ভূতের ভবিষ্যত চলচ্চিত্রে, আমরা, দি দ্যেন সানুনাসিক স্বরে ও সুরে, একটা গান শুনেছিলামঃ বসন্ত এসে গেছে।
শ্রী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়ের লেখায় পেয়েছি তখনকার কলকাতায়, তখন বলতে, স্বাধীনতার ফান্ডাটা অনেকদিন যাবৎ ধারণ করা হলেও, মালটা তখন আসন্ন কি সদ্যাগত; শীতকালে, ভয়ানক ঠান্ডা পড়তো; কলকাতার আউট স্কার্টে, তো, নাকি, একরকম দার্জিলিং জমজমাট; লেখক লিখছেন, তারকেশ্বরে, খড়ের বাতায় (চালে আর কি), কোনো এক কুয়াশায় কিয়দাচ্ছন্ন সকালে এদিক ওদিক, বিস্রস্ত চুনগুঁড়ো নাকি তুষারকুচি... (শুধুমাত্র প্রসঙ্গের জন্য, ভাইডঃ কলকাতা, তুমি কার?)
ইদানীং, বলতে গেলে, একদমই ইদানীং, খুব টেনেটুনে বছর দশেক আগেও পরিস্থিতিটা পাল্টে গেছে; কে যে কখন উল্টোলো... তার আগে কিন্তু, ব্যাপারটা ঠিক এমনতরটা ছিলো না। আমরা স্ট্যাকাটো বুঝতে পারতাম, অন্ততঃ বসন্তকে। শরতের স্লোপ কখন এসে মিশে গেলো হেমন্তের ঢালে, বুঝতে পারলাম না; সর্বশ্রী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যতটা সুব্যক্ত এবং ওতোপ্রোতো; হেমন্তকালটা ঠিক তেমন নয়। পূজো লেট অক্টোবরে হলে, কালীপূজোর সন্ধ্যেতে, তুবড়ি জ্বালানোর সময়, বাবা, মামুর গায়ে চাদর; আমি, একটু দূরে, হাফ সোয়েটার। বড়োমামুর একটা চারকোল ব্ল্যাক রঙের চাদর ছিলো, যেটা দিয়ে, অনুমান করতে পারি যে, সোনারপুর থেকে রাজপুর ঢেকে দেওয়া যায়; তখন দিনগুলোই ছিলো সব জমজমাট; তারপর মোচ্ছব-বাড়ী যেমন করে ফাঁকা হয়, মণিমা (বড়ো মাইমা), দিদি (মাতামহী) একে একে চলে গেলে, বড়োমামুর ওপ্যেন হার্ট সার্জারীর পর, অতো বড়ো বাড়ীটাই বিক্রি হয়ে গেলে, কে আর সেই প্রান্তরাবরক-সম শীতকালে ব্যবহারযোগ্য উষ্ণগাত্রাচ্ছাদনকে হদিশসহ মনে রাখবে? রাখতে পারে?
যাক গে যাক, রাতে শুতে যাওয়ার সময় কাঁথাম্বল (নামটা আমি বড়ো হয়ে দিয়েছিলাম, ছোটবেলাতেই নামকরণ করার মতো অতো কেত, আমি, জীবনে কোনোদিন শিখিনি; এখনো, কি টেলিফোনে, কি ক্লাউড মিটিংয়ে, ইংরেজিতে কথা বলতে গেলে, আমার ঞ্জ-জ্ঞ দশা, অন্ততঃ প্রথম পাঁচটা বাক্য জুড়ে, দেখে বউয়ের গিগ্যেলিং চোখে পড়ে ও অতঃপর আমি, আরো ফাম্বল করতে করতে ধাতস্থ হই; অবিশ্যি ততক্ষণে, যা যা বলার, সবার, এবং যা যা শোনার, ওই, সবার, হয়ে গেছে, পড়ে আছে ম্যাচ শেষের জার্সি বদল, অর্থাৎ ফর্ম্যালি যতটা হয়, একে অপরের হাঁড়ির খবর নেওয়া) যে কখন লেপ (নেপ) হয়ে গেলো, সাম্প্রতিকে অবশ্য ডবল লেয়ারড মিঙ্ক ব্ল্যাঙ্কেট, বুঝতে পারতাম না এবং এখনো যে পারি, তা ঠিক না।
এই তো, এবছর, বালাপোশ যেদিন মনে হলো, আর লাগবে না, তার পরের দিন থেকেই হালকা সিলিং ফ্যান। এই এখন কিন্তু ফুল স্পীডে ঘুরছে।
আমাজনের তিনভাগের একভাগ জঙ্গল পুড়ে সাফা হয়ে গেলো, গুটিকয়েক বন্য-প্রাণী-কাতর মানুষ ছাড়া আর কেউ মাথাই ঘামালো না। এই মাথা, এই প্যারাসাজিট্যাল লোব, সেদিন ঘামতে ঘামতে গলে যাবে, যেদিন, লাঙ ক্যানসারের হার, হম কিসিসে কম নেহী গাইতে গাইতে, প্রতি ঘরে, কম সে কম দুটো করে হবে।
জীবন মৃত্যুরেণসমাপয়েৎ, জানি, কিন্তু, তার আগে, বেঁচে থাকা জুড়ে, প্রতিটা শ্বাস, যে বিষাক্ত বাতাসেই নিতে হবে এমন কথা, এটা শিওর যে, জন্মাবার আগে, যে এগ্রিমেন্টে সই করেছিলাম, তার কোনোও ক্লজে ছিলো না।
আরে বাবা, মানব তথা তামাম জীব-জীবন তো কাল কা যোগী, তাহলে থরহরিকম্পস্বরে, কলিযুগের পর কি হবে? কোরা বলে এক সাইটে, এই বাল্খিল্য প্রশ্নের উত্তরে, ঝরোঝরো ধারা যথা সংস্কৃত শ্লোক (শ্লোকা?) এবং সেসবের ব্যাখ্যার মাঝে, কোনো এক দীপক কুমার, আহা, কি সাম্প্রতিক ছিলো ও থাকবে তাঁর উত্তরঃ ঈশ্বর পৃথিবী নামের কম্পিউটারটাকে রি-ষ্টার্ট করবেন, হার্ড ডিস্ক সমেত পুরো মেমোরি তার ফরম্যাট হলে ‘পর উড়ে যাবে এবং তারপর কি হবে, সেটা আর না বলে, তিনি, প্রশ্নকর্তার মগজে চালান করে দিয়েছিলেন সম্ভাব্য বাকীটুকু, গীতাকে রেফার করে।
কিন্তু আমি বলে যেতে চাই, যে, কোথাও প্রয়োজনবোধে নতুন কন্ফিগ্যারেশন, তারপর এক্কেবারে নতুন ধরনের অপারেটিং সিষ্টেম এবং তদানুযায়ী, সফটওয়্যার সামগ্রী... ঈশ্বর ধরতে গিয়ে, তুই, শালা নশ্বর নিরানব্বই অবধি চলে এসেছিলি, তাই না? তারপর তো তোর খুব ডাঁটও বেড়ে গিয়েছিলো ! যা বানচোত, আবার শূন্য থেকে শুরু কর। তার আগে এখানে একটু জিরিয়ে নে, ততক্ষণে মাছ সৃষ্টি হোক। তোদের ধরাধামে। ফিরে গিয়েই তো সেই আবার পোঁদে স্পিরিট ঢেলে নামবি।
অতএব আমার প্রস্তাবঃ পঠন পাঠ্যক্রমে, আমাদের ছয়টি ঋতুর জায়গায়; গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত - এই চারটে ঋতুতে আবদ্ধ করা থাকুক।
সৎ প্রস্তাবে, মাটিতে পা রেখে চললে জীবনের অনেক ওঠাপড়াই গায়ে লাগে না, নিবেদন এইটুকুই।
পাদটীকাঃ শ্রী সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর উপন্যাসের নামোল্লেখ করার পর, যেটুকু বাক্যাংশ ওই অনুচ্ছেদে আছে, সেই অংশের সমগ্র, স্থান, কাল, পাত্র ব্যতিরেকে, আমার ভাষ্যে লেখা।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment