সত্যি খুবই সন্দেহজনকভাবে সত্যি। - ত্রুফো
সত্যি নিয়ত পাল্টে যায়। - গোদার
- He is a Nationalist in Delhi;
- A Communist in Jammu;
- And Communalist in Kashmir;
- That's the definition of a Secularist.
সিনেমাটার অনেককিছুই গোলমেলে; উত্তর মেলে না; - সে হরি সিং- এর “আমাকে বাঁচান” প্যাক্ট থেকে ইউ এন য়ের নাক গলানোর চেষ্টা থেকে জনাব নেহেরুকে দেওয়া সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অমর পরামর্শ যে, তুমি প্যাক্ট সাইন করেছো, ব্যাস, ওইটাই তোমার লোকাস ষ্ট্যান্ডাই, কাহিনী খতম। এবার তোমাকে ভগবান ডাকুক বা ইউ এন, তোমার আর কোথাও তো যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো প্লেবিসাইটেরও আর কোনো প্রয়োজন নেই থেকে সিমলা প্যাক্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলোর কোনোটাই পূর্ব-কথা হিসেবে বলা নেই অথচ এগুলোর সবই কাশ্মীর ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিত। এগুলো না বুঝলে (আমিও সবটা জানি না, অতো জ্ঞানগম্যি নেই আমার) সিনেমাটাকে ভুল বোঝা অসম্ভব নয়। হ্যাঁ, মানুষের রক্ত, মানুষের প্রাণ, মানুষের বেঁচে থাকা, মানুষের ভালোবাসা - এগুলো, এগুলোর কোনো পরিপ্রেক্ষিত হয় না, এটা সত্যি; কিন্তু কেন-র উত্তর খুঁজতে গেলে পরিপ্রেক্ষিতগুলো ইন্ডেস্পেন্সেবল হয়ে ওঠে। সিনেমাটা আমার মধ্যে জিনিসগুলো নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে জাগিয়ে দিয়ে গ্যালো। এটা আমার একটা ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বলা যায়।
জনাব নেহেরুকে দেওয়া সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের পরামর্শটা এভাবেই বলা হয়েছিলো কিনা জানা নেই, কিন্তু এটা জানা, যে, হিন্দু পণ্ডিতদের এক্সোডাসের বৃত্তান্ত এবং তার আগে, জেনোসাইড। যেমন এটা অজানা যে, কাশ্মীরে শুধু হিন্দু–মুসলমান দ্বন্দ্বই নয়, আর একটা চোরা দ্বন্দ্ব আছে, সুন্নী মুসলমানদের করা শিয়া মুসলমানদের দমন-পীড়ন। সুন্নী মুসলমানদের হাতেই সম্পদ এবং শিক্ষা, সুতরাং কে অপ্রেসড হবে, সেটা বুঝতে, আর যাই হোক, পড়াশোনা লাগে না, কমনসেন্স-ই যথেষ্ট।
ইসলামিক রিপাবলিক অফ কাশ্মীর নামের এক কল্পিত রাষ্ট্রের দাবীর একজন লিডিং লিডার (নিবেদিতা মেনন) কিভাবে হিন্দু হয় (কনভার্টেড নয় তো?) যেখানে নীচের ডায়ালগগুলো এরকম –
- The council President will be paying us a visit today.
- What will you say if he asks you what you want in this village?
- Masjid !
- What will you say?
- Masjid !
- Say it.
- What do we want?
- Masjid !
নিবেদিতা মেননের সঙ্গে দ্যাখা করা আর এই নেতৃত্বদানের কারণটা জানার ইচ্ছে রইলো। আসলে এখানেই মানুষের দোগলাবাজী, এখানেই তারা, যাদের ট্যোয়াট ফেস কোল্ড ব্লাডেড বাস্টার্ড বলা যায়। যেমনভাবে প্লুর্যালিষ্ট ষ্টেট থেকে সেক্যুলার ষ্টেট জন্মায় আর কি ! গতকাল ফেসবুকের এক হিন্দু ডিভাইন গ্রুপের একটা মন্তব্যের বিরোধিতা করায়, আমায় এক হিন্দু মহিলা শুধোলেনঃ ‘তুমি কি হিন্দু?’। সেক্যুলার কান্ট্রি ভাই, মেনে নিতেই হবে, কিন্তু পাশের রাষ্ট্র বাংলাদেশ, পিপল’স রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ, যেটা কিনা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম সেক্যুলার কান্ট্রি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো, সেখানেই, ১৯৮৮ সালে ইসলামকে জাতীয় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। বড়ো ধোঁয়াশা, তাই না? আরো ধোঁয়াশা যেটা, সেটা হলো, ব্রিটিশদের হাত ফস্কে পড়া ও লুফে নেওয়া স্বাধীনতার সময়ে দেশ দুভাগে ভাগ হলো ধর্মের ভিত্তিতে এবং অনেক পরে তিনভাগ হলো; যার কারণ ভাষা। যাইহোক, প্রথমবার দুভাগ হয়েছিলো ধর্মের ভিত্তিতে, যার একটা ভাগ ইসলামের ফলোয়ারদের জন্য এবং অন্যটা সেক্যুলার, না, ভুল হচ্ছে, প্লুর্যালিষ্ট ! যাঁরা ভারতবর্ষের সেক্যুলারিজমকে স্যিউডো সেক্যুলারিজম বলেন, তাঁরা, আহা, বড়ো ঠিক কথা বলেন। দেশভাগের পর যখন নাগরিকদের মিতিমায়েশ-গিরি, (এই শব্দটার মানে আমি কিছুতেই বলবো না, যাঁদের একান্ত-ই না জানলে চলে না, তাঁদের, ফিক করে হেসে এটাই বলারঃ প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সূর্য কাঁদলে সোনা’ পড়ে নিন) চলছিলো, তখন, সেক্যুলারিজমের অ্যাডাল্টেরাস প্রেমিক সি পি আই কি ষ্ট্যান্ড নিয়েছিলো? - চিঠি-চাপাটি চালাচালি অনেকই হয়েছিলো, এক ইউটিউবেই তার বেশ কিছু নমুনা আছে; পারলে, আর ইচ্ছা হলে, পড়ে নেবেন।
যাক গে, হচ্ছিলো সিনেমার কথা, কোথা থেকে ধাঁ করে যত বালের প্রসঙ্গ চলে এলো ! নিজে না লিখে (কষ্ট করতে হলে সত্যিই অনেক কষ্ট), একটু কোট করা যাক, “The tragedy of Kashmir has deep roots. Over the decades of endless cycles of violence, waves of separatism, the infiltration of Pakistan-funded terror outfits, and the simmering discontent amongst the people, scholarly works and journalistic exercises have dug deep in order to excavate and explore.”
যেন ভারতের কন্যাদায়, এভাবেই পাকিস্তান নানারকমের আবদার চালিয়ে এসেছে ১৯৪৭ থেকে গতকাল ইস্তক। যেমন, আইয়ুব খানের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) অবধি করিডোর দাবী, গোটা পথটাই প্রায় যাবে ভারতের মধ্য দিয়ে। আর আমরা তো গান্ডু, যে, বুঝবো না, সেই সঙ্গে যাবে গোল্ডেন ক্রেসেন্টের যাবতীয় নারকোটিক্স এবং আজকের দিনগুলো হলে, সন্ত্রাসবাদ !
নব্বুইয়ের দশকের শুরুর দিকে ঘটা এই গণহত্যা এবং ফলতঃ, হিন্দু পন্ডিতদের নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে গণপলায়ন একশো ভাগ সত্য, যেমন সত্য, সেইসময়ের সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটার এককণাও প্রকাশ না পাওয়া। অথচ ১৯৯২ সালের রঙীন পোশাক পরা দিন-রাতের প্রথম পাজামা ক্রিকেট বিশ্বকাপের লাইভ টেলিকাষ্টের পুরোটা সুদূর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে এসেছে, একই বছরের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভাঙার খবরে তো প্রিন্ট মিডিয়া (তখন ভিস্যুয়াল সংবাদমাধ্যম এবং কিছু গাঁড়পাকামো মেরে নোন ফেস হয়ে সাংবাদিককূলের অস্তিত্ব ছিলো না) উথালপাতাল।
আর যেখানে ধর্ম সশস্ত্রভাবে নিয়ামকের ভূমিকা নিয়েছে, সেখানে, ভালো পুলিশ, ভালো আমলা, ভালো ডাক্তার, এরা সবাই সীসে কি গুড়িয়া, তাদের কোনো স্যে নেই, সেখানে নিজের ধর্মের এবং রেয়ার গ্রুপের লোকের গুলি লেগে প্রবল ব্লিডিং হলে, অনেক কষ্টে-সৃষ্টে জোগাড় করা রক্তদাতার কাছ থেকে রক্ত নিয়ে, তাকে গুলি করে দেওয়া যায়, আর দর্শকাসনে বসে এই অধমের মনে পড়ে যায়, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কোনো একটা উপন্যাসের লাইনঃ মোরা মুসলমান। মোরা সব সইতে পারি, কিন্তু আমাদের বেইমান বললে...(স্মৃতি থেকে লিখলাম, তাও ৩২ – ৩৩ বছর আগের স্মৃতি, ক্ষমা চাওয়া রইলো আগে থেকেই)।
সত্যি, ভারতবর্ষের মতো অর্ধ-শিক্ষিত দেশের চালিকাশক্তিতে, ধর্ম হলো আফিম, এল এস ডি নয় কিন্তু। নাহ, এটা আমার কথা নয়, লাল মলাটের কালো দাড়ি মহাশয়ই এইকথা বলে গ্যাছেন, আমি শুধু এল এস ডি’র বিষয়টা বললাম। এই সিনেমাতেও ধর্মের কথা বলা হয়েছে, ধর্মের জন্যই তামাম ভায়োলেন্স এবং গ্যোর; - এবং চলচ্চিত্রটি, অবশেষে, অ্যাডাল্ট; বলতেই হচ্ছে, অবশেষে, অবশেষে ভারতের সেন্সরবোর্ডও অ্যাডাল্ট হলো। অ্যাতোদিনে।
রালিভ, চালিভ, গালিভ; - এটা রাম, শ্যাম, যদুর মতো নয়, এদের একটা মানে আছে, সেটা হলো, রালিভ মানে ধর্মান্তরিত হও, চালিভ মানে ভাগো (জাহান্নমে যাও আর কি) এবং গালিভ (ভাগ্যিস ভ এর জায়গায় ব নেই) মানে মরো।
পাকিস্তান জিন্দাবাদ, আল্লাহ আখবর, ইসলাম জিন্দাবাদ, ভারতের পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা তোলা, (ইনশাল্লাহ, তোরাই মাদারচোদ, ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগে তোদের হাত যায় কি করে, কোন স্পর্ধায় তোরা হোয়েষ্ট করা ইন্ডিয়ান ফ্ল্যাগ স্পর্শ করিস !); এসব তো জানতাম, কিন্তু কাশ্মীর আলাদা রাষ্ট্র হবে, যার নাম হবে, ইসলামিক রিপাবলিক অফ কাশ্মীর, কিন্তু, তবুও, মেজরিটির বেরাদরদের সঙ্গে মিশে যাবে না, এটা মেনে নেওয়া সত্যিই দুষ্কর। অথচ গোটা ছায়াছবি জুড়ে শুধু ফ্রিডম আর ফ্রিডম, এমনকি, ইসলামের ফ্ল্যাগ, নাহ, পাকিস্তানের নয়, একপাশে তার সাদা – সবুজ স্ট্রাইপ, ইয়ং অ্যাডাল্টকালে, আমার অমন একটা লিনেনের শার্ট ছিলো। এই না হলে যুগ যুগ (বারো বছর ধরে নিয়ে বলছি) ধরে কনসেশ্যানাল রেটে জীবনের প্রতিটা জিনিস ভারতবর্ষ থেকে পাওয়ার প্রতিদান !
সিনেমাটাতে, পন্ডিতঘরে জন্ম নেওয়া এবং চিরকালের জন্য শিক্ষক পুষ্কর নাথ পন্ডিত (অনুপম খের) এর সবাক অভিনয় এবং ব্রহ্ম দত্ত (মিঠুন চক্রবর্তী) নির্বাক অভিনয় দ্যাখার মতো। একজনের উৎপাটিত শিকড়ের জন্য হাহাকার, মুহুর্তের মধ্যে যা পাওয়া যায়, মুঠো করে নিয়ে, কাশ্মীরের ফেলে আসা বাড়ীটার আনাচে কানাচে, নিজের চিতাভষ্ম ছড়িয়ে দেওয়ার শেষ ইচ্ছা; আর অন্যজনের উচ্চ-পদাধিকার থাকা সত্ত্বেও কাশ্মীরি পন্ডিতদের কাশ্মীরে ফেরাতে না পারা, জেনোসাইডের রিপোর্ট কাটিং করে জমা করা, ‘এবার তো ওদের বাঁচান’ ফোনে বলতে বলতে অপরপ্রান্তের ফোন রেখে দেওয়ার শব্দ শুনে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকা... এরকম কিছু মৌহতির্ক দৃশ্য। রাধিকা মেননের (পল্লবী জোশি) দৃঢ়তা, পারস্যুয়েড করার ক্ষমতা সত্যিই অনবদ্য। শেষের দিকে তাঁর দল, আদর্শ হেরে যাচ্ছে দেখে চলে যেতে যেতে খানিকক্ষণের জন্য থেমে আবার চলা এবং হারিয়ে যাওয়া। কেন তিনি চলে যাচ্ছিলেন? – কারণ উঠতি নেতা, কলেজের আগুয়ান ইলেকশনে তাঁর পার্টির মনোনীত প্রার্থী, তাঁর আদরের কৃষ্ণ পন্ডিতের (দর্শন কুমার) কাশ্মীরের আখোঁ দেখা হাল বর্ণনায়, যেমনটা প্রিপ্ল্যান্ড ছিলো, সেইরকম না বলে সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ ডিসকোর্স, যে ন্যারেটিভটাই সিনেমাটার ফালক্রাম, যেখানে দর্শক (ইনক্লুডিং মি) জানতে পারে কাশ্মীরের গুণগত ঐতিহ্য; - কাশ্মীরের নাম হয়েছে ঋষি কাশ্যপের নামে, এখানে খোলা নীল আকাশের নীচে অভ্রংলিহ পাহাড়ের মধ্যে সাধনায় নিজেদেরকে নিমজ্জিত করেছেন বিভিন্ন ঋষিরা, সুদূর কেরালা থেকে পদব্রজে কাশ্মীরে আসা শঙ্করাচার্য (জানি না মোহমুদগরটা এখানেই লেখা কিনা), দর্শনের সাধক অভিনব গুপ্তা এবং উৎপলদেব, অ্যাস্ট্রোনমির সাধক লৌগাক্ষী, চিকিৎসায় বিপ্লব আনা চরক, সুশ্রুত এবং ভাগবত, ব্যাকরণের ব্যাখ্যাকারক পাণিনি, ত্রিকোণমিতি বিশারদ ভটেশ্বর সিদ্ধান্ত এবং অজস্র ফিল্ডের বহু দিকপাল ব্যক্তিত্ব, যাঁদের অনেকে কোনো কোনো বিদ্যার উদ্ভাবক। এইসব পন্ডিতেরা এবং প্রকৃতি কাশ্মীরকে সাজিয়েছেন ভূ-স্বর্গ বলে। এই দর্শন কুমারের মুখাভিনয় এবং মূকাভিনয় বহুদিন মনে থাকবে।
আর এইসব পন্ডিতদের বেশীরভাগই কাশ্মীরের ভূমিপুত্র। মুসলিম ইনভেড্যারদের বেশীর ভাগই এই কাশ্মীরকে আক্রমণ করেছেন দুটো কারণে, এক. ভৌগলিক সুবিধা আর দুই. জ্ঞানকে নিজের বানাও, তাহলে পৃথিবী তোমার বশ এবং তুমি পৃথিবীর বস।
বলাই বাহুল্য, এই অ্যাতোসব, এসব মিথ্যে প্রচার, প্রোপাগান্ডা - বলতেই পারে কেউ; এই ছায়াছবিতে বলেওছে, কলেজ ফেস্টে, যখন কৃষ্ণ পন্ডিত কমেন্টারি দিচ্ছিলো তার টাটকা কাশ্মীর ভ্রমণের। এবং সেটা এইভাবে –
- It's just mythology ! It's all a lie !
- Bingo !
- Don't worry; I think this is all a build-up.
- It is a lie.
- That's what I think as well.
- Because we were never taught about it in a school or a college.
- It was never a part of our mainstream history books.
- Hitler used concentration camps and Araqi used Qahran and Zabran.
তহফাতু-উল আহবাব যেটা মুহাম্মদ আরাকির ছেলের লেখা, তার বাপের কাজকম্ম নিয়ে, যার ম্যানাসস্ক্রিপ্ট আজো জম্মু কাশ্মীর রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন ডিপার্টমেন্টে সযত্নে রক্ষিত আছে বলে দাবী করা হলো এই চলচ্চিত্রে, তার ৫৫১ নম্বর এক্সেশনে নাকি এসবেরই ভিভিড বর্ণনা আছে। জানি না ভাই, বর্ণনার কি মণিমানিক্য আছে তাতে? অ্যাতো প্রাণ গ্যালো, আর এক্সেশন মারিয়ে কি হবে? বড়োজোর প্রমাণিত হবে, ঘটনাটা সত্যি কিন্তু ওই প্রাণগুলো...?
ওহ হ্যাঁ, সিনেমাটোগ্রাফি যে খুব উঁচু মানের তেমনটা কখনোই বলা যাবে না। কাশ্মীরে শ্যুটিং, শ্রীনগরের ডাল লেক জমে বরফ, তুষার রায়ের শেষ কবিতার মতন যেদিকে চোখ যায়, শুধুই তুষার... অথচ লং শট খুব কম, টপ লং তো নেই বললেই চলে। আমি এই লেখাটার নীচে হাঙ্গেরির একটা সিনেমার একটা ছবি দেবো, আশা হয়, আপনাদের ভালো লাগবে।
এডিটিং খুবই খারাপ; একটা জায়গায়, সম্ভবতঃ সেখানে, যখন কৃষ্ণ পন্ডিত জানতে পারবে কে এবং কারা তার মা ও দাদাকে মেরেছিলো, ফেড টু ব্ল্যাক হয়ে ছবিটা চলতে ভুলে গিয়েছিলো, পরিচালক বোধহয় কৃষ্ণ পন্ডিতের মনের তোলপাড়টা বোঝাতে চেয়েছেন, কিন্তু অতো দীর্ঘ ফেড আউট ওই দৃশ্য তথা পরিস্থিতি দাবী করে না; অতো সেনসিটিভ মনের ছেলে কৃষ্ণ পন্ডিত নয়, যে টানাপোড়েন চলতেই থাকবে।
কলেজ ফেস্টে ইলেকট্রিক গিটার সিন্থিতে অবিরাম হাত চালিয়েছে সংশ্লিষ্ট অভিনেতা, অথচ, তার সাউন্ড এসেছে একবার, একটা ইন্টারল্যুডে।
ঠাকুর্দার শরীরের ভস্ম কাশ্মীরের
বাড়ীর এক জায়গাতেই ছড়ানো হলো।
ছবির মিউজিক্যাল স্কোর নিয়ে কেউ বোধহয় ভাবেইনি, অ্যাতোটাই খেলো লেগেছে, মনে হয়েছে, এটা তেমন ছবি নয়, যেখানে হাজার হাজার মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে; উল্টে মনে হয়েছে, হ্যারিসন ফোর্ডের এয়ারফোর্স ওয়ানের মতো একটা ছবি দেখছি। প্রসঙ্গতঃ ষ্টিভেন স্পিলবার্গকে আমি অত্যন্ত নীচু গোত্রের পরিচালক বলে মনে করি, লার্জার দ্যান লাইফ নিয়ে লোকটা জীবনভর কাজ করে গ্যালো, কিন্তু তারও শিন্ডালার্স লিষ্ট ছবির মিউজিক্যাল স্কোর এই ছবির থেকে ভালো ছিলো।
সবার শেষে এটাই বলার, যে, এই ধর্ম নিয়ে বাওয়ালি কিন্তু একমাত্রিক, এথনিক ক্ল্যাশ কিন্তু মাল্টিডাইমেনশনাল। যা চলছে, তা যদি চলতে থাকে, তাহলে, ভারতে একটা এথনিক কনফ্লিক্ট অনতিদূরে বসে হাসতে হাসতে অপেক্ষা করছে; তা করুক, আমি ততোদিনে নিশ্চয় ফট হয়ে যাবো।
অ্যাতোদিন ধরে কাশ্মীর আমাকে বলে এসেছে, হ্যাঁ, ভোলাবো, রূপেই তোমায় ভোলাবো, কিন্তু এই সিনেমাটা মনে করিয়ে দিলো, শুধু রূপে নয়, বরং রূপটা সেকেন্ডারী, কাশ্মীর, প্রাইমারিলি, তার গুণেই আমায়, আমাদেরকে ভুলিয়েছে। না ভুলে থাকলে, সেটা পাপ। আমরা বাক্যহারা হয়েছি। কাশ্মীর সমীপে। বারবার।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেট (গুগুল ইমেজ)
ছবি সৌজন্যঃ Kincsem AKA Bet on Revenge (2017) - এর একটা খন্ড দৃশ্য।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment