আশ্চর্য ভাতের গন্ধ
আশ্চর্য ভাতের গন্ধ রাত্রির আকাশে
কারা যেন আজো ভাত রাঁধে
ভাত বাড়ে, ভাত খায়।
আর আমরা সারা রাত জেগে থাকি
আশ্চর্য ভাতের গন্ধে,
প্রার্থনায়, সারা রাত।
(কাব্যগ্রন্থঃ মুখে যদি রক্ত ওঠে)
অন্ন দেবতা
"অন্নমিতি হোবাচ সর্বাণি হবা ইমামি ভূতান্নমেব
প্রতিহরমাণামি জীবন্তি সৈষা দেবতা..."
ছান্দোগ্যোপনিষৎ
অন্ন বাক্য অন্ন প্রাণ অন্নই চেতনা;
অন্ন ধ্বনি অন্ন মন্ত্র অন্ন আরাধনা।
অন্ন চিন্তা অন্ন গান অন্নই কবিতা,
অন্ন অগ্নি বায়ু জল নক্ষত্র সবিতা।
অন্ন আলো অন্ন জ্যোতি সর্বধর্মসার
অন্ন আদি অন্ন অন্ত অন্নই ওংকার।
সে অন্নে যে বিষ দেয় কিংবা তাকে কাড়ে
ধ্বংস করো, ধ্বংস করো, ধ্বংস করো তারে।
আগস্ট, ১৯৬৪
(কাব্যগ্রন্থঃ মুখে যদি রক্ত ওঠে)
শ্রী বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আমার পরম শ্রদ্ধাভাজনেষু।
আচ্ছা, কিছু কি, মানে, একটা অক্ষরও কি পড়ে থাকে, এরপর? যা বলার বা লেখার? তবুও অসীম স্পর্ধা নিয়ে কিছু কথা বলে যাই; - আমার মতে, শ্রী বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন উত্তরসূরী রেখে গিয়েছিলেন আমাদের জন্য। সেই উত্তরসূরীও আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সেই উত্তরসূরীর নাম শ্রী নবারুণ ভট্টাচার্য।
কতো স্মৃতি ভেসে আসে যেন বা অন্য জন্মের ওপার থেকে; আমার মায়ের (মা-ও শুনেছিলো দিদির (দিদিমা) কাছেই), দিদির মুখে শোনা ৪৬ এর মন্বন্তর; - মাগো, একটু ফ্যান দাও। তারপর বেরিবেরি রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া। বেরিবেরি কি বেশী ফ্যান খেলে হয়? আমি তো ছোটবেলায় পড়েছিলাম ভিটামিন বি’র কোনো একটার অভাবে হয়। জানি না। জানতে চাইও না। কি হবে জেনে? শেষমেশ তাঁরই শরণ নিতে হয়ঃ মাগো, আর কারোর যেন বেরিবেরি না হয়, আর কাউকে যেন ফ্যান খেয়ে থাকতে না হয়; - “...ইচ্ছে করে সবার দুহাত ভরে উঠুক / সবার রান্নাঘরে ভাতের গন্ধ ছুটুক / ফুলের চেয়ে ভাতের গন্ধ ইচ্ছে করে / আমার দেশে সবার দেশে সবার ঘরে / ফুলগুলোকে তাই বলে কি বাদ দিতে চাই / শস্য এবং ফুলের জন্য গান গেয়ে যাই...”, তারপর ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭১ সালেই ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টে প্রথম সেক্যুলার দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ। সেক্যুলার; অথচ দলে দলে হিন্দুর বাংলাদেশ ছেড়ে আসা আর তাঁদের সম্পত্তি রাজাকারদের কব্জায় চলে যাওয়া। সেই সময়ই অ্যালেন গীনসবার্গের সেই বিখ্যাত কবিতা অথবা জ্যয়ান বায়েজের সেই গান। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, এক অত্যন্ত মেধাবী লেখক, চিলেকোঠার সেপাই-তে সব বললেন, সবকিছুর গ্লোরিফাই করলেন কিন্তু হিন্দুদের উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসা, সেই এক্সোডাসটা, লিখতে ভুলে গেলেন। ভুলে গেলেন মানে, সুবিধাজনকভাবে ভুলে গেলেন, মেধাবী কিনা; যেমন কিনা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একজন কম মেধাবী লেখক, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আমার বন্ধু রাসেল, এক কিশোর উপন্যাসে এই প্রসঙ্গ তুলতে ভোলেন নি। স্বাভাবিক, কম মেধাবী লেখক তো, বোকামি করে ফেলেন। আর এদিকে, আমার মনে, সেই সুদূর শৈশবে শোনা কথাগুলো, ফ্রেমহীন, মাধ্যাকর্ষণহীন ফটোর মতো উড়ে বেড়াতে থাকে।
এরপর? এরও পর? এর আর পর নেই, যেমন নেই বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বর্তমান ঠিকানা।
ভাবতে পাপ লাগে না যে বইমেলায় ঘুরে-ঘুরে নিজের বই বিক্রিতেও সংকোচ ছিল না তাঁর। আমরা তাঁকে যেচে, কিনে পড়িনি !
এই মানুষটার কাছে যে আমার অন্নঋণ; পিতৃ বা মাতৃঋণ যথা। দুই/পাঁচ/দশটাকার কয়েন ঠেকিয়ে মূল্য ধরে দেওয়ার মতোই যা হাস্যকর। এইসব ঋণ জন্ম-জন্মান্তরেও শোধ হওয়ার নয়।
আর তাঁর উত্তরসূরীর কথা পরের পোস্টে।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment