Monday, April 7, 2025

এইসময় এবং কোনও একটি বিশেষ ছেলে বা মেয়ে

 

এদান্‌কে অকারণই রাত জাগি। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়লেই কিছু একটা, যা হয়তঃ পরম মূল্যবান, হারিয়ে যাবে অজান্তে। সেই যে পিচ্চিকালে শুনেছিলাম না, মায়ের কোল থেকে সন্তানকে নিয়ে যেতে গেলেও যমদূতদের জাদুটোনার দরকার পড়ে, যার বশে মায়ের চোখে তন্দ্রাঘোর এঁটে যাওয়া লাগে, অনেকটা সের'ম।

সারারাত জেগে আমি শুধু বেমানান, আলটপকা শব্দ শুনে যাই। কোনওটায় চমকে উঠি, কোনওটা আবার জলে খোলামকুচি পড়বার মতও না। অজস্র শব্দ আমার অন্দরে প্রবেশ করে হর রাতে; আমার ভিতরে আগে যে শব্দ কোলাহল করত, আমোদে মাতত, কান্নায় আপ্লুত হত, তাদের সক্কলকে সরিয়ে দিয়ে কায়েমী হয়ে বসে কিছু অর্থহীন শব্দ। জানি, এগুলোই একদিন নিশিডাক দেবে, আমি পথে নামব, জানি না নিরস্ত্র কিনা। যদি হইও তা, সেখানে গৌরবের মেহেক আছে, কেননা, আমি একা।

পথে নামা মানেই কিন্তু আন্তরিক শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার দায় এসে ঘাড় কামড়ে ধরে। আর তায় রাত, ধুনোর গন্ধ'র মত। আলেয়াও এসময় ভালবাসার ভেক ধরে, মুগ্ধ পথিক আলোর সে ইশারার দিকে ছুটে গেলেই পথহারা।

 

...মনে আছে, একবার, তখন যুবকবেলা, বর্ষার তুমুলে আটকা পড়েছিলাম নদী ঘেরা লোনা লাট অঞ্চলে। মারণ ব্যাধির মরণকামড় থেকে এঁটেল মাটির বাঁধ সবই মধ্যযামের কড়িচালার খেলা। হ্যাজাক, চার সেলের টর্চ নিয়ে অভ্যস্ত হাতগুলো সব বাঁধ মেরামতিতে ব্যস্ত। আমি ভাবছিলাম এই জলের তোড়ে কি কোনও স্বেচ্ছাচারীর শব দেখতে পাব? পাওয়া যায় না, স্রোতের তীব্রতা জুড়ে ঘুর্ণি, সেইসব জলজ নাগরদোলায় মানুষের ওঠা নয়, শুধু পতনের দেখা মেলে। আর আনাচ-কানাচ জুড়ে উদগ্র সরীসৃপ, তার বিষের তামামটুকু নিয়ে।

 

আগামীকাল হয়তঃ আবারও একটা বাঁধ ভাঙবে। আরও অনেক পরিবার ভেসে যাবে। তা যাক, ন্যাচারাল হোক বা ম্যানমেইড, সে আবার কিসের ডিজাস্টার যদি সে কিছু সাধারণ, শুধু বেঁচে থাকতে চাওয়া মানুষদের উপড়ে দিতে না পারে, ভাসাতে না পারে! মানুষের পরমাই নিয়ে মাদারীর খেলা দেখাতে না পারে!

আমি এও জানতে চাই না, আর কি এবং আর কত পেলে ক্যালামিটি-মেকারদের খাঁই, আখির, মিটবে।

 

আজকাল আমার একটা অন্য কথা মনে হয়; - রাম চোর আর শ্যাম চোর - এই চোর চোর খেলার চাপানউতোরের মাঝে একটি শিশু...

ধরা যাক, তার বয়স নয় কি দশ, এক প্রতিবেশী তাকে বলে দেয়ঃ জানিস তো, তোর বাবার চাকরি গেছে। কেন বল তো? কারণ, তোর বাবা ঘুষ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছিল বলে। ঠিক হয়েছে, যা, এবার তোরা সবাই না খেতে পেয়ে মর। যত চোর চোট্টার দল।

শিশুটি বাড়ী ফেরে। ভাঙা। সম্পূর্ণতঃ। ঘরের ঝকঝকে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নেহাত মায়ার ঝোঁকেই বাবার কাছে, মায়ের কাছে জানতে চায় না তার বাবা সত্যিই ঘুষ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছিল কিনা। কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়ালে তার চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনি চলকে ওঠেঃ তুই চোরের ছেলে।

 

...দর্পণ ঝুট না বোলে।

আর সে কি করে যেন বুঝে যায় সেকথা আর নাগরদোলার ঝাঁকুনির চোটে নীল হয়ে যায় য্যহরের মত। বারবার।

তো, সেই শিশুটিকে এখনই মেরে ফেলা প্রয়োজন।

নচেৎ, সে কিন্তু বড় হচ্ছে। হিস্যা বুঝে নেওয়ার সময় এলে সে কিন্তু এককণা জমিও ছাড়বে না। সব হিসাবকে বরাবর করে তবেই সে ছাড়বে। পরিণত হয়ে ওঠা একটা গোটা বেঁচে থাকা বরাবর সে কিন্তু পাষাণ বয়ে আসছে। মাটি জমে গেলে পাথর, আর তাই, মাটি দিয়ে বাঁধ, এই তো তার যন্ত্রণা ছেঁকে পাওয়া জানকারীর সমগ্র।

আর যে জানলই না মাটি কখনও কি নরম, কি শান্তির হতে পারে, তার কাছে কোমলতা আশা করা আর বালুকাবেলায় একদানা চিনি খুঁজে চলা কিন্তু সমার্থক। সমান অর্থহীন। সুতরাং সে কিন্তু হন্তব্য। বহুর স্বার্থে। এখনই।

 

 

 

 

 

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ    ©

 

 

ঠিকই করে রেখেছিলাম, নির্দিষ্ট করে বেছে লেখা দু-একটা লেখা আগে আপলোডাব, তারপর অন্য লেখালিখি। কিন্তু ম্যান প্রপোজেস, টাইম ডিসপোজেস... কি আর করা -

 

 

 

ফটো কার্টসিঃ  গুগল ইমেজেস 

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলিএখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 

 

No comments: