সে তখন মোবাইলের যুগ নয়, জানেন, তখন ছিলো ল্যান্ড লাইন। আর আমি তো সেই কচিবেলা থেকেই এঁচোড়ে পাকা, রাত জেগে বই পড়ি। তো, বই পড়ার শেষে চোখে ঘুম এলে, তখনো ঘুম নামতো, বিনা ওষুধে, আর টানা আট - ন' ঘন্টা ঘুমোতেও পারতাম; যাক গে, যেটা বলছিলাম, ঘুমোতে যাওয়ার আগে, ইচ্ছে করেই ফোনটা তুলতাম ক্র্যাডল থেকে। ডায়ালটোনের মধ্যে অদ্ভুত এক ইশারা; - কে যেন আমায় বাইরে যেতে বলছে ! এক অব্যাখ্যাত ডায়ালটোন আমায় মনে করিয়ে দিতো, রাতের ফাঁকা রাস্তা, তার খানা-খন্দে একটু আগে হয়ে যাওয়া ঝেঁপে আসা বৃষ্টির জল জমে আছে, সেখানে পড়ে পিছলে যাচ্ছে সোডিয়াম ভেপারের হলুদ। রাস্তাটার একাকীত্ব আমায় ক্রমাগত ইশারা দিয়ে যেতো।
কিংবা আবহাওয়া শুকনো থাকলে একটা বিল্ডিং কমপ্লেক্স। শুধু আলো। নিওন। তাদেরই কিছু ছিটে এসে পড়েছে বাচ্চাদের খেলার মাঠে। মাঠটাও ডাকতো, সবুজ ঘাসে শুয়ে বাকী রাতটা কাটিয়ে দেওয়ার জন্য। মাঠটা এমনভাবে ডাকতো, যেন সেখানে, আর কিছু না থাকুক, শান্তি আছে।
কিংবা সোজা চলে যাওয়া রেললাইন, নিথর অন্ধকার অপার নেমেছে চতুর্পার্শ্ব জুড়ে, পাশে ইতঃস্তত ঝুপড়ির আলো আর ধকধক করতে থাকা রেলপথের সবুজ সিগনাল। কোথায় যেতে হবে, আমি জানি না, কিন্তু ওই ডায়ালটোন ইঙ্গিতে বোঝাতো বেধড়ক বেরিয়ে যাওয়ার কথা।
মোটের ওপর ওই ডায়ালটোন আমাকে থিতু হতে দিতো না, হ্যাঁচকাটানে ঘর থেকে বার করে দিতো। অতরাতে আর কোথায় যাবো, বাড়ীটাকে বাইরে থেকে তালা মেরে চলে যেতাম শ্মশানে, সেখানে তখনো ইলেক্ট্রিক ক্রিমেট্যর বসে নি; ব্ল্যাকে বাংলার বোতল খুলে একটা করে ঢোক, আর মড়া পোড়ার গন্ধ।
আর, যখন কিনা ঘরে, ছিলো ভয়, মনে হতো, এক্ষুনি ডায়ালটোন থেকে উঠে আসবে রিংটোন, আর আমি শুনবো কোনো কাছের মানুষের চলে যাওয়ার খবর।
সব ভালোবাসাই সমান সমাদরণীয়, কিন্তু সব ভালোবাসা পরিণতি পায় না, যেমন ওই ডায়ালটোন, রাতে হলে, সবসময়ই হাতছানি দিয়েছে, আমি জানি; শুধু আমায় নয়, অনেককেই, প্রতি রাতে; কেউ বেরোতে পেরেছিলো, কেউ পারে নি।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেট (গুগল ইমেজেস)
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment