এক উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারীর সঙ্গে, দূরভাষে, পরিচয় হলো আজ। অবশ্য তাঁকে কর্মচারী বলা যায় কিনা, সেটাও ভাববার, অ্যাতোটাই উচ্চপদে আসীন তিনি। উচ্চপদস্থ কর্তা বললেই ভালো যায়, যদিও, কর্তা বললেই আমার মনে পড়ে যায়, রামপ্রসাদ সেনের সেই গানটার শেষ ভার্সটা; - দিন দুই-তিনের জন্য ভবে, কত্তা বলে সবাই মানে। সে কত্তারে দেবে ফেলে, কালাকালের কত্তা এলে... এনিওয়ে, নামটা না বলে, সত্যিই তো, নামে কি-ই বা আসে যায়; এটা বলা যায় যে, পদবী তাঁর ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ আর শর্মিলা ছাড়া ঠাকুর পদবীটা যে আরো থাকতে পারে, জানলাম। অবশ্য আর দুই জায়গায় ঠাকুরের ছড়াছড়ি যায়, এক. স্বর্গে, দুই. কুমোরটুলিতে। সে যাক, যেটা বলছিলাম, আমার কিছু প্রশ্ন ছিলো তাঁকে করার, যে উত্তরগুলোর ভিত্তিতে, আমি একটা পোর্টাল আপডেট করবো এমনভাবে, যাকে বলা যায়, ফ্লোট করানো, অর্থাৎ সাপ মরুক, বা, না মরুক, অ্যাট লিষ্ট নির্বিষ হবে, আর লাঠি? - লাঠিটা আদৌ ইউজ করা হয়েছিলো কিনা, সেটা নিয়েই লোকে ভাবতে থাকবে; এলজিবিটিকিউ-দের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, হিজড়ের সঙ্গে সেক্স করার মতো।
তো, অর্জুনের তূণ থেকে শর বার করে, না, না, ব্রহ্মাস্ত্র নয়, সাধারণ তীর বার করে নিক্ষেপ যথা একটা একটা করে প্রশ্ন করছি, আর তিনি শিল্ড দিয়ে যাচ্ছেন, "আমি তো নতূন এসেছি, অফিস ডকুমেন্টস দেখে বলবো।" ততক্ষণে তাঁর ষ্টেকটা বুঝে নিয়ে, আমি স্যার থেকে সাহেবে চলে এসেছি; সরকারী অফিস মানেই তো তাই, মানুষের জন্য কাজ, কিন্তু সেই মানুষের শিঙে ফুঁকে দিয়ে লোকাস ষ্ট্যান্ডাই বদলানোর, মোর স্পেসিফিক্যালি, ডাউনগ্রেড করার খেলা; মুখে এসে গিয়েছিলো, অ্যাদ্দিন কোথায় গাঁড়টা মারাচ্ছিলেন, ম'হায়?!
চেপে গেলাম, আহা, সেসব কি দিন ছিলো, যখন ল্যান্ডলাইন থেকে ফোন টোন হতো; এখন তো মিসবিহেভের কম্পলেইন পেলে, মোবাইল নাম্বার দেখেই আমায় স্পট করতে, আমার কর্তার এক সেকেন্ডের খেল ও অতঃপর জিপিএল, মানে কিনা গাঁড় পে লাথ।
ফোনটা রাখার পর রিয়েলাইজ করলাম যে, আমি পোর্টালের একটা রো-ও ভরতে পারবো না এই সতীনন্দনের দেওয়া ব্রিফ অ্যান্ড টু দ্য পয়েন্ট উত্তর থেকে; - "আমি তো নতূন এসেছি, অফিস ডকুমেন্টস দেখে বলবো।"
সতীনন্দন শব্দটা মনে আসতেই মনে হলো, আচ্ছা, মালটার কি কোটায় চাকরী, কোটায় প্রোমোশন? ঠাকুর কি কোটার পদবী হয়? আদৌ? মগজের একদিক বলছিলো নির্ঘাত কোটা কেস, আর মগজের অন্যদিকটা, যে কিনা চিরকালই কন্ট্রোলের বাইরে, কু গাইছিলো; গাইছিলো এটা বলতে বলতেই যে, রবীন্দ্রনাথও কি তাহলে কোটায় বিশ্বকবির তকমাটা পেয়েছিলেন বা সুইডেনও কি ভারতবর্ষের কোটা সিস্টেমের সঙ্গে কমপ্যাটিবিলিটি রেখে আসছে, যাতে করে বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ নোবেলটাও কোটায় পেয়েছিলেন !
হরিষে বিষাদের উদাহরণ এর চেয়ে করুণ আর হয় কি? - ঠাকুর (মানে, ঈশ্বর) জানেন।
এই চোখ, যা কিনা একমাত্র ঈশ্বরের মতো, যাঁর প্রতিটা নন-ফিকশনাল (ফিকশনাল লেখাগুলো একটু বিজ্যাঁ টাইপ, বিশেষ করে, গল্পগুলো) লেখা থেকে নতূন করে আর একবার ভারতবর্ষ তৈরী করা যায় এবং যেটা আজকের ভারতবর্ষের মতো, কি বলি, লাউজি নয়; ভাবা যায়, একটা মানুষের লেখা অন্ততঃ পঞ্চাশটা গান, যতদিন সভ্যতা থাকবে, ততদিন অক্ষয়, ভাস্বর হয়ে থাকবে ! সেই তাঁকে নিয়ে একটু খিত্তিব্যি (দোখনো শব্দ, মূলতঃ ডিস্টর্ট করা অর্থে ব্যবহৃত হয়) করার অধিকার সব বাঙালীরই আছে, কেননা, শুধু বাঙালী নয়, গোটা দেশের দেশবোধের ফাদার ফিগার তিনি। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী নন; - যদিও ওঁর নন-ভায়োলেন্ট নীতিটা বড়ো প্রেশ্যাস। তবে বিতর্কিত বা নিন্দিত বন্দুককে থামাতে নন্দিত বন্দুকই যে লাগে, সেটা ২০০০ সালের পর থেকেই আমরা বুঝেছি, বুঝেছি কি ম্যালিগন্যান্ট, কি বিনাইন, টিউমার যন্ত্রণা দিলে শল্য চিকিৎসারই প্রয়োজন, সেখানেও রক্ত ঝরে, কিন্তু তাতে করে ডাক্তার সন্ত্রাসবাদী হয়ে যান না, বরং স্বাস্থ্যরক্ষক বলা হয় তাঁকে; অতএব বিতর্কিত বা নিন্দিত বন্দুককে থামিয়েই চলে যেতে হবে গান্ধীজির অহিংস নীতিতে।
… আর তারপর রবীন্দ্রনাথ, আর তাঁর নন-ফিকশনাল লেখাগুলো।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ফটো কার্টসিঃ গুগুল ইমেজেস
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment