Wednesday, March 8, 2023

বেড়ালবাড়ী

আমাদের বাড়ীটাকে, এখন, যদি কেউ, স্বচ্ছন্দে, বেড়ালবাড়ী বলে স্টিগমাটাইজ করে, একটু পেলবভাবে বলি (আমার লাইফে জয়িতার আসার পর থেকেই আমার যাপনের সমগ্রতে, জীবনের, বা বলা ভালো, বেঁচে থাকার কথা বলছি, পেলবতার একটা পেলব প্রলেপ পড়েছে, এমনতরটাই দেখতে পাই আমি), তকমা দেয়; তাহলে আমাদের রাগ করার কথা না।

দুই তলায় দুই সেট বেড়াল-বাচ্চাসহ তাদের মা।

 

ছেলেবেলার দিনগুলো এই ফাঁকে চটপট করে বলে দিইঃ একই বেড়াল দুদিন মাছ চুরি করে খেয়ে গিয়েছে, ফলতঃ, দুদিনই ফ্যালা গেছে বাকী মাছসমেত পুরো রান্না। তৃতীয় দিন, বাকীসব এক্সিট বন্ধ করে, রান্নাঘরের দরজা খুলে রেখে, যেখানে রমরম করছে মাছের ঝোলের গন্ধ আর আমি বাইরে, একটু আড়ালে, গলায় বেড় দিয়ে গামছা লাগিয়ে, চশমা পরে টানটান হয়ে আছি। আমার হাতে সাইকেলের একটা সাইড-ষ্ট্যান্ড, যার মাথার দিকটা বেশ চওড়া কিন্তু এবড়োখেবড়ো।

যথাকালে মার্জারের প্রবেশ, রান্নাঘরে, পিছুপিছু আমি। অতঃপর রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে... থাক, বাকীটা।

আবার মাছভাজার মধ্যে ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ (এটা লাগতো এবং লাগে ইনভার্টারের মধ্যে জল দিতে, নীডলটা রয়ে গিয়েছিলো) দিয়ে ফলিডল দিয়ে দেওয়া...

কর্মযোগ আমার জীবনে নেহাত ফ্যালনা নয়।

 

তা এবার আমি দেখছি। দুচোখ ভরে দেখছি। দুই মা-বেড়াল আর তাদের এখনো-চোখ-ফোটেনি শাবকেরা। তিনটে হুলো (একটা একটুদূরের, এটা এখানে এন্ট্রি তথা আস্কারা পাচ্ছে কেন, এটাও ভাববার) ভার্সেস দুই মাদী বেড়ালের মাতৃত্ব। অথচ এদেরই কারোর না কারোর ঔরসে এই শাবকগুলোর জন্ম। শার্দুল যথা মার্জার শাবককেও প্রোটেকশন দেয় মা, তৈরী করে সারভাইভালাক্ষম হতে। ওদের মধ্যে অজাচার বোধ নেই, সে অন্য কথা; আপাততঃ তো শাবকগুলো বেঁচে থাকুক, যুঝতে থাকুক, বেড়ে উঠুক, টিঁকতে শিখুক বাপের সাম্রাজ্যের মধ্যেই কোনো এক ঘুপচিতে। এই তো, একটা ঘুপচির সন্ধান, গতকাল, একটা হুলো বেড়াল পেয়ে গেলে 'পর,  মায়ে - স্বামীতে (সম্ভাব্য) সে কি ধুন্ধুমার লড়াই! প্রকৃতির সৃষ্টির মজাটা এইখানেই যে, যার, যখন, যেমনটা প্রয়োজন... পারলো না হুলোটা; অপরদিকে, আর তার গার্লফ্রেন্ড বা বউ বা ফিঁয়াসেই বা কিন্সক্যাট নেই, তখন সে তিন বেড়াল বাচ্চার মা, সেই মায়ের সঙ্গে ঝেলতে, ঝেলে নিয়ে জিততে। 

 

তারপর থেকেই দেখছি, সেই মা-বেড়ালটা সসন্তান কি উদ্বিগ্ন, ঘেঁটি কামড়ে ধরে শাবকদের নিয়ে ক্রমান্বয়ে এদিক ওদিক; বারংবার পাল্টাচ্ছে থাকবার জায়গা। জয়িতা কিছুদিন ধরেই মা-বেড়ালদুটোকে মাদার ডেয়ারির দুধে অনেকটা করে ভাত মেখে দিয়ে আসছিলো মা বেড়াল দুটোকে; আফটার অল, ল্যাকটেটিং মাদার। এটাও লক্ষ্য করেছি যে, আমি, বিস্ময়করভাবে, আমার শেষ সামর্থ্যানুনগ পেলবতা নিয়ে কিছু বলতে গেলে, সে মা-বেড়াল নির্বিকার, কিন্তু, জয়িতা কিছু বললেই প্রতিটা কথার উত্তরে এক বা একাধিক ম্যাও বলে। ওরাও কি বোঝে কে মায়ের জাত, আর কে বা নয়! 

 

জানি না, বেড়ালের দুটোর শাবকগুলোর সব বাঁচবে কিনা... বা বাঁচলেও কেমনভাবে বাঁঁচবে, বেঁচে বড়ো হয়ে এলাকা রাজ করাকালীন, মা যখন বুড়ী (একটা মাদী বেড়ালের এটাই সম্ভবতঃ শেষ মাতৃত্ব), তখন মাকে আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে, এলাকা ছাড়া করবে কিনা... এসব কিছুই জানি না। 

 

জানি না এটাও যে, বেড়াল প্রসঙ্গে, এই যে কপচে যাচ্ছি, কাল সকালে, ওদেরকে দেখবার জন্য, আমি আদৌ থাকবো কিনা...

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ জয়িতা (মম দয়িতা এবং স্ত্রী)

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

No comments: