবে অবশ্যই; কিন্তু তাতে করে খিদেটা যা শানিয়েছিলো, আর ঈশ্বর যেজন, তিনি আর যাই হোক, সময়টা ভোলেন না; নইলে মানুষ মরে? যাঁরা কৃতবিদ্য, তাঁরা হয়তঃ পারেন অন্যের মৃত্যুকে কিছুটা ডেফার্ড করে দিতে, কিংবা কারোর চলে যাওয়ার কথা ভাবলে অন্তর থেকে প্রকৃত অশ্রু এলেও হতে পারে তা; কিন্তু ওই অতোটা পথ হেঁটে এসে, বাসের ভাড়া বেঁচে যাওয়ার পয়সার সঙ্গে কিছু এক্সট্রা ছিলো দুজনের কাছেই; ফুটপাতের স্টল, মানে, দাই পাই দং থেকে ফুলপ্লেট চাওমিন উইথ চিকেন গ্রেভি, আহা, প্লেটটা যখন দোকানদার একটা অর্থহীন হাসির সঙ্গে এগিয়ে দিচ্ছে; হাসি তখনই হাসতে পারে মানুষ, যখন সে অপরের খিদে বুঝে, সামান্য কটা টাকার বিনিময়ে, পেটভরা খাবার দেয়; তো, এগিয়ে আসা চাওমিনের প্লেট থেকে ওঠা বাষ্প আমি আজও দেখতে পাই, ঘ্রাণেও ধরা পড়ে তা

 

এই প্রেম আর পয়সাহীনতা, আমায় বুঝিয়ে দিয়েছিলো যে, টিউশনি করে পাওয়া ফ্যাটপ্যাক নিয়ে, আর চটে, মানে, তিন পাত্তির আড্ডায় বসা যাবে না; ফুল প্লেট কাবাব আর বাংলা সম্বল করে শ্মশানে, চিতার ধারে বসা যাবে না

 

আমি বিয়ে না করেই, প্রেয়সীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়াই গেরস্ত হতে থাকলাম; কার্টসিঃ ভালোবাসা

 

আমাদের সিনেমা, আমাদের বই, আমাদের গান বারংবার আমাদের বলে চলছিলো যে, আমরা সভ্যতার পক্ষে সেই ডেঞ্জারাস প্রজাতি হয়ে আছি, যাকে অর্ধশিক্ষিত বলা হয় আমাদের পড়াশোনা দরকার আর আমি অবধানতাকে এভাবে বুঝি, প্রথমে একটা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে রেজিমেন্টেড পড়াশোনা, সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আরো পড়া এবং ফিল্ডে সেগুলোকে অ্যাপ্লাই করা

 

টিউশনি করে এবং সেই টাকায় জুয়া না খেলে, নিত্য মদ না খেয়ে, এবং ওদিকে, জয়িতার একটা কম্পিউটার ইন্সটিটিউশনে বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের মগজ মুড়িয়ে, কম্পিউটার শেখার (ওদের একটা ব্যাচের নাম ছিলো, স্কুল লিভারস' ব্যাচ, এবার বুঝে নিন) চাকরি থেকে টুকরো-টুকরো বাঁচিয়ে, বেশ কিছু জমে যাওয়ায়, আমরা আর একটু পড়াশোনা করতে ঢুকলাম

 

ঢুকলে বেরোতে হয়, তা সে এই মরপৃথিবীর যে কোনো জায়গাই হোক না কেন, ফুটিয়া মৃতদেহও ক্রিমেট্যরে ঢোকে আর ছোট্ট একটা ট্রেতে সাদা-ধূসর-কালো ছাই হয়ে বেরোয়; তাকে বেরোতে হয়, নচেৎ নতুন মৃত পোড়বার জায়গা পাবে কোথায়! মিলান কুন্দেরা কি এইসব সাতে পাঁচে বারো ভেবেই লিখেছিলেন লেট দ্য ওল্ড ডেড উইল মেক রুম ফর দ্য ইয়ং ডেড? - জানি না, কিন্তু, এটা জানি যে, ডিগ্রী টিগ্রী নিয়ে বেরোনোর পর আমার প্রথম বোধি হয়েছিলো, সাহিত্যের থেকে আমাকে আইন বেশী টানছে

 

সেই প্রবীণের দিকে চলে যাওয়া বয়সে, লেজিসলেশনস, রুলস, রেগুলেশন্স পড়া আমার শুরু হলো, যে কোনো আইনের যেখানে শিশু বলা আছে, সেই অংশটুকু আমি আমার চেতনা দিয়ে পড়তে লাগলাম, কোনোদিন চৈতন্যে যাবে এই আশা নিয়ে এরমধ্যেই একটা নতুন চাকরি পেলাম, আরো ভালো করে, সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে বললে, জীবনের প্রথম চাকরি খেয়াল রাখবেন সেটা ২০০৫ এর অক্টোবর, ২০০৮ এর পে কমিশন তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, শুধু তাই নয়, তার ইউটেরাসে ওভালুয়েশন হয়েছে কিনা সন্দেহ, আর তখনই কিনা আমার মাইনে, পঁচিশ হাজার সাতশো নয় টাকা, তাও কিনা মাসে! সঙ্গে একটা গাড়ী ফ্রী; জয় এইচ আই ভি / এইডসের জয়; ম্যালেরিয়া বা টিবিতে যারা মরছে, তারা চুলোয় যাক, পারভার্সনের যে যে ধারণা কমিউনিটি সাইকিয়াট্রি দিয়েছিলো, সেসব উচ্ছন্নে যাক; এই ফান্ডা, এই ইন্টারভেনশন বছর বছর চলতে থাকুক, বলতে বলতে চাকরিতে ঢুকেই আমি আবিষ্কার করে ফেললুম, যে পেয়ালা ভর্তি চা আমার জন্য নয়, আমার পেয় নয় আমি, সমনন হার্ডকোর ডেভেলপমেন্টের ছাত্র, মেডিক্যাল ইন্টারভেনশনের নয় ছাড়তে হলো পরবর্তী চাকরি থেকে গাড়ী তার ট্র্যাক খুঁজে পেলো; কাঁধের ওপর টোকা পড়তেই, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেই, সেই নাটক, সিনেমা, বিদেশী ভাষা শিখতে যাওয়ার সঙ্গিনী, সেও ডেভেলপমেন্টাল ইন্টারভেনশনের রাস্তায় গাড়ী চালাতে এসেছে; ততদিনে সে, অনেকদিনই, আমার প্রেম, প্রেয়সী, দয়িতা আমাদের গাড়ী এলে দেখলাম, আমারটা শিশু সুরক্ষার, তারটা মহিলা সুরক্ষার উঠে পড়লাম। 

দূরে, তবে খুব দূরে নয়, এমনকি বলা যায়, অনতিদূরেই, সানাই বাজছে

 

সানাই বাজার দিন, মানে, এক্কেবারে এক্সক্লুসিভলি আমাদের জন্য সানাই বাজার দিন, অতঃপর এগিয়ে এলে, তখন ২০০৭, আমাদের ভালোবাসার নদী, দশ বছর একা চলতে চলতে, অবশেষে, তার মোহনা খুঁজে পেলো সেইদিনের বখেড়ার কথা তুলে আর ভার বাড়াতে চাই না; শুধু ভাবুন, আমাদের বিয়ের লগ্ন ছিলোঃ রাত পৌনে বারোটায় সাড়ে সাতটায় পৌঁছে যাওয়ার পর মুজরো করার মতো একটা তক্তোপোশে আমাকে বোস বানচোত করানো হয়েছিলো; আগে যদি আর একটা, বা আদ্ধেক অন্ততঃ, বিয়ের অভিজ্ঞতা থাকতো, তাহলে কিছুটা গঞ্জিকা নিয়ে যাওয়া যেতো বাবাকে সে কথা বলতেই, ভয়ানক সিরিয়াস মুখে, বাবাঃ গোল পাকাসনে বলে চলে গিয়েছিলো বাইরে, আড্ডা মারতে মাঝমধ্যেই জয়িতার মোবাইলে ফোন করে (আমার তখন বি এস এন এলের কানেকশন, জয়িতার? - তার নম্বর আজও সেই একই থেকে গেছে, ধ্রুবক যেন বা; ফোন করে ইরিটেট করা, তা যে পরিমাণে ইরিটেটেড হচ্ছিলাম আমি, তার এক শতাংশও ওকে দিতে পারিনি, পাল্টা, সেদিন বারোটা নাগাদ পূজো, না, সরি, মানে, ইয়ে, ওই বিয়ে বিয়ে, শুরু হলে, এক অলীক সুন্দর এবং শ্রদ্ধেয় মানুষের সস্ত্রীক উপস্থিতিঃ কি মিষ্টি একটা গন্ধ রয়েছে ঘরটা জুড়ে এর মতোই বিয়ের সমস্ত সময় জুড়ে ছিলো এবং আমার রেখে যাওয়া চাপে ব্রাহ্মণ অগ্নিসাক্ষী রেখে সপ্তপদী করাতে ভুলে গিয়েছিলো, এটা বলতে পারি

 

কেমন ছিলো আছে আমাদের দাম্পত্য জীবন? আজ নয়, অনেকদিন আগে থেকে বুঝি, জয়িতা দুটো কারণে জন্মে আমার জীবনেঃ এক. আমার হাত ধরে ডিভিনিটির অঙ্গনে নিয়ে আসা, মার্গ আলাদা, কিন্তু জড়ো হওয়া এক জায়গায়; কল আলাদা, রিজ্‌ আলাদা, কিন্তু সামিট? - একজায়গায়  আর দুই. আমাকে, জীবনের সবটুকু যাপন সমেত সাজিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে, দেবেও জানি না, শেষ যাত্রার আগে, কপালে, চন্দন চর্চা হবে কিনা; তবে যদি হয়, সেটাও - করবে নাহ, খুব বেশী কান্নাকাটি করার মেয়ে সে নয়; তাছাড়া অপরাপর তীর্থযাত্রীর মতো সেও বিশ্বাস করে যে এই প্রচন্ড খাড়াই পথ সবাই বেয়ে উঠতে পারবে না; কিছু মৃত্যু, কিছু হারানো এখানে দিয়েই যেতে হয়, প্রণামী যেমত

তাই বলে কিন্তু এরকম নয় যে আমার পতন অনিবার্য বা জয়িতার; এই সম্ভাবনাও আছে যে, সামিটেও আমাদের যুগ্ম পদঃক্ষেপ, একসাথে সতত প্রস্তাবে, যে রাখার, সে যেমনটা ছকে রেখেছে, সেই মতো হবে এর অন্যথা নেই অন্যথা হয় না

 

...আর ধরণীর পথে পথে ধূলি হয়ে রয়ে গিয়ে পায়ে পায়ে সেই ঠিকানায় পৌঁছনো? - আচ্ছা, আমরা সবাই কি ছোটবেলায় শেখা পাটিগণিত ভুলে গেলাম তবে? পারানির কড়ি, একটা একটা করে গুনে দেবো আর কর্ণধার গ্রহণও করবে গুনে নিতে নিতে একটা কড়িও না বাঘের পেটে, না কুমিরের; আদারওয়াইজ, নৌকাতেই ওঠা যাবে না, যে

 

২০০৭ থেকে শুরু করলে এখন আমরা বোধহয় মধ্যপথ ছুঁই-ছুঁই না হলেও সেটা দ্যাখা যাচ্ছে অনতিদূরে, আর ১৯৯৭ থেকে ধরলে পাঁচ ভাগের দুই ভাগেরও কিছুটা বেশী, কিংবা আরো বেশী, হয়তঃ আর বছর পাঁচেক বেশী; কম তবে নয়, ফেলে তো এলাম পেলাম অনেককিছুই এটা বলতে পারি, কেননা, অনেক চাহিদা? – সে আমাদের নেই দরোজার ভিতরে আমাদের আটপৌরে জীবনের যাপনটা করে যাওয়া বই পড়তে গিয়ে একা হওয়া ছাড়া একসঙ্গে আছি, গান শুনছি, হেসে উঠছি, আর ...কখনো বা হালকা ফুঁপিয়ে ওঠাও... প্রকৃতপক্ষে, আমরা এখন সেই ঠিক জায়গার ভিতর দিয়ে চলেছি, যেখান থেকে এক-এক করে অগ্রজ প্রিয়জনদের ছেড়ে দিতে হয়, চিরকালের মতো দীর্ঘশ্বাস থাকে, থাকে সজল আঁখি অবশ্য ও তো থাকবেই, আবার নিয়মেরও ব্যত্যয় হবেনা কারণ? – ওই যে পুরানো মৃত আর নতুন মৃত আর জায়গা ছাড়ার গল্প; এখানে মৃত'র জায়গায় জীবিত বসিয়ে নিন গল্পের চলন কিন্তু ওই একই

 

আমাদের একসঙ্গে কাটিয়ে দেওয়াটা অনেকটা ওই, ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো, যেটুকু আসে সেটুকু ভালোর মতোই দেখতে দেখতে ষোলো বছর পার করে ফেললো তা বলে রাস্তা কি অ্যাতোই স্মুথ ছিলো যে, কখনোও গাড়ী টাল খায়নি? খেয়েছে, যথেষ্টই খেয়েছে, আর গাড়ীর ভেতর বসে জাম-ঝাঁকানি খেতে খেতে আমরা এই বুঝেছি সার, যে, আমাদের পেট তখনই ভর্তি হবে, যখন বাকী সবাইয়েরও পেট ভর্তি হবে

 

অনেকেই বুঝে গেছে আমরা একটু শ্লথ, কিছুটা অসামাজিক (আমারই কারণে); ভুল ভাবেনি তারা

...তবুও তো সবাই, মোটের ওপর, আমাদের বেঁচে থাকার যুগ্মতাকে ভালো-ই তো বেসেছে

 

আর এরপর আর কি- বা থাকতে পারে, মানুষের, চাইবার?

 

 

 

 

 

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ ইউ টিউব, স্করপিওনস্‌

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

 

No comments: