Saturday, August 16, 2025

মায়ের অসুস্থতা, ২০২৫

 

নিয়মের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে স্বজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধ্য হলে কেমন লাগে? ভালো লাগে না-ই বোধহয়, অপ্রত্যাশিত কিনা। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তেমন ছিল না, মা'র হার্ট-লাঙ নিয়ে কোনওদিনই আমার কপালে দুশ্চিন্তার তেমন ভাঁজ পড়ে নি। যদিও জানতাম মাকে যেতে হবে নিউমোনিয়া বা ব্রঙ্কাইটিস বা লাঙ কনজেসশন, নিদেনপক্ষে ফ্লুতেই।

 

এ বছর কোভিডের-মতো-কিন্তু-কোভিড-নয়, ভাইরাল জ্বরটা ব্যাপক বেড়েছে। মামুলি জ্বরের মুখোশে এই খদ্দের কোভিডের আর একটা ছিনাথ বহুরূপী কি না, কে জানে। কোভিড ভ্যারিয়েন্ট হোক বা না হোক, মা'র সর্দিটা বড়ো ব্যাপক জমেছিল, ওই মান্না দে'র গানটার মতো, বড়ো ময়লা জমেছে মনে। মা'র হারিয়ে ফেলা ঘ্রাণ, হিয়ারিং এবলিটি স্বমহিমায় ফিরে আসতে না পারলেও সেসবকে মা অনেকটাই রিগেইন করেছিল।

 

বাদবাকি যা কিছু সব কিছুকে সর্দি তথা ফ্লু'র খরচায় ফেলে আমি নিশ্চিন্তই ছিলাম। নাহ, ঠিক নিশ্চিন্ত ছিলাম না বোধহয়, সিকেডিটাই আমাকে ভাবাচ্ছিল বেশী। ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ় যে কত রকমের কেরামতি দেখাতে পারে, সেটা কেয়ামতওয়ালারও কল্পনায় আসে না।

 

আর মা'র হাইপোন্যাট্রেমিয়ার টেন্ডেন্সী... ইলেক্ট্রোলাইট ডিসব্যালেন্স যে কি পারভ্যেইসিভ, সেও যে নেহাত নাদান প্লেয়ার নয়, তার হাতেও স্ট্রোকের ফুলঝুরি আছে, এটা জেনে ফেললে কেউ-ই নির্ঘাত রিওয়ার্ড আশা করেন না। সোডিয়াম কমে যাওয়ায়, আমি, স্বচক্ষে এবং স্বীয় কর্ণে মানুষকে নিওলোজিজ়ম অর্থাৎ ওয়র্ড স্যালাড বানাতে দেখেছি। পাত্র আমার ছোটমামা।

 

সুতরাং ভাইরাল ফিভার, ওয়েট কফ, লো অ্যাপেটাইট, ডিজ়িনেস, এবং বডি একের কারণে মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সময়ই আমার সন্দেহ একটা ছিলই।

 

ডাক্তার অভিজ্ঞ মানুষ। বই তো বটেই, সময় এবং মানুষ তাঁকে আরও বেশী করে ঋদ্ধ করেছে। দেখেই একটা ডিজিটাল এক্স রে করাতে বললেন। মাকে একপলক দেখেই তাঁর ভ্রু জোড়া জটিল হয়েছিল, এক্স রে প্লেট দেখেই সেটা কুটিল হয়ে উঠলঃ ‘পেশেন্টকে অ্যাডমিট করতে হবে।’ আমি মোক্তারবাজি ভালোই পারি বলে ধারণা আছে আমার। মাল্টিপল মাইলোমার পেশেন্ট, ইমিউনিটি পাওয়ার জিরো এসব ভুজুংভাজুং দিয়ে সবে ডাক্তারকে পেড়ে ফেলেছি, তিনি প্রেস্ক্রিপশন লিখতে শুরু করে মা'র রুটিন পরীক্ষার রিপোর্টগুলো শুনে নিচ্ছেন... হিমোগ্লোবিন ৬.১ শুনে হেমাটোলজিস্ট তিনি আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। এবং রয়ে থাকলেন। অপলক। একটা সময় শব্দকে আসতেই হয়ঃ ‘এই পেশেন্টকে বাড়ী নিয়ে যাবেন, বলছেন? ডাক্তারীটা আপনিই করলে হয় না?’ আমি সপাটেঃ ‘কোনও ওষুধ কি হয় না?’ তিনি ততোধিক শান্তঃ ‘নাহ, রক্ত দিতে হবে।’

 

এইটা আমার ব্যাপক শঙ্কার জায়গা। তায় মা'র রক্ত এ নেগেটিভ। একটি ছেলেকে পাওয়া গেলো, যে ওই হাসপাতালে রক্ত দেয়। তাকে পিং করলেঃ দেখছি। দেখছি। আসলে রেয়ার ব্লাড তো, হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না। আর... আর আপনিও খোঁজে থাকুন। তারপর বললে আপনাদের পেত্যয় যাবে না, আমি তাকে ফোন করব কি, সে-ই 'এখনো পাই নি, আপনি পেলেন?' বলে ধারাবাহিক ফোন করে গেছে। কিন্তু শঙ্কা যেখানে, শঙ্করও সেখানে, আমি তফাত করতে পারি না, এই যা। আমার এম এস ডব্লু পরিচিতদের মাধ্যমে রক্ত জোগাড় হলো, দেওয়াও (শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে কি আর শোধ হয়, আর এ তো রক্ত-ঋণ), আর তখনও সে পুত্তরঃ আয়্যাম ইয়েট টু রিচ, বাট আয়্যাম কামিং... উইথ ইয়োর ব্লাড। আই হ্যাভ গট ওয়ান ইউনিট ফর ইউ।

 

এসব কথা লেখার জন্য এ পুঁথি না, এমনকি আমার জোগাড় করা রক্ত বিনা পয়সায় আর সে ছেলের আনা রক্ত ষোলোশো টাকার; অর্থাৎ রক্তের বুর্জোয়া এবং প্রোলেতারিয়েত, এই ডায়াকোটমি বর্ণনেরও নয়। এমনকি এম এস ডব্লু করা ব্লাড ব্যাঙ্কের ছেলে মেয়েরা যখন বলছেঃ 'অনিন্দ্যদা, আর একটা ইউনিট তুমি *** হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে পেয়ে যাবে। ইউ জাস্ট টেক আ ক্যাব অ্যান্ড গো। আমি ফোন করে দিচ্ছি। এই রিকুইজিশন আর স্যাম্পলেই হয়ে যাবে। ...আচ্ছা চলো, আমি বরং তোমার সঙ্গে যাই।’ আমায় সস্নেহে বলতে হয়েছেঃ 'নাহ্‌ থাক, একজন তো আর একটা ইউনিট ব্লাড এনসিওর করেছে।' বিস্ময়তাড়িত সে রক্তের দোকানের সাদা অ্যাপ্রনেও আহতঃ ‘মিছিমিছি ওতোগুলো টাকা খরচা করবে, অনিন্দ্যদা!' কি আর বলি, বলে ফেলেছি যখন হ্যাঁ, আর বলে দেওয়া কথা কবেই বা আর ফিরিয়ে নেওয়া গেছে। সুতরাং ছোট করে হাসি, শীতকালে ঠোঁট ফাটলে প্রসারণ যেমন নিক্তি মেপে, তেমনটাই। কিন্তু হাহাকার করার জন্যও এ লেখা নয়। তাছাড়া এগুলো দ্বিতীয় দিনের কথা, আমার যা কিছু প্রথম দিনকে ঘিরে। নচেৎ ব্রঙ্কোনিউমনিয়া, ফাঙ্গাল প্লুরিসি... ক্রমশতে গেলে ফিরিস্তি প্রচুর।

 

প্রথম দিন তো শতেক শঙ্কা সত্ত্বেও মাকে এক কাপড়েই হাজির করেছিলাম চিকিৎসক-সমীপে, তখন কি আর জানতাম, ভর্তিই একমাত্র পথ যা খোলা আছে তখনও। মাকে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে দিয়ে এসে নাইটি আর বড়ো সাইজের হ্যাঙ্কির খোঁজে বেরোলাম আমরা, কাছেই এসবের মস্ত বাজার আছে। ঠোকর খেতে খেতে পৌঁছেও গেলাম। গুমোট আকাশের নীচে ঘামে দরবিগলিত অবস্থা, তবুও জোগাড় করা গেলো, ঈপ্সিত জিনিসগুলো। তো কিনে ফিরছি, আমায় যাঁরা চেনেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই জানেন যে স্লো ওয়াকিংয়ে আমার জুড়ি মেলা ভার। আমি একটা করে পা ফেলছি আর ভাবছি, মায়ের ল্যাম্বডা লাইট চেইন অত্যন্ত বেশী। ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়ও আছে, এতোসব সিম্পটম কিসের! ক্যানসার কি টার্মিনাল স্টেজে চলে গেলো? কিডনি ফেলিওরের? হাইপো-ন্যাট্রেমিয়ার? অ্যানেমিয়ার? ভাইরাল ফিভারের? চেস্ট ইনফেকশনের? নাকি, সবকিছু মিলে এটা মৃত্যুর সিম্পটম? আমি সারাটা জীবন পা ফেলেছি, পরের স্টেপে মৃত্যু অপেক্ষমাণ ভেবে নিয়ে; কখনও কি জানতে চেয়েছি, মৃত্যু আমার থেকে এক পা এগিয়ে হাঁটছে কি না? বস্তুতঃ দুটো নাইটি আর দুটো লার্জ হ্যাঙ্কি কেনা হয়েছে, দুটো তো আর একসঙ্গে ব্যবহার করতে দেবে না হাসপাতাল, মা কি পারবে দ্বিতীয় সেটটা ছুঁয়ে দেখতে?

 

মা'র পালমোনারি ইনসাফিশিয়েন্সি নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা ছিল না আমার, কিন্তু কাল? কাল দু দুটো ফরেন বডি মা'র শরীরে যাবে, শুধু একটুখানি যে যাবে তা নয়, কোষে কোষে যাবে। তাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে মা'র শরীরের এক্সিস্টিং নিজস্ব রক্ত? জিজ্ঞাসাগুলো তৈরী হয়েই ভেঙে যাচ্ছিল। এটা হচ্ছিল কারণ আমি ডেডবডি, মরচুয়ারি র‍্যাপ, মরচুয়ারী ভ্যান, বাঁশের চাল্লি, ইলেক্ট্রিক চুল্লী, অথবা গাড়ীর বাতানুকূলতায় বসে ব্যাকরেস্টে হেলান দিয়ে মায়ের বাড়ী ফেরা, জ্যান্ত - এসবের কোনও কিছুই ভেবে উঠতে পারছিলাম না। বস্তুতঃ অনেকদিন পর একটা সময় এসেছিল যখন আমি কিছুই ভাবতে পারছিলাম না, ও ফলতঃ, ভাবছিলাম না। অর্থাৎ সাধকের দশা আর কি... বোধি আর ফার্লং খানেক দূরে। ঝিকমিক করছে।

 

রক্ত তার সময় মতো গেলো। একটার পর একটা। প্রথমটা নব্বুই মিনিটে, দ্বিতীয়টা ষাট মিনিটে। আর বাড়ীতে বসে ফোনে মা'র তত্ত্বতালাশ এবং ফারদার দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে তার আগের রাতে অবর্ণনীয় উত্তাপ নিয়ে ভর্তি হওয়া এবং ঘন্টাখানেক বাদে মারা যাওয়া একটি কাঁচা রক্তের ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে এটা বুঝছিলাম, মা আসলে একটা কনসেপ্ট। ওই ঈশ্বরের মতোই। জন লেনন যেমন বলেছেন। এটা আমি ২০২২ সাল নাগাদ বাবা প্রসঙ্গে প্রথম উপলব্ধি করি, যেটা এখন গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। এখনও যেমন রোজ আমি বাবার কথা ভাবি, এখনও যেমন রোজ আমার বাবার কথা মনে পড়ে, তেমনই দিনপ্রতি বাবার আদলের একটা ক্ষয় অমোঘ যথা ঘটে চলেছে। ভাবখানা এইরকম দাঁড়িয়েছে, একদিন বাবার জোড়া ছবির সামনে দাঁড়িয়ে আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না এটাই আমার বাবা। এই লোকটার বীজ থেকেই অঙ্কুর, অঙ্কুর থেকে ঝাঁকড়া এক আগাছা, যেটাকে সব্বাই অনিন্দ্য ঘোষ নামে চেনে। আমার স্মরণ যেমন অব্যয়, তেমন অক্ষয় আমার স্মৃতিতে আমার বাবার অবয়বের ক্ষয়। বাবা মানুষ থেকে অপসৃত হতে হতে একটা ধারণার দিকে চলে যাচ্ছে দ্রুত; আমি আটকাতে চেয়েও পারছি না।

 

কিন্তু মা'র কথা তো আলাদা; - মা তো আক্ষরিকই বেঁচে আছে। এখনও। তাহলে? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কি মা’র প্রতি টান ফিকে হয়ে এলো? এলেও তাকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখতে হবে, তারপর অ্যাক্সেপ্টও করে নিতে হবে; কারণকি, আমার নিজেরও এখন ধীর লয়ে ব্যাগ গোছানোর পালা। নিজের ট্রেনের জন্য লেজিটিমেট অপেক্ষায় কে আর কবে ওয়েটিং রুমে বসে অন্যের জন্য কেঁদেছে, যার ট্রেন ইন করার অ্যানাউন্সমেন্ট হয়ে গেছে? কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক তাই কি? আমি আমার সারাটা আয়ু বরাবর ফিগার সম্বল করে বেঁচেছি; যেমন বিভিন্ন শর্ট ভিডিওতে নিজের হাঁটাচলা, পাবলিক স্পীকিং দেখে আমার নিজের সম্পর্কে একটা আলতো ধারণা আছে। বহুবার জয়িতাকে বলেছি যে, ঘুমিয়ে পড়ার পর যদি শ্বাস নিতে গিয়ে মুখটা সামান্য হাঁ হয়ে যায় (নাক বনধ্‌ থাকলে যা অবশ্যাম্ভাবী), তাহলে তার একটা শর্ট ভিডিও তুলে দিতে। শোনে নি। সুতরাং, নিজের সম্পর্কে খুব স্বচ্ছ ধারণা আছে আমার, এমনতরটা যদি দাবী করি, তবে সেটা অন্যায্য, অসমীচীনও বটে। কারণ ডেরিভেটিভ করতে গিয়েও আমি ডেল্টা ভ্যালুর একটা আদল মনে মনে এঁচে নিয়েছি। ইন্টিগ্রেট করার সময়ও তাই। যোগচিহ্ন’র থার্ড কোয়াড্রান্টে কাল্পনিক সংখ্যাকে সাঁটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু মা’র ক্যানসার ধরা পড়ার পর, অর্থাৎ সেই ২০১৬ থেকে মা’র সঙ্গে আড্ডাটাই নিভে গেছে। মা’র কাছে অকারণে আর যাওয়াই হয় না বিশেষ। মা’র বিভিন্ন ছবি, যা আমার বা জয়িতার মোবাইলে স্টোর করা আছে, সেগুলোকে পরপর স্ক্রল করে গেলে আমার সেই সন্দেহটা আবারও জাগে... আমার মা? এটাই?

 

সবাইয়েরই মা আছে; মাকে থাকতে হয়, নইলে অস্তিত্ব হয় না। বাপ সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। ঘটনা হলো, এখানে বেশী ভালোবাসাবাসি, কম ভালোবাসাবাসি, এসবের প্রশ্ন উঠছে না। শুধু যেটা উঠছে, সেটা হলো, একটা ডিম্বাণু এবং একটা বীজ, পরে একটা গর্ভ। যদিও দ্বিতীয়টা এখন ভাড়া-ফাড়া দেওয়া হয়; তা পয়সার বিনিময়ে কি-ই না হয়; - শুনেছি, উত্তম কুমারের বাবা মারা যাওয়ার পর ন্যাড়া হয়েছিল নাপিত, মহানায়ক শুধু মূল্য ধরে দিয়েছিলেন। হয়তঃ শ্মশানেও মুখাগ্নির সময়ে ওইভাবে পিতৃঋণ শোধ করেছিলেন। লট কে লট মূল্য ধরে। মায় অকারণ সংস্কারও! তগো কোন্‌ হালায় কইছে ন্যাড়া না হইলে বটে তর বাপের আত্মা শান্তি পাইবেক লাই? তো যে কথা হচ্ছিল, সবাইয়েরই একটা করে মা, কারোর কারোর বেশী, যদিও বাপের বিয়ে কাউন্ট না করে রক্ত ধরে চললে মা একটাই, বাপও এবং তারা একদিন, মানে, যে কোনও একটা দিন নিজের মতো করে মরে যায়। এবার শোক, তার গভীরতা ব্যক্তিভেদে ভ্যারী করে, কিন্তু একটা সময় পিতৃ-মাতৃ শোক ফিকে হয়; স্বাভাবিক, শোকের চড়ায় আটকে গেলে জীবনের নৌকো চলবে কি করে! কিন্তু ওয়ান ফাইন মর্নিংয়ে ঠাহর হয় বাবা-মা’র ছবি দুটোই ঝাপসা হতে গেছে, একটা সময় মানুষ গোটা মানুষ দুজনকেই ভুলে যায়। পড়ে থাকে একটাই অনুভব, নিয়মভঙ্গের টইটুম্বুর খাওয়া খেয়ে মাউথ ফ্রেশনার চেবানোর মতোঃ আমার একটা বাবা ছিল। আমার একটা মা ছিল। তারা কেমন দেখতে ছিল সেটা আজ আর বলতে পারব না, কিন্তু ছিল, তারা ছিল। - এটা ধারণা ছাড়া আর কি?

 

সত্যি স্বীকার করতে কি, যারই আদল আমার স্মৃতি থেকে হারায়, সে-ই আমার বিস্মরণে তলায়। হতে পারে, বাবা এর ব্যতিক্রম। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়ে বাবা আর কি করতে পারল? ইদানীং আমার বাবার ভয়েসের একটা চাঙ্ক, হেঁটে যাওয়ার কুয়াশা-চাপা আদল – এসব মনে পড়ে। আর কিছু না। মায়ের ক্ষেত্রেও তাই; এখানে সমস্যা আবার একটা বাড়তি, ২০১৮, ২০২১ এমনকি ২০২৩ শেও মাকে যেমন দেখেছি, আর মা’র পুরানো ছবি, যেখানে যেমন আমার কাছে রাখা আছে, তার কোনওটাই এই ২০২৫ এর মা’র সঙ্গে মেলে না। আর আমি বেকুব হতে থাকি। একটা সময় বুঝি, ক্যানসার রোগটা ভারী অদ্ভূত, রোগী ভাঙে, রোগীর পরিবারকে স্ট্রিপার বানিয়ে দেয়। ফাঁকা ওয়ালেট ফেলে দিয়ে কোপ্‌নি সম্বল সেই পরিবারের কেউ যখন দেখে, সামনের মাঠে খেলা চলছে, বেঁচে থাকার খেলা; তখন হয়তঃ তারও সাধ যায় ঈষৎ বেঁচে নিতে। কিন্তু সে ভুলে যায় তার উদোম শরীরের কথা। সে মাঠে নেমে যায়। সোল্লাসে দৌড়তে থাকে। উপস্থিত দর্শকরা তখন একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠেঃ ‘স্ট্রিকার। স্ট্রিকার। ধর শালাকে। মার শালাকে।’

 

 

  

 

 

 

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ    © 

 

 

ফটো কার্টসিঃ  গুগল ইমেজেস 

 

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলিএখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

No comments: