দস্তয়েভস্কির সব চরিত্রেরই একটা অন্তর্লীন কষ্ট ছিলো। ফল্গু নদীর মতো সেই সাফারিংটাও নোট্স ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ডে চিহ্নিত হয়েছে হাজারখানেক বোধহয়, সম্ভবতঃ, হয়তঃ - এইসব দিয়ে। তিন নম্বর অনুচ্ছেদটাই মনে করা যাক; - শুধুই আনসার্টেনটির ছড়াছড়ি।
কিন্তু মারসোর কি কষ্ট ছিলো? আসলে বেঁচে থাকতে থাকতে জীবনকে খুঁজে ফিরছিলো সে। আর বারংবার ব্যর্থ হচ্ছিলো সেই অনুসন্ধান। হওয়ারই কথা, কারণ বেঁচে থাকা, নিঃশ্বাস নেওয়া এবং প্রশ্বাস ছাড়া, তাকে জীবন থেকেই বার করে অব্যক্ত শূন্যতায় ফেলে দিয়ে আগল তুলে দিয়েছে; কি করে মারসো খুঁজে পাবে জীবনকে? এমতাবস্থায় ! - জীবন তো বন্ধ দরজার ওপারে, নিশ্চিত প্রতিবন্ধকতায়।
আর দ্য ট্রায়ালের লোকটার পুরো নামটাই জানা হলো না। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কোনো জ্বালাময়ী বক্তৃতা তো দূর অস্ত, ফাম্বল করতে করতে মুখ থুবড়ে পড়লো।
K কিন্তু হেরে জিতলো কিছুই না বলে, যেমন জিতলো মারসো, বিচারকের প্রশ্নের উত্তরে নিজস্ব অসংলগ্নতা দিয়ে।
এলোমেলো করে দেওয়া প্লেগের মরা ইঁদুরগুলোর মতোই, মহামারী সেজে আমাদের ওপর মৃত্যু ঝরাতে, এসেছে সাম্রাজ্যবাদ। বারবার। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রূপ ধরে। কিন্তু এবারের রূপটাই মোক্ষম, এখন আমরা এক অদ্ভুত হেডোনিস্টিক কনজিউমারিজমের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, যেন টানেল, ওপারে নিহিলিস্টিক আবহাওয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। হাতে তার স্টপওয়াচ। টানেলের ওপার থেকে গান ভেসে আসছে, শুনতে পাচ্ছিঃ ইহাঁ ভোগোঁ কি আবহাওয়াঁ মেঁ হোতা হ্যায় কোই না কোই হাদসা, হাদসা, উপ্ ভোগ কা হাদসা...
....টানেল পেরিয়ে ওপারে ঠেলে উঠলে, এক আশ্চর্য গিলোটিনে এবার আমাদের ঘাড় পাতার পালা। যন্ত্রণাহীনভাবে আমাদের মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যাবে; - যন্ত্রণাহীন, কেননা যন্ত্রণাবোধটাই আমাদের অভাবের খাতায় উঠে গেছে। আমাদের কিন্তু অভাববোধের সাফারিং আছে। হেডোনিস্টিক সাফারিং। এবং তার জন্য অশ্রুপাতও আছে। কিন্তু গিলোটিনটাকে আমরা দেখেও দেখছি না, চোখের জল ফেলা তো দূর কি বাত, যেন অন্য কারোর বধার্থে রাখা আছে সেটা।
দেখার এবার একটাই; - এবার মারসো কিংবা K কিংবা জিয়েরকভ– এদের মধ্যে কে, কখন উঠে আসে পরশুরাম হয়ে, বিচারের নিজস্ব খাঁড়া হাতে নিয়ে, তার হাতে জীবিত অস্ত্র, মালিকের রক্তের স্বাদ পেয়ে যে আর ঘুমিয়ে নেই, আর সে চলচ্ছক্তিহীনও নয়। দক্ষিণ হাতের কুঠার, এবার, শুধুই স্বাস্থ্য রক্ষার্থে, বাম হাত কাটে। আর কোন হাদসা, কিভাবে হয়…
অনিন্দ্য ঘোষ ©
(ফেসবুকের পুরানো লেখা থেকে)
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেট (গুগুল ইমেজ)
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।