বহুদিন বাদে ফের রাজপুর শ্মশান এবং আমার তৎকালীন জীবনের যাপনটাকে মনে পড়লো। আজ। আচমকা। অকারণ। তারপর মনে পড়লো যে এখন ওখানে তো নিওন আর সোডিয়াম ভেপার আর ইলেক্ট্রিক চুল্লী বসে গেছে। অতঃকিম শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কিসব ছিলো না, কি যেন, সভ্যতা, অরণ্যের হাতবদল... কিসব ছিলো কিন্তু একটা। তারপর কিসব চিত্ত জাগা, প্রভাত হওয়া, ব্রতসন্ধানে যাওয়া...
হালকা হালকা মনে পড়ে।
বেশী কি করে আর মনে পড়বে; রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যকর্মাদি করেছেন মধ্যমেধার মানুষ হিসাবে। প্রসঙ্গতঃ সৃজনক্ষেত্রে মধ্যমেধার মানুষরাই আকাশ টপকে চলে যান; যেখানে স্কাই ইজ দ্য লিমিট কথাটা থাকে।
খুব মেধাবী হয়েও তিনজন বাঙালী লেখক আকাশ টপকে গেছেন - শ্রী জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এবং শহীদুল জহির।
আদারওয়াইজ, তীক্ষ্ণ মেধার লেখক হলে কি হয়? শ্রী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হয়।
কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষ হিসাবে খাঁটি ছিলেন; যাওয়ার বেলায় শ্রী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সবকিছু বৈরিতা ভুলে, তাঁর জন্য, পিলার টু পোস্ট দৌড় করে (প্লীজ, অন্ততঃ পঁচিশটা সেকেন্ড পড়া থামান, সম্মান-অর্ঘ্য হিসাবে, তারাশঙ্করের জন্য। এই মানবিকতা আজ কার আছে? - তাঁরা অঙ্গুলিমেয়) সেসময়ের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসার আয়োজন করলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেনঃ আপামর জনসাধারণ যে চিকিৎসা পান, তিনি তাঁর থেকে (হয়তঃ কম পেলেও খুশী) বেশী চিকিৎসা নেবেন না। কারণ তিনি চান না। লেখক হিসাবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তঃ বিরাট নন; কিন্তু মানুষ হিসাবে? মেরুদন্ডের জোর হিসাবে? এটা যাঁর হওয়ার বা থাকার, তিনি এটা সঙ্গে নিয়ে জন্মান (একটা গোটা মিনিট পড়া থামিয়ে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কি সম্মান-অর্ঘ্য দেওয়া যায় না?)।
মধ্যমেধার মানুষরা কি লিখেছেনঃ
ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে।
নাস্তিক সেও পায় বিধাতার বর,
ধার্মিকতার করে না আড়ম্বর।
শ্রদ্ধা করিয়া জ্বালে বুদ্ধির আলো,
শাস্ত্রে মানে না, মানে মানুষের ভালো।
(শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
এক কোণে ছেঁড়া জামা পরে
শুকনো চোখে
দাঁতে দাঁত দিয়ে ছেলেটা আমার
পুঁটুলি পাকিয়ে বসে
বোকা ছেলে আমার
ছিঃ ছিঃ, এই তুই বীরপুরুষ !
শীতের তো সবে শুরু
এখনই কি কাঁপলে আমাদের চলে?
(শ্রী সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তিরিশ-একত্রিশ বছর আগে পড়া, শব্দের এদিক ওদিক হতে পারে, কিন্তু, মূল বক্তব্যটা এটাই ছিলো)।
অন্ন আলো অন্ন জ্যোতি সর্বধর্মসার
অন্ন আদি অন্ন অন্ত অন্নই ওংকার
সে অন্নে যে বিষ দেয় কিংবা তাকে কাড়ে
ধ্বংস করো, ধ্বংস করো, ধ্বংস করো তারে।
(শ্রী বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)
গাঁড় মারি তোর মোটরগাড়ীর
গাঁড় মারি তোর শপিং মলের
বুঝবি সেদিন, আসবে তেড়ে
ন্যাংটো মজুর সাবান কলের
ফাটবে মাইন চতুর্দিকে
গলায় ফিতে নেংটি বেড়াল
তার বরাতেই ছিঁড়বে শিকে।
(শ্রী নবারুণ ভট্টাচার্য)
এঁরা সবাই মধ্যমেধার মানুষ। এবং এঁদের মুখেই প্রান্তজনকথা। তর্ক উঠতে পারে, যে, সেই প্রান্তিক ভূমিপুত্র / ভূমিকন্যা কোথায়? তাদের মুখে শুনতে চাই। হেসে প্রত্যুত্তর করারঃ পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটা কি পদ্মানদীর মাঝিরা পড়েছে?
ঠিক এই জায়গায় তফাৎ বজায় রাখার কথা ওঠে। যে দূরত্ব এই মধ্যমেধার লোকেরা শুরু সে শেষ তক বজায় রেখে গেছেন। একটু যেন গড়ের হিসাবে বলছেন - বলছেন ভাব, তাই না? ঠিক তাই, এর চেয়ে বেশী বলতে গেলে প্যান্টে হেগে ফেলার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বারবার তাঁরা উৎসমুখে ফিরেছেন; বারবার শুরু করেছেন এই আশায়, যে, অন্ততঃ একজন ভূমিপুত্র / ভূমিকন্যা পরের অর্থাৎ অ্যাট দ্য কোর কথাটা বলবেন। এর চেয়ে সন্নিকটের কথা বলবেন।
আমাদের ধক আছে তো? শোনার?
আর একজন প্রখর মেধার লেখকের নাম নিয়েছি; দেখা যাক, তিনি করেছেন?
খোয়াবনামা উপন্যাস আমাদের ধড়মুন্ডু কাঁপিয়ে দিয়ে যায়।
পায়ের নীচে জল প্রতিষ্ঠা করে যে অতিকথন লেখকের অধিকার; তিনি পাঁচশো শব্দের লেখার পরীক্ষায় বসেননি।
কিন্তু চিলেকোঠার সেপাই? বাংলা ভাষার জন্য আমরা হ্যান, আমরা ত্যান, মুক্তিযুদ্ধের জন্য ষড় করা গ্লোরিফিকেশন আর হিন্দুদের এক্সোডাসের জন্য একটা অক্ষরও নেই! যেন ব্যাপারটা হয়ইনি। এটাকে কি বলবো, চালাকি? - নাহ, ধূর্ততা, যেটা শিয়ালের থাকে; শঠতা, যেটা দিয়ে ইতিহাসে পড়া যেকোনো মুসলিম রাজত্ব মার্কড হয়; শ্রূডনেস, যেটা চার্চিলের ছিলো; জাপানের ওপর অ্যাটম বোমা ফেলাটা তাঁর মস্তিষ্কজাত (অ্যালসস পড়ে দেখতে পারেন)।
ব্রিট তো, হবেই। পার্ফেক্ট মাতৃ / কন্যা গমনকারীর জাত হলো ইংরেজরা।
সে তারা হোক গে যাক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কি হলেন? একটু আগে মানবিকতা, সততার জন্য সম্মাননা চেয়েছিলাম; এখন কি চাইবো? হ্যাঁ, শুধু ঘৃণা ছাড়া এই মেধাবী-কিন্তু-চালাক-নয়-ধূর্ত অবমানবের জন্য আর কিছুই পড়ে নেই।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment