খুবই নিজস্ব কথা, সুতরাং দায় যেমন আমার একার, অধিকারও তেমন আমার একার (এহ, ছেলেরা এ’রকম পজেসিভ হয়! আগে জানতাম না। মাইরি বলছি।)
ভূমিকাঃ যদিও অনিন্দ্য ঘোষ লোকটা, তার অনেক রকম দোষের মধ্যে চূড়ান্ত অসামাজিক এবং স্বার্থপর, তবুও, ‘সামাজিক’ - এই ট্যাগ নিয়ে লেখালিখি, গদ্যের কথা বলছি, বাংলায় নেহাত কম হয়নি। শ্রী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দিদি সিরিজ থেকে সেই যে শুরু, সাহিত্যের বেড়াজাল টপকে, কোনোদিকে না তাকিয়ে, শুধুমাত্র ‘উত্তমকুমার’ - বলে ট্যাগানো আছে বলে চিনতে পারা মূর্তি অর্থাৎ মৃন্ময় ভিস-আ-ভিস চিন্ময় হয়ে, সোজা স্টুডিও চত্বরের মাঝমধ্যিখানে এসে, শ্রী অঞ্জন চৌধুরী'র বউ সিরিজ...
সমাজের, বিশেষতঃ নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত (এটা কালি-কলম নয়, জাষ্ট কল্পনা দিয়ে লেখা; উদাহরণস্বরূপ, পদ্মানদীর মাঝি – এই উপন্যাসটা, বাপের জম্মে বাংলাদেশ না গিয়েও, স্রেফ কলকাতায় বসে, আমি নির্ভুল বলে দিতে পারি যে, একটাও, রিপিট, একটাও ফুলটাইম পদ্মানদীর মাঝি পড়েনি) শ্রেণীর কথা চিত্রিত হয়েছে। এবং তা হয়েছে ইম্প্রেশনিস্টভাবে। লেখক এখানে আখ্যানের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ পাঠকের জন্য কোনো স্পেস নেই।
এক্সপ্রেশনিস্ট কাজ, যেখানে লেখক সর্বজ্ঞ, কিন্তু আখ্যানের সঙ্গে আদৌ জড়িত নন, এবং এই দূরত্ব বজায় রাখার দরুণ লেখার মধ্য দিয়ে নিজেরই তৈরী করা কি, কে, কোথায়, কবে, কেন প্রভৃতির উত্তরগুলো তৈরী করার চেষ্টা করেন। পাঠকের জন্য কোনো স্পেস, যথারীতি, এখানেও নেই।
সামাজিক - এই কাঁচের জানালার ওপারে যে ম্যানেক্যিনগুলো ঘুরছে, নিজ নিজ ধান্দায়; কোন শক্তি তাদেরকে ঘোরাচ্ছে, কোন ফোর্স তাদেরকে জিতিয়ে দিচ্ছে, কোন পাওয়ারের জন্য শুধু হার নয়, টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ; - সেই জায়গাগুলোতে নিওন নয়, অন্ততঃ লম্পোর আলোটুকু পড়ুক, চাওয়া বলতে আপাততঃ এটুকুই। পাঠকদের জন্য একটা স্পেস, লেখার মধ্যে ক্রিয়েট করা খুব সহজ ব্যাপার নয়। পাঠক আপাততঃ ইনভলভডই হোক, এনগেজড নাহয় পরেই হবে। সব লেখা এখন লিখে ফেললে পরের প্রজন্ম কি লিখবে!
...আর আমরা তো আশা নিয়ে ঘর করি, যে, বাংলায় সাহিত্যচর্চা বেঁচে থাকবে।
...আর ওহ, হ্যাঁ, ভালো কথা, যে, এটা, এখনই মনে পড়ে গেছে; - এখানে নম্বর দিয়ে যা যা লেখা হবে, সেগুলো যে কালের ক্রমানুযায়ী; সেটা; যিনি আশা করবেন, তিনি, এক্কেবারেই অন্যায্য কাজ করবেন, কারণ একটাই, শিরোনামেই ‘অনিন্দ্য ঘোষ’ শব্দটা, বা, ‘দ’টা বাদ দিয়ে আরো প্রপারলি অ্যান্ড ডেফিনিটলি বলা যায় যে, শবটা উল্লেখিত আছে; আর যেখানে লেখার জন্য নম্বর, সেখানে অনিন্দ্য ঘোষ থাকে না; আর কাল কি বলছেন মশাই, অনিন্দ্য ঘোষ কি যে সে লোক?! সে মহাকালকে গস্ত করবার তালে আছে। ওসব কাল-বালকে, সে, তার জাঙিয়ার বুকপকেটে রাখে।
১।
কথা হারিয়ে যায়, কথা ফিরেও আসে, এসে দ্যাখে, এক আমিই যা নেই, যেখানে আগে ছিলাম, অথবা, যেখানে আমার থাকার কথা ছিলো।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
২।
নিজের সম্মন্ধে একটা বাক্য বলতে বলা হলে, আমাকে বোধহয় এটাই বলতে হবে যে, ভরা বর্ষার দিনে, যখন কিনা তেমন গরম আর নেই, সম্বল বলতে সদ্য দাহের সতেজ স্মৃতি; শাওয়ার খারাপ থাকায়, দু’-দু’টো প্রমাণ মাপের বালতিতে, ঠান্ডা মেরে যাওয়া ছাদের ট্যাঙ্কের জলে, কাঁটা ভাঙার নাম করে, পর্যাপ্ত পরিমাণ গীজারের জল ভরভরন্ত মিশিয়ে, সেই যার নাম, স্নান নয়, চান; সেইটা আভাঙ করে সেরে, মুখে কোনো একটা চেনা গানের মৃদু গুণগুণানি; শুধু মাথাটুকু মুছে, শরীরময় উপুড়চুপুড় জল রেখে, লিভিংরুমে এসে, ইনভার্টার এসিটা টার্বো মোডে চালিয়ে, দু হাত মেলে দাঁড়ায়, দাঁড়িয়েই থাকে; দূর থেকে কারোর এ’রকম মনে হলে কিছুই বলার নেই, যে, মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে যেন বা।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
৩।
নিজের এই খর্বুটে চেহারার মধ্যে, আমি খুবই দীর্ঘ ব্যবধানে কিন্তু নিয়ম করেই একপ্রকার, টের পেয়েছি, যে, নিজের হাতে একটাও গাছ, এই পঞ্চাশ বছর অবধি, না পুঁতলেও, ভিখারির কাছে থাকা পরমের আশীর্বাদ যথা, একটা অরব, দূর থেকে দেখলে 'পর মনে হয়, লম্বাপানা; কিন্তু কাছে এলে ‘পর হয়তঃ বোঝা যায় যে, একটা একহারা, দীর্ঘকায় গাছকে, নিজের অন্দরে সচেতনে, সযতনে লালন করে আসছি আমি। ফলতঃ যা হয়, খাটো চেহারার আমি, বয়সের ভারে মাটো হয়েও গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে, তখন, শুধুই তখন, মনে হয়, আসলে কেউ কেউ ছোট হয় না, ছোটর মত দেখায়, নকলে আর আসলে তাকে ছোটর মত দেখায়, গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে কত বড়ো, দেখবে কতো মনোরম বড়ো তুমি; যদি জীবন মেনে, একটাও গাছ পুঁতে থাকো।
ভরদুপুরে যখন কিনা সূর্য মাথার ওপর, আর আমি ফাঁকা ধানজমির মাঝখানে, নিড়ানির পর; আমার ছায়া দীর্ঘতর হয়; আর, সবাইয়ের বিস্ময় মেলে। আমি ছাড়া আজ আর কেউ জানে না, আমার নয়, গাছেরই ছায়া দেখছে সবাই, এমনকি আমিও; অনেকদিন হতে হতে নিজের ছায়া দেখতে কেমন ভুলে গিয়েছি আমি, যেমন আমার ছায়া দেখে, সবাই ভুল করে, ভুলে যায় যে, এখন বিকেল মিশে যাচ্ছে সন্ধ্যের সাথে, যদিও এক আমিই সে বেঁটে মানুষ, যার ছায়া দীর্ঘতর হয়েই আছে, ধ্রুবনক্ষত্র যেমন। শঙ্খধ্বনি তাদের চমক অকারণ ভাঙায়। আসলে সব নশ্বরের জীবনে ঈশ্বরের ছায়া পড়বার কথা তো নয়; অনেকেই এখনো ভরা জীবনভর একটাও গাছ পোঁতেনি যে!
...আর ভাগ্যবান তো কম লোকেই হয়। নয়?
অনিন্দ্য ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস, ইন্টারনেট।
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
এভাবে বলে না
---------------
❝দুরকম বন্ধু আছে পৃথিবীতে; একজন
ভিজিটিং আওয়ারে আসে, ফিরে যায় সূর্যাস্তের আগে।
অন্যজন বসে থাকে হাসপাতালের গেটে,
অনন্ত দুঃখের রাত জাগে।❞
কবিরা অনেকদূর দেখতে পান, ঝাপসা সে দূরত্বের দিকে নজর বহাল রেখেই তাঁরা লিখে ফেলেন আপ্তবাক্য, যেখানে তাঁদের দূরদর্শিতার, সেখান থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতার সায় আছে।
আর এদিকে, আমি দ্বিতীয়জনই জানি না তো বহুস্বর! আমি যা জানি, সেটা হলো, আমার একটা আয়না আছে। তার বিম্বনে আমি আমার অসুস্থতা টের পাই; গরম পোশাক না থাকায় শীত কামড়ে ছিঁড়ে ফালাফালা হয়ে যাওয়া একজন যে কোনও কেউ, এদের যে পুল, মানে, গুদাম আছে, সেখান থেকে একজনকে নিয়ে অনায়াসেই অন্য আর একজনকে পাল্টে নিয়ে চালিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু চরিত্র পাল্টে নিলেই কি প্রেক্ষিত পাল্টে যায়?
আমি কোনও অসুস্থ বন্ধুকেও দেখতে হাসপাতালে যাই নি কোনও দিন, কি গোধূলির বিকেলে, কি নক্র নিশায় হাসপাতাল চত্বরে আমায় খুঁজে পাওয়ার খবর জানান দিতে পারে নি কেউ। তাই বলে আমি কি বন্ধুর অনারোগ্য অসুখের কথা শুনে, জেনে, নিঃশ্বাস ছেড়ে পাশবালিশ সমেত পাশ ফিরেছি, ডুবে গিয়েছি ঘুমের পরবর্তী ভঙ্গিতে বুঁদ? মানডেন এভিডেন্স বলতে সেই আয়নাকেই ডাকতে হবে আমায়; - আমারও শঙ্কা থাকে; ফুল একজন রোগীর কাছে বরাবরই বাড়তি মনে হয় আমার, শয্যালীন সে ফল-ভক্ত না হলে ফলও, এই পাটগাণিতিক নির্ণয়কালে একটা সময় আমি বুঝে যাই বেমক্কা ভিড় বাড়ালেই তার সুস্থতা এসে ধরা দেবে না। একটা সুস্থ পরিবেশে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্তর, সহজপাচ্য খাবার আর শান্তির বিশ্রামটুকু তার একান্ত দরকার। আমি ফলতঃ যাই না কোথাও, বান্ধব অসুস্থতার ভারে আমার অন্দর মেঘলা থাকে, আর আমি আমার ঈশ্বরের কাছে তার আরোগ্য কামনা করে যাই আন্তরিক। অনেক সময়ই দেখেছি, আমার সব প্রার্থনার দিকে মুচকি হেসে সে অসুস্থ বন্ধু বাড়ী ফিরেছে চারটে আলাদা কাঁধে চেপে, অশ্রুর কাছে যাই না, যেতে পারি না আমি, শেষ যাত্রায় তার নীরব সঙ্গী হয়ে যাই। বন্ধু আমার অন্দরে থেকে শুধোয়ঃ 'কি রে, যতক্ষণ জ্ঞান ছিল, এলি না একবারও! কিছুই কি বলার-শোনার ছিল না? তোর? আমার তো ছিল!'
এ প্রশ্নের উত্তর করতে পারে, এমন উত্তরবাজ কাউকেই আমি চিনি না, ফলে আমাকেও অনবরত হোঁচট খেয়ে যেতে হয়, কিছু শব্দ, যেগুলো কোনও একটা অর্থ বহে আনতে পারে, বলে হয়ে ওঠা হয় না আমার। শ্মশানবন্ধু সেজে বাল্যবন্ধু আরও একবারের জন্য ইলেকট্রিক চুল্লীর ধার থেকে ঘুরে আসতে থাকে। তার অবোধ সন্তান যখন পাঁচ কি দশ টাকার কয়েন ঠেকিয়ে পিতৃঋণ চুকিয়ে দেয় মূল্য ধরে, তখন আমি আমার অন্দরে ঘাপটি মেরে থাকা সদ্যমৃত বন্ধুকে জড়িয়ে ধরি। ধরে বলিঃ 'এবার বল্ কিছু! তোকে যে এরা শূন্যতে নস্যাৎ করে দেওয়ার সবরকম চেষ্টা করে চলেছে। আর আজ থেকে কিনা শালা তুই, আমার মধ্যে সেঁধিয়ে বাঁচতে চাইছিস!'
দিন যায়। একটা একরঙা কথোপকথন আমার মধ্যে পাহাড় হয়ে জমতে থাকে।
মজা হলো এই যে, ঘটনা বলুন কিংবা দুর্ঘটনা, পাকেচক্রে বেশ কয়েকবার আমাকে সেই তার সামনে থেকে ঘুরে আসতে হয়েছে, যাকে সবাই মৃত্যু বলে চেনে। আমি আমার মতো করে তার ধারেকাছে গিয়েছি, ফিরেওছি নিজের মতো করে। জানি একদিন ফেরা হবে না, বুড়ো বাঘ বন্দী হয়ে যাবে মৃত্যুর অমোঘ একটা চালেই, তবুও থেমে কি থাকা যায়? 'সম্ভব না' শুনলেই আমি, স্পষ্ট টের পেয়েছি, পুলকিত হয়ে উঠেছি, 'সম্ভাবনা' খুঁজে নেব বলে।
একদিন সব কটা সম্ভাব্য হাঁ-মুখ একসঙ্গে বন্ধ হবে। তা হবে তো হবে, ইন ফ্যাক্ট, হওয়াটাই তো দরকার, কিন্তু সেই দিনের জন্য আজকের দিনটাকে মরে যেতে দেওয়ার মানে, আমি অন্ততঃ, খুঁজে পাই নি কোনও দিন।
আমার স্বজন বিয়োগের দিনগুলোতে আমি কাউকেই বিশেষ খবর করি নি; অথচ কেউ কেউ, যারা বন্ধু, জেনেছে এবং জানলে, পিঠে চেনা হাতের ছোঁয়া পেয়েছি আমি। কিন্তু আমার মোটেও কোনও প্রত্যাশা ছিলো না। বিপদের রাতের যেটুকু জাগরণ, সে আমার একার, আয়ুর দড়িতে মৃত্যুর গিঁট গুণতে গুণতে পরের দিনের সূর্য দেখেছি আমি।
কোনও কোনও রাত্রি শেষ হয় নি, আমি নিজের মতো করে অন্ধকার মেখে, সেই সব রাত্রিকে জ্বালিয়ে দিতে গিয়েছি। শ্মশানে, মানুষের চুল-চামড়া পোড়ার গন্ধের সঙ্গে ঘি, অগরু, স্বস্তার আতর, কিছু নির্দিষ্ট গন্ধের ধূপ আর রজনীগন্ধার গন্ধ মিলেমিশে এক আজব মিশ্র গন্ধ তৈরী হয় যা বুকের ওপর চেপে বসলে শ্বাস চেপে আসার একখানি। আমি দুঃখের সর সরাতে গিয়ে প্রাণপণ হাত চালিয়ে সেই ভারী গন্ধটাকেই কিছুটা হালকা করতে পারি বড়জোর; এর পর থেকে আমার শোক আমারই থাকে, দিন এগোলে যার আদল ঝাপসা থেকে স্পষ্টতর হয়ে ওঠে।
লেখাটা শেষ হয়ে আসছে। ঝুপ করে কখন বলতে কখন ডবল দাঁড়ি পড়ে যাবে। এও কি একরকমের মৃত্যু নয়? মরুক গে, আমি দরকারী কথাটা, দরকারী বলে অবশ্য আমি মনে করে উঠতে পেরেছি, অন্য কারোর কাছে এটা সিম্পলি অদরকার মনে হতেই পারে... কথাটা হলো, আমি কিন্তু কোথাও কৈফিয়ত দিতে চাই নি, আমি এইরকম, সুতরাং অন্যরকমটা আমার কাছে মেলার না। অন্যরকম বলতে কবি শ্রী রণজিৎ দাশ, ওই ডগায় দেখুন, যেমন লিখেছেন। সেদিক দিয়ে ভাবলে আমার কোনও স্থানাঙ্কই, হেঃ হেঃ, নেই। একথা মনে হতেই এ যাবৎ আমি যত মৃত্যু মিছিল দেখেছি, তাদের কথা স্মরণ করতে চেষ্টা করি। বোরখেসের বয়ানানুযায়ী পবিত্র ক্রিয়াপদ - ওই স্মরণ, বিস্মরণ ইত্যাদি। খুব বুড়ো হাবড়া হলে অলগ বাত, আদারওয়াইজ, কাঁচা রক্তের মৃতর মিছিলে আমি বান্ধব-মুখ হদিশ করে উঠতে পেরেছি, সে এক-আধবার নয়। যদিও নিজের পরিচয়ের পরিসরে হলে আমার মনে পড়ে -
❝জনে জনে মিলে
চলেছে মিছিলে
আমারই যে দাঁড়িয়ে থাকা
আমি মিছিলে মিছিলেও একা❞
কেননা -
‹আমি অন্তরে-বাহিরে একা।›
আমার এই একাকিত্ববোধ নিয়ে আমায় চলতে হবে, যেরকম চলি আমি। অন্যথা নাচার আমি।
আমার এই অসামাজিকতা নিয়ে আমার নিকটজনদের চলতে হবে। আমি, এখানেও, অনন্যোপায়ই মাত্র।
অনিন্দ্য ঘোষ ©
তথ্যসূত্রঃ আপাততঃ অনিন্দ্য ঘোষ।
ফটোকার্টসিঃ ?!
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
যন্ত্র বদলে গেলেই যন্ত্রী কি ঠিক আগের জায়গায় থাকে? মন্ত্রের কচকচি নয় থাউক গা, ফর দ্য টাইম বিয়িং... এসব কিছুই না জানলেও এটুক জানি যে, বিভিন্ন পরিচিত মুখ, অপরিচিত পরিসরেই কোথাও বা ত্রিভঙ্গমুরারি হাসি, আবার কোথাও বা তোবড়ানো কান্না।
ইদানীং সবাই মওকা বুঝে ফটাফট সেল্ফি তোলে, ফটাক
সে-ই আপলোড করে জানা দেয়ঃ বেঁচে আছি।
ওরে গর্দভ, তুই যে ম্যাপড আপ হয়ে যাচ্ছিস,
তোর পুরো যাপন যে বিধৃত হয়ে যাচ্ছে! এরপর হাজারও সওয়াল করলেও তুই কি
আর কখনও ফিরে পাবি তোর নিজস্ব মুহূর্তগুলো?
প্রকৃত প্রস্তাবে, মানুষ, বিশেষ করে ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের মানুষ নামেই যৌথ একান্ন অন্অয়ার্ড-বর্তী
পরিবার ভেঙে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে ফ্রলিকড হল, এটাকে মুখ
থুবড়ে পড়ল বললেও খুব ক্ষেতি হত না, কারণকি, এ দেশের মানুষদের পার্সোনাল স্পেসের মর্ম উদ্ধার করতে আরও অনেককটা প্রজন্ম
লাগবে। তাতেও হলে হয়!
অনিন্দ্য
ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ ?!
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
কালীগঞ্জ, কসবা ম্যাসাকারের পর আজ, কিছুক্ষণ আগে রাজ্য জুড়ে বেরোনো অনেককটা মিছিলের একটার আগে থাকা অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র বলে ফেললেনঃ ...আমার-আপনার ঘরের মেয়েরা রেপড হলে ওদের ছেঁড়া যায়! (স্মৃতি থেকে লিখছি, তাই কোট নেই, কেননা, আমার স্মৃতি কিনা; তবে ছেঁড়া যায় শব্দ-বন্ধটা ছিলো)
কি বলতে চাইলেন শ্রীলেখাঃ ...ওদের (বাল) ছেঁড়া যায়! শব্দের এই ব্যবহারটা তাঁর আবিস্কৃত নয়, বরং দীর্ঘদিনের), আসল শব্দটা উধাও করে দিয়ে একটা এক্সপ্রেশন, যেটার প্রকৃতার্থঃ ...ওদের কিছুই যায়-আসে না।
কাট টুঃ
ভুলক্রমে একবার এক কবিতা-পাঠের আসরে ঢুকে পড়েছি। একজন ইয়ং অ্যাডাল্ট কবি মানুষের হীন, বেঁচে থাকার ইতরধর্মীতার কোনও একটা দিক নিয়ে একটি কবিতা পড়ে ওঠার পর এক অভিজ্ঞ, বর্ষীয়ান কবি কবিতাটির ছন্দ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। ভুল লিখলাম, ছন্দহীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। তার পর যেটা হলো, তাকে একটা প্রসঙ্গ ঘিরে কূট যুক্তির তর্কই বলা চলে। একটা সময় হাউজ আমার মত চাইল। আমি আক্ষরিক বিপন্নতায় চারপাশ দেখলাম; - প্রায় সবাই-ই কবি, আর কবিরা যে কি খায় (বরং কি খায় না), কি যে লেখে...
আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন এক প্রবীণ, স্বনামধন্য কবিঃ আহা, ও’ বেচারীকে আবার ব্যতিব্যস্ত করে তুলছ কেন! একটা কবিতা, যেটা মানুষের যন্ত্রণার কথা বলছে, সেখানে ছন্দ খুঁজতে যাওয়া বেকার, যন্ত্রণার দিনগুলোতে মানুষের কোন্ ছন্দ বজায় থাকে যে তুমি (সেই ছন্দ-সন্ধানী কবিকে উদ্দেশ্য করে) কবিতায় ছন্দ খুঁজতে চাইছ? কবিতার হয়ে ওঠাটুকুই এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট। এবং সেটা তো যথেষ্টই হয়েছে এখানে।
কাট থ্রিঃ
সেই প্রবীণ, স্বনামধন্য কবি ভুল বলেছিলেন না ঠিক, আমি সেই তর্কে যেতে চাই না। আমাকে অ্যাট লিষ্ট সেদিন বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন, এ’টুকু স্বীকার করে বলতে চাই, এখন আমার তাঁকে মনে পড়ছে। মানুষ যখন কথা বলে, তা’ সে’ যে কোনও কথাই হোক না কেন, যে কোনও প্রসঙ্গেই হোক না কেন, সে বেসিক্যালি একটা ছবি দিতে চায়। কথোপকথনের মূল উদ্দেশ্য এ’টাই।
এই যে আমি অ্যাত্তো ঊর্ধ্ব কমা টমা দিয়ে-টিয়ে লিখছি, না লিখলে কি সংবিত্তি হত না? ঠিকই হত। এ’টাও তো দ্যাখার যে, মানুষের বোঝার ইচ্ছে আদৌ আছে কিনা? কিংবা বোঝার ক্ষমতা আর বাকি কিছু আছে কিনা?
আমার বারংবার এইটা মনে হয়, জীবকূলের মধ্যে উন্নততম জীব মানুষের উন্নয়নের (উরি ফাদার!) একটা অন্যতম নিদর্শন এই ভার্বাল কমিউনিকেশন। আমরা, নাহ, ঠিক আমরা নই, বৈয়াকরণিকরা এর মধ্যে শ্লীল-অশ্লীলের প্যাঁচাল পেড়ে এ’টাকে অকারণ ক্লাশকর, তথা ক্লেশকর বানিয়ে তুলেছেন। হ্যাঁ, অশ্লীল শব্দ সে’ অর্থে আছে ঠিকই, তবে সে’টা অঙ্গুলিমেয় এবং একহাতের। বাকী অপশব্দের ব্যুৎপত্তি জিজ্ঞাসা করলে ‘পর তাঁরা, তাঁদের গুরুকূলের দিকে আঙুল দেখাবেন। মানুষের গোপনাঙ্গ নিয়ে যে সব শব্দ অপশব্দ হিসেবে ট্যাবুড হয়ে আছে, সে’গুলোর ব্যুৎপত্তি জিজ্ঞাসা করলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মুখ নয়, পদদ্বয় হাঁ হয়ে যাবে তাঁদের। সব ভাষার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে অন্ততঃ, কিছু শব্দের, কিছু এক্সপ্রেশনের বাঁধন এখনই খুলে দেওয়া দরকার। তাদের অশ্লীল নামক খাঁচা থেকে মুক্তি দেওয়া দরকার। তাদের সোশ্যাল স্টেটাস উন্নত করতে যদিও না পারি, স্ল্যাং থেকে আরগটে চালান করা একান্ত দরকার। আর এ’টা তো বোধ করি সবারই জানা, যে, শ্রাদ্ধবাসরের মতো ফর্ম্যাল জায়গায় যে স্তরের ভাষা প্রয়োগ করা হয়, বিক্ষোভ জানানোর সময় ঠিক সমস্তরীয় ভাষা ব্যবহার করা যায় না, এবং উচিতও নয় সে’টা।
আর যদি খাঁচা খুলে পাখি উড়িয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে? - নইলে মানুষের সংবিত্তির প্রবাহের একটা দিক থমকে যাবে এবং সে’টা সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট ছাড়া আর কিছু না।
নাহ্, শ্রীময়ী শ্রীলেখা মিত্রের কথার মধ্যে কোনও শব্দে আমি অন্ততঃ কোনও দোষ খুঁজে পাই নি।
কালীগঞ্জ প্রসঙ্গ?
কসবা প্রসঙ্গ?
কি হবে একজন কমোনারের মত শুনে? আমাদের পূর্বসূরীদের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছিল, তা’ সে’ অহিংস হোক, বা সহিংস, একটা সার্টেন অবজেক্টিভ নিয়ে অ্যাকশনে যেতে হয়েছিল, পোতিবাদের মিছিল মারিয়ে নয়। যদিও দেখি, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদেও এই রাজ্যের শাসকদলের জট পাকানো ভয়, এমনকি সে’টা যখন তাঁদের মত এবং প্রতিবাদীদের মত সম্পৃক্ত হয়ে আছে, সেই তখনও!
কিছুই পাল্টাতে যখন আল্টিমেটলি পারবই না, তখন তো এটা মেনে নিতেই হবে যে, এই রাজ্যের এই সময়ের সব বয়সের সব মেয়েরা ধর্ষণ এবং/অথবা হত্যার জন্য বলীপ্রদত্ত। তারা রেপড অ্যান্ড/অর মার্ডারড হওয়ার জন্যই জন্মেছে। তাহলে তো আর এত ক্ষোভ জন্মায় না, রবিবারের সন্ধ্যে... দুপুরের পাঁঠা/মুরগীর ঢেকুরের সঙ্গে কফিতে-চিপসে আর ফাইভ স্টার ইনভার্টেড এসির নীরব সংবাহনে ওএলইডি টেলিভিশনের খেলার ফোরকে টেলিকাস্টে অথবা নিরাভরণ বান্ধব-আড্ডায় দিব্য কেটে যায়...
অনিন্দ্য
ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ ?!
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
এদান্কে অকারণই রাত জাগি। মনে হয় ঘুমিয়ে পড়লেই কিছু একটা, যা হয়তঃ পরম মূল্যবান, হারিয়ে যাবে অজান্তে। সেই যে পিচ্চিকালে শুনেছিলাম না, মায়ের কোল থেকে সন্তানকে নিয়ে যেতে গেলেও যমদূতদের জাদুটোনার দরকার পড়ে, যার বশে মায়ের চোখে তন্দ্রাঘোর এঁটে যাওয়া লাগে, অনেকটা সের'ম।
সারারাত জেগে আমি শুধু বেমানান, আলটপকা শব্দ শুনে যাই। কোনওটায় চমকে উঠি, কোনওটা আবার জলে খোলামকুচি পড়বার মতও না। অজস্র শব্দ আমার অন্দরে প্রবেশ করে হর রাতে; আমার ভিতরে আগে যে শব্দ কোলাহল করত, আমোদে মাতত, কান্নায় আপ্লুত হত, তাদের সক্কলকে সরিয়ে দিয়ে কায়েমী হয়ে বসে কিছু অর্থহীন শব্দ। জানি, এগুলোই একদিন নিশিডাক দেবে, আমি পথে নামব, জানি না নিরস্ত্র কিনা। যদি হইও তা, সেখানে গৌরবের মেহেক আছে, কেননা, আমি একা।
পথে নামা মানেই কিন্তু আন্তরিক শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করার দায় এসে ঘাড় কামড়ে ধরে। আর তায় রাত, ধুনোর গন্ধ'র মত। আলেয়াও এসময় ভালবাসার ভেক ধরে, মুগ্ধ পথিক আলোর সে ইশারার দিকে ছুটে গেলেই পথহারা।
...মনে আছে, একবার, তখন যুবকবেলা, বর্ষার তুমুলে আটকা পড়েছিলাম নদী ঘেরা লোনা লাট অঞ্চলে। মারণ ব্যাধির মরণকামড় থেকে এঁটেল মাটির বাঁধ সবই মধ্যযামের কড়িচালার খেলা। হ্যাজাক, চার সেলের টর্চ নিয়ে অভ্যস্ত হাতগুলো সব বাঁধ মেরামতিতে ব্যস্ত। আমি ভাবছিলাম এই জলের তোড়ে কি কোনও স্বেচ্ছাচারীর শব দেখতে পাব? পাওয়া যায় না, স্রোতের তীব্রতা জুড়ে ঘুর্ণি, সেইসব জলজ নাগরদোলায় মানুষের ওঠা নয়, শুধু পতনের দেখা মেলে। আর আনাচ-কানাচ জুড়ে উদগ্র সরীসৃপ, তার বিষের তামামটুকু নিয়ে।
আগামীকাল হয়তঃ আবারও একটা বাঁধ ভাঙবে। আরও অনেক পরিবার ভেসে যাবে। তা যাক, ন্যাচারাল হোক বা ম্যানমেইড, সে আবার কিসের ডিজাস্টার যদি সে কিছু সাধারণ, শুধু বেঁচে থাকতে চাওয়া মানুষদের উপড়ে দিতে না পারে, ভাসাতে না পারে! মানুষের পরমাই নিয়ে মাদারীর খেলা দেখাতে না পারে!
আমি এও জানতে চাই না, আর কি এবং আর কত পেলে ক্যালামিটি-মেকারদের খাঁই, আখির, মিটবে।
আজকাল আমার একটা অন্য কথা মনে হয়; - রাম চোর আর শ্যাম চোর - এই চোর চোর খেলার চাপানউতোরের মাঝে একটি শিশু...
ধরা যাক, তার বয়স নয় কি দশ, এক প্রতিবেশী তাকে বলে দেয়ঃ জানিস তো, তোর বাবার চাকরি গেছে। কেন বল তো? কারণ, তোর বাবা ঘুষ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছিল বলে। ঠিক হয়েছে, যা, এবার তোরা সবাই না খেতে পেয়ে মর। যত চোর চোট্টার দল।
শিশুটি বাড়ী ফেরে। ভাঙা। সম্পূর্ণতঃ। ঘরের ঝকঝকে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নেহাত মায়ার ঝোঁকেই বাবার কাছে, মায়ের কাছে জানতে চায় না তার বাবা সত্যিই ঘুষ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছিল কিনা। কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়ালে তার চারপাশ থেকে প্রতিধ্বনি চলকে ওঠেঃ তুই চোরের ছেলে।
...দর্পণ ঝুট না বোলে।
আর সে কি করে যেন বুঝে যায় সেকথা আর নাগরদোলার ঝাঁকুনির চোটে নীল হয়ে যায় য্যহরের মত। বারবার।
তো, সেই শিশুটিকে এখনই মেরে ফেলা প্রয়োজন।
নচেৎ, সে কিন্তু বড় হচ্ছে। হিস্যা বুঝে নেওয়ার সময় এলে সে কিন্তু এককণা জমিও ছাড়বে না। সব হিসাবকে বরাবর করে তবেই সে ছাড়বে। পরিণত হয়ে ওঠা একটা গোটা বেঁচে থাকা বরাবর সে কিন্তু পাষাণ বয়ে আসছে। মাটি জমে গেলে পাথর, আর তাই, মাটি দিয়ে বাঁধ, এই তো তার যন্ত্রণা ছেঁকে পাওয়া জানকারীর সমগ্র।
আর যে জানলই না মাটি কখনও কি নরম, কি শান্তির হতে পারে, তার কাছে কোমলতা আশা করা আর বালুকাবেলায় একদানা চিনি খুঁজে চলা কিন্তু সমার্থক। সমান অর্থহীন। সুতরাং সে কিন্তু হন্তব্য। বহুর স্বার্থে। এখনই।
অনিন্দ্য
ঘোষ ©
ফটোকার্টসিঃ না থাক, অন্যত্র, মানে এই ব্লগেই একবার দিয়েছি। সেখানে এই লেখাটা আলাদা করে লেখা ছিল। অপ্রয়োজনীয় তা। তাই তাকে খোঁয়াড়ে ঢোকানো হলো। তবে ছবি থাক ‘খন?
ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি। এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে।
No comments:
Post a Comment