অনায়াসেই এই লেখাটার নাম হতে পারতো, গান সম্পর্কে দু-একটি কথা, যা আমি জানি; কিন্তু হলো না, কি আর করা যাবে...
আমি গান বুঝি না। কারণ আমার সেই প্রথাগত শিক্ষা নেই, যেকোনো কাজ, ঠিকঠাকভাবে করতে গেলে, যেটা, একান্তই দরকার। অথচ জীবনে, অন্ততঃ এক – দেড় কোটি গান, সব গান মিলিয়ে, তো শুনেছি। সুতরাং যা হওয়ার, ঠিক সেটাই হয়েছে; - আমার মন্তব্য প্রকাশের (এক্সপ্রেশন অফ ফ্রীডম অ্যান্ড স্পীচ) ইচ্ছে হয়েছে। তা কুঁজো বলে কি সারাজীবনে একবারও চিত হয়ে শোবো না !
আমার গান শোনা, বেসুরো গুনগুন করা – এসবের জন্য, আমি, আমার বাবা এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে ঋণী। পরে, অজান্তে কখন কিশোর কুমার এবং মহম্মদ রফি, বিশেষ করে শেষ দিকের মহম্মদ রফি, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, পান্নালাল ভট্টাচার্য, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলবন্ধু ঘোষ, সুবীর সেন, ভূপিন্দর সিং, সুরেশ ওয়াদেকর, পরীক্ষিত বালা, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, আশা ভোঁসলে, আরতি মুখোপাধ্যায়, সুমন কল্যাণপুর, এবং জগজিত সিং, আর সবার ওপরে, লতা মুঙ্গেশকরেরা আমার জীবনে এলেন ও জায়গা করে নিলেন, আমি জানতেও পারলাম না। (গায়ক – গায়িকাদের তালিকা এক্কেবারেই এক্সোস্টিভ নয়) কিন্তু প্রসঙ্গতঃ, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া একটা গান, ‘আমাদের ছুটি ছুটি’ (ছায়াছবিঃ জয়জয়ন্তী) ছাড়া একটা গানও আমার মনে ধরেনি। ধরেনি তো ধরেনি, কি আর করা যাবে, এক, আমায় মেরে ফেলা ছাড়া। কারণ আমি এও মনে করি, যে, সূচিত্রা মিত্র, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, বন্যা চৌধুরী, কয়েকটা গান বাদে দেবব্রত বিশ্বাস (আমার স্থির বিশ্বাস এবং আমি নিশ্চিত যে আমার এই বিশ্বাস একান্তই ঠিক যে, রবীন্দ্রনাথ এবং দেবব্রত, এই দুজন যদি এক্কেবারে সমকালীন হতেন, তাহলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুটো গান লিখেই পরদিন ভোর ভোর দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে ছুটে আসতেন এবং এসে সানুনয়ে বলতেনঃ ‘বুঝলি, কাল দুটো গান লিখেছি, একটা সকালে, একটা বিকেলে, তা কি লিখেছি একটু বুঝিয়ে দিবি, ভাই?) – এরা প্রত্যেকে রবীন্দ্রনাথের গানের এক একটা খুনি, অথবা দাঁড়কাক, যাদের চালে বসতে দেখলে উড়িয়ে দিতে হয়। আমি এইরকমই মনে করি, করি তো করি, তো কি আর করা যাবে, ওই, আমায় মেরে ফেলা ছাড়া। আর আরতি মুখোপাধ্যায়? – এখনো সময় আছে, ওনাকে ন্যায়বিচার প্রসূত সম্মাননা দেওয়া হোক, যেটা দেওয়া হয়নি অখিলবন্ধু ঘোষকে। আর রইলেন বাকী হাহুতাশ মুখোপাধ্যায়, ওহ, সরি, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় (উৎপলা সেনকে নিয়ে ভদ্রলোকের যতই খিল্লী ওড়াই না কেন, বম্বের বেশীরভাগ আটির্ষ্ট কিন্তু ওঁর সুরেই প্রথম বাংলা গান গেয়েছেন), যেটা বলছিলাম, এঁরও গান তেমন একটা টানেনি আমায়, একটা গান ছাড়া, ‘আকাশ এতো মেঘলা, যেও না তো (নাকী কো?) একলা’। ওসব পাষাণ ফাষাণ, বুক টুক আমার বাবা-মায়েরা ভালো বলতে পারবে।
গান সম্পর্কে আরো অনেকানেক কথা আছে আমার, যা বলার। সেগুলো বলার আগে গীতিকারদের সম্পর্কে একটু বলে নিই, নইলে পরে যদি আর মনে না থাকে; আমি তো কম্পিউটারের কী-বোর্ডের টেপাটেপিতে যা আসছে, লিখে নিচ্ছি। মিল্টু ঘোষ, শ্যামল গুপ্ত, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার প্রমুখেরা তো আছেনই; কিন্তু আমার বলার লক্ষ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইনি যত গান লিখেছেন, তার ৯৫% রদ্দি, ফালতু বলে থুথু ফেলার মতো করে ফেলে দেওয়া যায়। কিন্তু বাকী ৫%? - আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ওই ৫% গানকে লিখতে গেলে রবীন্দ্রনাথ এবং লালন ফকিরকে তো বটেই; রজনীকান্ত সেন, কমলাকান্ত চক্রউপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম এবং সর্বোপরি, রামপ্রসাদ সেনকেও ভাবতে হবে।
আমরা এমন একটা জেনারেশন, যারা অনেককিছু দেখে গেলাম, আবার অনেককিছু দেখিনি, (১৯৪৭ সালের ১৫-ই আগস্ট এর মধ্যে প্রধান); তবে দেখার পাল্লাটা বোধহয় একটু ভারী; - শচীন দেব বর্মন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মদনমোহন, রবি, রবীন্দ্র জৈন, ইতস্ততঃ খৈয়াম, জয়দেব, বেশ কিছু শঙ্কর জয়কিষাণ, লক্ষ্মীকান্ত প্যারেলাল, আর রাহুল দেব বর্মন এবং সর্বোপরি, সলিল চৌধুরী (এ লিস্টটাও কিন্তু এক্সোস্টিভ নয়, আদপেও)।
হ্যাঁ, আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, নর্থ লাইন থেকে যখন ট্রেন শিয়ালদহ ঢুকছে, তখন, মৃদু হাওয়ায় আমার দেশের পতাকার হালকা ওড়া দ্যাখা আমার প্রিয় জিনিসের মধ্যে একটা। চট করে সংখ্যাটা মনে পড়ে; ৪৯৩ জন বাঙালী এই দেশের স্বাধীনতার জন্য হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি নিজেরা টেনে গলায় পরেছেন; উত্তরাধিকার সূত্রে আমার শরীরেও তো সেই রক্ত। বইছে।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত যেটা জীবনমুখী গান; তার সূচনা কিন্তু আই পি টি এ থেকে, যেটার মুখ্যভাগে ছিলেন সলিল চৌধুরী এবং পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। অ্যাপ্রোচের দিক থেকে ব্যাপারটা নচিকেতা চক্রবর্তীর মতো, সরাসরি, সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মতো ওতো রেহটরিক দ্যোতনা, সেখানে, নেই। কিন্তু ওইসময়ে, আমি অল্প-স্বল্প বই ঘেঁটে যা সার বুঝেছি, সেটা হলো কখনো কখনো ‘ষ্ট্রেট ইজ দ্য গেট’ এরও দরকার হয়।
বয়স হওয়ার সাথে সাথে আমার প্রিয় কিছু শিল্পীদের গলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, প্রকৃতি তার দেওয়া জিনিস ফেরত নেবে, এ আর এমনকি ! কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজনের কন্ঠস্বর যেন আরো মিষ্টি হচ্ছিলো, তিনি মহম্মদ রফি; একজনের গলা যেন দিগন্ত থেকে আরো দিগন্তে যাবে, তিনি কিশোরকুমার; আর বয়স বাড়ছে, বাড়ুক, সে তো থেমে থাকবে না, বাড়বেই, মানি আর না মানি, কিন্তু গান হবে একই স্বরে ও সুরে, তিনি লতা মুঙ্গেশকর।
আমার জেন্ডার স্টাডি বেশীদূর নয়, তবুও গাইড ছায়াছবির কাঁটো সে খিচ কে আঁচল গানটা শুনলেই মনে হয়, এটা একটা মেয়ের বন্ধনমুক্তি তথা উইমেন ইমানসিপেশনের গান।
যেমন আমার কাঁটা লাগা (ছায়াছবিঃ সমাধি) এবং সাজনা হ্যায় মুঝে সজঁনা কে লিয়ে (ছায়াছবিঃ সওদাগর) এর রিমিক্স ভালো লেগেছে মূল গানদুটোর থেকে। লেগেছে তো লেগেছে, কি আর করার, এক মৃত্যুদন্ডের ফরমান ছাড়া। রিমিক্সগুলোতে অনেক বেশী ট্র্যাকে রেকর্ডিং, এবং আধুনিক মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টস ও তার ঠিকঠাক ইউটিলাইজেশন এবং সঠিক অ্যারেঞ্জিং আমাকে ভালো লাগিয়েছে, শুধু কাঁটা লাগা – এর ক্ষেত্রে আমি আর একটু বাস ড্রাম এক্সপেক্ট করেছিলাম।
গান পছন্দের সঙ্গে বয়ঃসন্ধির একটা সুক্ষ্ম যোগ আছে, এটা আমি বরাবরই মনে করে এসেছি। সেই ছোটবেলায়, মানে, সেই কবেকার ছোটবেলায়, তেরে গলিয়োঁ মে হাম আয়ে শুনেছিলাম, মিনু ছায়াছবির গান; আজও সেইভাবেই মনে আছে। একটু বড়ো হতে অমিতাভ বচ্চনকে চেনা, সূত্র? – পোস্টকার্ড, যার পিছনে হাতচিঠি লেখার প্রভিসন আছে।
এবার সেই কিশোরের ক্রমশঃ যুবক হয়ে ওঠার গল্প; যেখানে গান একটা বিরাট প্রেক্ষাপট। মুকাদ্দর কা সিকান্দার ছায়াছবির থার্ড ভার্সটা কেন বাদ গেলো, সেটা বুঝতে না পারা। যেখানে বলা হচ্ছে –
হামনে মানা ইয়ে জমানা
দর্দ কি জাগীর হ্যায়
হর কদম পে আশুঁও কা নয়ি জঞ্জীর হ্যায়
হাল-এ-গম পর যো খুশী কা গীত গাতা যায়েগা
একই কথা প্রযোজ্য জমিন আসমান ছায়াছবির অ্যায়সা সামা না হোতা –এর মতো গানের ক্ষেত্রেও !
কিছু গায়ক-গায়িকাদের (ওই রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া লোকগুলো ছাড়াও) আমি জীবনভর এড়িয়ে চলেছি, কারণ একটাই এবং সেটাই যথেষ্ট, যে, আমার ওদের গান ভালো লাগেনি; যেমন মহম্মদ আজীজ, সাব্বিরকুমার, শ্যারন প্রভাকর, আলিশা চিনয় প্রমুখ।
প্রেমের গানঃ
প্রেমের গান একা গাওয়া যায় না, ডুয়েটেই বেশী খোলে। জানি না, আপনারা কি ভাবেন? বা, আপনাদের ভাবনার পিছনে যুক্তিটা কি?
আমার কাছে প্রেম দুরকম; বয়সের ফেজানুযায়ী; - যৌবনের উচ্ছলতার উদযাপন, যেটা প্রেম সবচেয়ে ভালো করে আর প্রৌঢ়ত্বের কাছাকাছি এসে পারস্পরিক নির্ভরতার অন্বেষণ, এটাও ভালোবাসা সবচেয়ে ভালো করে। এই ইস্যুতে বলে রাখা যাক, প্রেম মানে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা নয়, প্রেম মানে কিছুটা সময় থাকা। একার সঙ্গে। দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার ছায়াছবির পহেলী পহেলী মুলাকাত কি, সমুন্দর ছায়াছবির অ্যায় সাগর কি লেহেরোঁ, শক্তি ছায়াছবির জানে ক্যায়সে কব কাঁহা, দিওয়ার ছায়াছবির কহেদু তুমহে এবং ম্যায়নে তুঝে মাঙ্গা হ্যায়, ইয়ে ওয়াদা রহা ছায়াছবির তু, তু হ্যায় উয়ো হি দিল নে জিসে... আর কতো বলবো; পুঁথি বাড়তেই থাকবে। এইরকম উদাহরণ হরির নুটের বাতাসার মতন।
গজলাঙ্গের প্রেমের গান কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভী হ্যায় (ছায়াছবিঃ এতবার) এবং রোজ রোজ আখোঁ তলে (ছায়াছবিঃ জীবা); এর লিস্টও কম লম্বা নয়।
পারস্পরিক নির্ভরতার অন্বেষণের গান, এই মুহুর্তে খুঁজতে গিয়ে, কি হাস্যকর, রবীন্দ্রনাথের শরণ নিতে হচ্ছে; - হ্যাঁ, পুরানো সেই দিনের কথা – এটাকে পার্সিয়ালি প্রেমের গান বলা যেতে পারে; এমনকি ইংরেজী গানেও তেমন একটা নেই, রুবি, ডোন্ট টেক ইয়োর লাভ টু টাউন (কেনি রজার্স), পল সাইমনের হার্টস অ্যান্ড বোনস, মিসেস রবিনসন (নাহ, এটা একটা একা থাকার গান), উইলি নেলসনের টুডে আই থট অ্যাবাউট ইউ লর্ড (কিয়দংশে) ... নেই, বিশেষ নেই।
আইটেম গানঃ
অ্যাজ দ্য নেম সাজেস্টস, আইটেম সংয়ের সঙ্গে ছায়াছবির কন্টেন্টের তেমন মিল থাকে না। নামকরা অভিনেত্রী আসেন, কোরিওগ্রাফানুযায়ী নেচে টেচে টাকা নিয়ে বাড়ী চলে যান। তারপর ভুলে যান। যদিও এই জঁরের গানে প্রথম, না, ভুল বলছি, দ্বিতীয় লেজেন্ড হলেন মমতা শর্মা কিন্তু আইটেম সংয়ের ক্ষেত্রে আমার প্রথম পছন্দ লতা মুঙ্গেশকরের ‘আ জানে যা’ (ছায়াছবিঃ ইন্তেকাম); আহ্, মদনমোহনের সুরের ওপর লতার গলা যেন গলে পড়া নরম মোম। এই মদনমোহন, তাঁর করা সুর আমার কাছে একটা বিস্ময়; মনে পড়ে, হিন্দুস্থান কি কসম ছায়াছবির হরতরফ আব ইয়ে অফসানে হ্যায় অথবা হাসতে জখম ছায়াছবির তুম যো মিল গয়ে হো? তারপর ঊষা মুঙ্গেশকরের ‘মুগনডা’ (ছায়াছবিঃ ইনকার) এই গানটার সুরকার অবিশ্যি রাহুল দেব বর্মন; এর পরে একটুও খাটো না করে আশা ভোঁসলের গানগুলি। শান ছায়াছবির দোস্তোঁ, জিন্দেগী হাসিন হ্যায় থেকে শুরু করে একদম শেষে বলা ‘হ্যায় না?’; এই ‘হ্যায় না?’- টাকে চুরি করে আমি বহু জায়গায় লিখেছি।
এরপর তো সুনিধি চৌহান এলেন, দেখলেন, এবং জয় করতেও ছাড়লেন না। একটা ইনস্টিটিউশন হয়ে গেলেন এই জঁরের গানে, আশা ভোঁসলের মতো; যদিও আশা ভোঁসলের মেলোডিটা তাঁর কাছ থেকে এখনো আমাদের পাওয়া বাকী। প্রসঙ্গতঃ, সুনিধি চৌহানের গাওয়া একটা গান, ইউ আর মাই মাইন্ড ব্লোয়িং মাহিয়া, যেখানে কিছু ইংরেজী বাক্য আছে, সেখানে কিন্তু এই সুনিধি চৌহান ভীষণ সতর্ক, সম্ভবতঃ যাতে সুরকে তার জায়গায় রেখে, ইংরেজী উচ্চারণটাকে ঠিক রাখা, এবং এটা করতে গিয়ে তিনি, গানের সেই ইংরেজী অংশে অসম্ভবরকম কোমল, যার খুব সম্ভব কারণ ওই অতি সতর্কতা, এবং, ফলতঃ, তাঁর গলা ওই ইংরেজী অংশগুলোয় পাতলা হয়ে গেছে; যেটা গানটার বাকী অংশের পাওয়ার সিংগিং এর সঙ্গে যায় নি বলেই আমার, ‘কি করে বোঝাই তোদের, গানেরই গ জানি না’, আমার, মনে হয়েছে।
বাঙালী, লোকে বলে কাঁকড়ার জাত, কিন্তু, আমার মতে, যেখানে সে নিজে নেই, এমন পরিস্থিতিতে, বাঙালী, বাঙালীকে টপ অবস্থাতেই দেখতে চায়। শ্রেয়া ঘোষাল এই জঁরের একটাই গান গাইলেন, মানে, এই জঁরের ফুলকোর্স একটা গান, চিকনী চামেলী (ছায়াছবিঃ অগ্নিপথ, নিউ ভার্সন, মানে, রিমেক) এবং আবার সেই ‘কি করে বোঝাই তোদের, গানেরই গ জানি না’, আমার মতে, বুঝিয়ে দিলেন, যে, নেহাত গান না, নইলে... আমাদের প্যালারামের কথামতো, নেহাত পিলেটা আছে তাই, নইলে, এতোদিনে মোহনবাগানে খেলতুম, জানো।
আমার এইসময়ের কোনো গানই মনে থাকে না; রাতা লম্বিয়া (ছায়াছবিঃ শেরশাহ) ছাড়া; - ফোক টিউন, যথারীতি মনকে চট করে ধরে নিয়েছে, এটাই নিয়ম; - একদিন তো ধরণীর ধূলি হয়ে রয়ে যাবো, তাই মাটির সুর আমাদের ঘাড় কামড়ে ধরে; পরীক্ষিত বালা থেকে মিরিয়াম মাকেবা, সবার গান। যে মনে রাখতে না পারার প্রসঙ্গ দিয়ে এই অনুচ্ছেদ শুরু, সেটা বলতেন আমাদের বাপ-কাকারা; তাঁদের পছন্দের গান আবার ‘ধুস, মনেই থাকে না’ বলতেন দাদু-ঠাম্মারা। তাঁদের সম্মন্ধ করে অলমোস্ট বাল্যবিবাহ, বাপ-কাকাদের প্রেমে চিঠি-চাপাটির গোপন চালাচালি, আমাদের সময়ে খুল্লাম খুল্লা ঘুরে বেড়ানো আর আমাদের পরের জেনারেশনে ব্যাগ-2-ব্যাগ, অইয়ো রুমস। প্রেমের ধরন পাল্টাচ্ছে আর গানের পছন্দ পাল্টাবে না !
কিন্তু মাটির গান সবাইকে টানবে, চুম্বকের মতো, কারণ সে-ই একমাত্র চিরন্তন। সুতরাং, চিরদিন। মানুষ অন্যকিছু করতে করতে ঘাড় ঘোরাবে। শোনার জন্য। মাটির গান।
পুনশ্চঃ লেখাটা বেশ চলছিলো, অনেকটা আমার বাবার মতন, সুস্থ মানুষ, কোথাও কোনো অসুস্থতা নেই, কিন্তু আচমকা থেমে গেলো। এ হয়। এতে চমকাবার কথা নয়, তবুও মানুষ চমকায়, চমকে গিয়ে কাঁদে বা থম মেরে যায়। থেমে গেলো, লেখাটার কথা বলছি; কি আর করা যাবে, নিয়তি এর বেশী এগোনোর কথা ওর কপালে লেখেনি।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ছবি সৌজন্যঃ ইন্টারনেট (গুগুল ইমেজ)
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।