Sunday, May 29, 2022

জাতিপুঞ্জ, আমেরিকা এবং একটা ভালোবাসার গান

 

সে তখন অর্কুটকাল; ফেসবুক এলেও তার দুধেদাঁত তখনো বহালপড়েনিএকটাওতো সেসময় অর্কুটের একটা গ্রুপে আমি, একদিন, একটা গান পোস্ট করেছিলাম, কেনি রজার্সের 'রুবি, ডোন্ট টেক ইওর লাভ টু টাউন'কেতা মেরে, না, ঠিক কেতা মেরে নয়, এটা তো আমার স্নায়ুরই কথা, তখনো এবং এখনো, যে, একটা ভালোবাসার গান, শাল্লা, কি লিখেছে, কি গেয়েছে !

সেই গানে একটা চরণ ছিলো এরকমঃ 


'ইট ওয়াজ'ন্ট মি দ্যাট স্টার্টেড দ্যাট ওল্ড ক্রেজি এশিয়ান ওয়ার

বাট ওয়াজ প্রাউড টু গো অ্যান্ড ডু মাই প্যাট্রিয়োটিক চ্যোর'

 

এই ভার্সে আমার অনেকদিন ধরেই মনে হয়েছে আমেরিকা - ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথাঅনেকদিন ধরে মনে হওয়ার পর, একদিন বেলার দিকে ঘুম থেকে উঠে, হ্যাঁ, এটা আমার স্পষ্ট মনে আছে যে, ঘুম ভেঙে উঠে, আমার মনে হলো, এশিয়ান ওয়ার কথাটা কেন বলা হয়েছে; আমেরিকা তো এশিয়ার দেশ নয়, তবে? এই 'তবে'টা আমার মগজে পায়েতে বেলকাঁটা যথা বিঁধে গেলোএবং গেলো তো গেলোই, উত্তর তো খুঁজে পেলামই না, উল্টে 'ওল্ড' শব্দটাও, বোল্ডারের ওপর যেন জোয়ারের ঢেউ, ঝাঁপিয়ে পড়া শুরু করলোগানটা তো সেই যাকে বলে, ১৯৭২, তখনো পারফর্মড হয়েছে, ভিয়েতনাম যুদ্ধ তবে -ল্-ড্ হয় কি করে?

উত্তর না পেতে পেতে, বিরক্ত আমি, গানটা শোনাই ছেড়ে দিলামছেড়ে দিয়ে লিংকিং পার্কের মধ্যে লিরিক খুঁজছি অর্থাৎ অকাজের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে মানুষ যা যা করে, করতে পারে, সেইসব করে বেড়াচ্ছি; একদিন টের পেলাম কমলির কাছ থেকে যতই দৌড়ে পালাই না কেন, কমলি আমায় ছাড়েনিঅর্থাৎ কিনা ঘুরেফিরে, মুখ পাল্টে, নলেনগুড়ের জলভরার মধ্যে ফুচকার টক জল খেয়ে, আবার, 'রুবি, ডোন্ট টেক ইওর লাভ টু টাউন'গানটা চলছে, এমনসময় হঠাৎ চোখ গেলো কম্পিউটারের নীচের দিকে, দেখলাম, গীতিকার এবং কম্পোজার হিসেবে মেল টিলিস বলে একজনের নাম মাঝেমাঝেই সেখানে ঘাই মেরে যাচ্ছেততোদিনে অর্কুট উঠে গেছে, দেশ-দুনিয়া-মানুষ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফেসবুককিন্তু কান্ট্রি সং, সেখানে লিরিসিস্ট ! আর কে- বা এই মেল টিলিস; ইন্টারনেটে বহু কিছু ধামসানোর পর জানতে পারলাম, গানের বিষয় আদৌ আমেরিকা - ভিয়েতনাম যুদ্ধ নয়; ১৯৫০ থেকে ১৯৫২ অবধি চলা উত্তর আর দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধ, যে যুদ্ধে কম্যুনিস্ট উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন করেছিলো কম্যুনিস্ট চীন এবং কম্যুনিজমের আতুঁড়ঘর সোভিয়েত ইউনিয়নআমি বুঝি না কম্যুনিস্টরা কি মাসতুতো ভাই, তাদের মায়ের কি বড়ো গলা? যদি বা হয়, তাহলে সেই বৃহৎ গলকম্বলও পূর্ব ইওরোপের দেশগুলোকে, মায় পূর্ব জার্মানীকেও ধরে রাখতে পারলো না ! যাই হোক, হচ্ছিলো যুদ্ধের গা গরম করা কথাবার্তা, তার মধ্যে কোথা থেকে ধাঁ করে কমিউনিজম চলে এলো; দক্ষিণ কোরিয়া ক্যাপিটালিস্ট দেশ হলেও তাদের জন্য কেউ এগিয়ে এলো না, এমনকি তারা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্য-সামন্তও জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছিলো

 

অবস্থায় কার প্রাণ আগে কাঁদে? ভেবে বলার জন্য কোনো পুরস্কার তো নেইই, বরং ভাববার জন্য প্যাঁক আছে; - যে, কান্নাটা ইউ এন-এরজাতিসংঘ বা রাষ্ট্রপুঞ্জ বলে কথা, তো, তার গায়ে কাঁটা দেবে না, তার প্রাণ ককিয়ে উঠবে না !

ব্যস, এবার দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মরক্ষা, পাইক-বরকন্দাজ কি ঘন্টার আত্মরক্ষা করবে, সেটা নিয়ে ঈশ্বর এখনো দিনে নিয়ম করে দু ঘন্টা ভাবেন, তা ভাবুন, কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার আত্মরক্ষা, যা কিনা আদতকথায় "আক্রমণণণ" ছাড়া আর কিছুই নয় (অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স, অতএব হে পার্থসারথী, বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ), নিশ্চিত হলোপৃথিবী দুশ্চিন্তা মুক্ত হলোকেউই কিন্তু ভেবে দেখলো না ইউ এন-এর ওই সৈন্যসামন্তগুলো কোথাকার? মঙ্গল গ্রহের, নাকি, সুদূর ওগো বিপুল(লো) সুদূর ইউরেনাস থেকে ব্যাকুল(লো) বাঁশরী বাজাতে বাজাতে এসেছেখেয়াল করলে দেখতে পেতো ওই ব্যাপক সংখ্যার ভাড়াটে বাহিনীর আশি শতাংশেরও বেশী আমেরিকার নাগরিক, মেল টিলিস যেমন, কেনি রজার্স যেমন, ট্রাম্প যেমন এবং অধুনা, বাইডেন যেমনতা কম্যুনিস্ট দেশগুলো যদি মাসতুতো ভাই হয় (সে কি ভ্রাতৃত্ব রে ভাই, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, আমাদের বউরা চীনের খানকী), ক্যাপিটালিস্টরা তাহলে পিসতুতো ভাই হবেবাটখারা সমানসমান তুলাদণ্ডের কাঁটা 

 

কিন্তু ব্যাপারটা আর যাই হোক, ছোটোদের অ্যালজেব্রা নয়, ইউ এনের ডাকে (মানে আহ্বানে আর কি) আমেরিকা সৈন্য পাঠিয়েছিলোএই সেই ইউ এন, যাদের নব্বই ভাগ কনভেনশনে আমেরিকা দস্তখত দেয় না, যেটা দেয় সেটা হলো অজুহাতদস্তখত না করারপার্টি কান্ট্রি না হওয়ার 

 

২০১৫ সালের নভেম্বর মাসেও আমেরিকা ইউ এন সি আর সি তে পার্টি-কান্ট্রি ছিলো না, জাতিপুঞ্জ কর্তৃক শিশুর অধিকার সনদের যে খসড়া চূড়ান্ত হয়েছিলো, ১৯৮৯ সালেএমন উদাহরণ একটা নয়, বরং রাষ্ট্রসংঘের দাবী, সনদে আমেরিকা সবার প্রথমে পার্টি কান্ট্রি হয়েছে, এমন কেস ডান হাতের কড় গোনার আগেই শেষ হয়ে যাবে

 

আসলে অস্ত্র তৈরী করলে তাতে শান দেওয়া আবশ্যক, তাতে তিনটে জিনিস হয়, বাকী দেশগুলোর মধ্যে মাসল পাওয়ারের খওফ ঢুকিয়ে দেওয়া, অস্ত্র বিক্রি-বাটার বাজার ক্রিয়েট করা আর কোন অস্ত্রের কোন জায়গায় ফাইন টিউন করে সেটাকে আরো অমোঘ করে তোলা যায় - সেটা বুঝে নেওয়া, আর সবকিছু পার্ফেক্ট থাকলে অন্ততঃ জং ধরতে না দেওয়া

 

রাশিয়ার কি ইউক্রেনের ওপর অতোটা রাগ আছে যে, অস্ত্রহীন মানুষগুলোকে পিছমোড়া করে বেঁধে বুলেট বিঁধিয়ে দিতে হবে? নাহ, এগুলো রুটিন অ্যাটাকের অঙ্গ, যাতে ইনভেসনটা একটা মাত্রা পায়যেমন, যুদ্ধ জেতার পর হেরে যাওয়া দেশের কন্যাশিশু, মহিলা, বৃদ্ধাদের ক্রমান্বয়ে ধর্ষণ করতে করতে এটা বুঝিয়ে দেওয়া যে, দ্যাখ, শুয়োরের বাচ্চারা দ্যাখ, তোদের মাজা ভেঙে অ্যাতোটাই টুকরো করা হয়েছে যে, তোরা, তোদের, কি যেন বলে,ওহ, হ্যাঁ, মা-বোন-মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে প্যান্টে হেগে ফেলেছিস ! ইউক্রেনের দুটো বন্দর আর মিনারেলগুলো না পেলে রাশিয়ার যে আর চলছে নাশীতকালে ব্যবসা-পত্তর লাটে উঠে যাওয়ার উপক্রম 

 

ভালো কথা, কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টো যেন কোন দেশ থেকে বেরিয়েছিলো?

 

কোন কথা থেকে কোন কথা এলো ! এটা মোটেও অ্যাসোসিয়েশন অফ থটস নয়, এটা সংলাপ বলতে গিয়ে প্রলাপ বকাকোথায় নস্ট্যালজিক একটা ভালোবাসার গান আর কোথায় ঘাম, রক্ত, বুলেট !

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

 

গানটার লিরিক রাখা রইলো, ইচ্ছুক যাঁরা, পড়ে নেবেন

 

You've painted up your lips

Rolled and curled your tinted hair

Ruby, are you contemplating

Going out somewhere?

The shadow on the wall

Tells me the sun is going down

Oh, Ruby

Don't take your love to town

 

It wasn't me

That started that old crazy Asian war

But I was proud to go

And do my patriotic chore

And yes, it's true that

I'm not the man I used to be

Oh, Ruby, I still need some company

 

It's hard to love a man

Whose legs are bent and paralyzed

And the wants and the needs of a woman your age

Ruby, I realized

But it won't be long

I've heard them say until I'm not around

Oh, Ruby

Don't take your love to town

 

She's leaving now 'cause

I just heard the slamming of the door

The way I know I've heard it slam 100 times before

And if I could move I'd get my gun

And put her in the ground

Oh, Ruby

Don't take your love to town

 

Oh, Ruby, for God's sake, turn around

 

আর এই রইলো ইউটিউব লিংক, ইচ্ছুক যাঁরা, শুনে নেবেন।

 

 
 
 
 
 
 
 
 
 ছবি সৌজন্যঃ Baarìa (Italy, 2009) ছায়াছবির একটি মৌহর্তিক খন্ডদৃশ্য ।


অনিন্দ্য ঘোষ ©


(ফেসবুকের পুরানো লেখা থেকে)
 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

 

No comments: