Friday, October 20, 2023

ছাইয়ের নীচে থেকে ভেসে আসা গান, শ্যাওলা যথা,

 

ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে

আমার নামটি লিখো-- তোমার

মনের মন্দিরে।

আমার পরানে যে গান বাজিছে

তাহার তালটি শিখো-- তোমার

চরণমঞ্জীরে॥

 

 

আমার বাড়ীর সবচেয়ে কাছের সর্বজনীন পূজা প্যান্ডেলে বিকেলে গানটা বাজছিলো। এ বছরের পূজাটাও হিমালয়বিহীন চলে গেলো বলে এমনিতেই মনের তারটা টানে বাঁধা ছিলো; রবীন্দ্র-গানে ওই সখী শুনেই ঝাঁট জ্বলে গেলো।

 

গানটা কিন্তু প্রেমের গান হিসাবে, পরে গীতবিতান পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, মোটেও খারাপ নয়; বিশেষতঃ আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে, একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার, ললাটচন্দনে। যদিও বিবাহিত (বিবাহিতা নয়) মেয়েদের সিঁদুর - আলতা ইত্যাদি প্রভৃতিতে আমার ডাহা রাগ আছে; তবুও 'শুভ-সিন্দুরে' শব্দে শুভ শব্দটার প্রয়োগ, অন্ততঃ সেসময়ে, জাষ্ট আলফট, ইন স্পাইট অফ। কিন্তু যতবার শালা সখী শুনি, ততোবার মনে হচ্ছিলো, মরার পর রেলিক্স হিসেবে নয়, বুড়ো জ্যান্ত থাকাকালীনই দাড়ি ধরে মারো টান, কালো জোব্বা  হবে খান খান (তবে কি সলমন বা শাহরুখ খান? এহ, ইভন ডগশিট ইz নো ওর্স দ্যান দেম) হওয়া উচিত ছিলো। সাধে কি বলি, দাদু ভাবনায় নয়, ভাষায় দূরত্ব বাড়িয়েছে প্রচুর; বড়ো দুঃখে বলি।

 

একটু আগে, আজ আমি একা এবং এরকম থাকবে আরো হপ্তা দুয়েক, সন্ধ্যের চায়ের খালি কাপটা সিঙ্কে ধুয়ে, হেঁশেলের গ্র‍্যানাইটে থুয়ে, রাতের সেমি কাপ চা টা ফ্লাস্ক থেকে ঢালতে যাবো, এমন সময়ে, বানচোত আসবি তো আস, শালার একই প্যান্ডেল থেকে অজানা সাম্প্রতিক কোনো বাংলা সিনেমার গানের একটা বাক্য এসে, নাহ, কর্ণে পশিল নহে, মরমে বিঁধিলঃ তোমার আমার ভালোবাসার রস জমে হলো ক্ষীর...

ভালোবাসার রস? ফর ফাক সেক, হোয়াট দ্য ফাক দিz ফাকারস স্যে! বলে কি, অ্যাঁ? ভালোবাসার রস জমে, আজ ক্ষীর হয়ে গেলে কালকের দিনটা কিভাবে যৌথ কাটাবি রে, বোকাচোদারা?

 

মনে পড়লো, ২৯ সেপ্টেম্বর সর্বশ্রী হেমন্ত মুখোপাধ্যায় মৃত্যুর কয়েকদিন আগে রেকর্ড করেছিলেনঃ যখন আমি নেই, কি করে একলা থাকবে...

ভালোবাসার স্মৃতি সহায় করে যেখানে বাঁচা দায়, এই সতীনন্দন আর সতীনন্দিনীতে মিলে একটা দিনেই এমন ভালোবাসা বেসে নিলে যে রস জমিয়ে তবে ছাড়লে!

 

চায়ে চুমুক দিতে ঘরে ঢুকে দরজাটা একটা সপাট লাথে বন্ধ করতে যাবো, মনে হলো, এটাও কি ভাষাগত দূরত্ব নয়?

 

আমার মনের মোহের মাধুরী, মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার অঙ্গসৌরভে। অঙ্গ? হোয়াট দ্য ফাকিং হেল দ্যাট ফাকিং ওয়র্ড মাইট দেয়ার বি টু কনোট আ সার্টেন ফাক? নারী অঙ্গ কাকে বলে দাদু জানতো না? অন্ততঃ খান দশেক মহিলাকে 'চেটে, চুষে, চিবিয়ে, গিলে'! সে খেয়েছে, বেশ করেছে, সো ফাকিং হোয়াট ইফ হি উড হ্যাভ ফাকড আপ অ্যানাদার লিটল বিগ ট্যোয়াট? যাদের ফাটছে, তাদের ফাটছে, কেনকি, তাদের দ্বারা ওসব হওয়ার নয় বলে। এমনি এমনি কি শ্রী প্রেমেন্দ্র মিত্র, পরম শ্রদ্ধাতব্য লিখেছিলেন, শরীরখানা গড়ো, আগে শরীর গড়ো, নইলে পরে সব ভন্ডুল আর যা কিছু করো।

 

আর যদি দাদু বউ ছাড়া কোনো মেয়েকে নাও খেতো, তাহলেও বেশ করতো।

 

কি হলো, হঠা করে এখানে ব্রেশট, এহ, সরি, স্ববিরোধীতা কেন! স্ববিরোধীতা এই কারণে যে, দাদু কি খেয়েছে আর কি খায়নি, সেটা অনিন্দ্য ঘোষের, এই অনিন্দ্য ঘোষের শুধু নয়, কোনো সুধীর ভাই অনিন্দ্য ঘোষেরই সেটা দেখার নয়। অ্যান অথর ইজ নট পার্ট অফ হিজ টেক্সট। কেস ক্লোজড। ফিরে যেতে হবে, মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার অঙ্গসৌরভে - তে। তার আর পর নেই। ওখানেই ফুলস্টপ, কারণ তার পরে আর কোনো ঠিকানাও নেই।

 

তো, নারী অঙ্গ... সৌরভ... সৌরভ গাঙ্গুলি নয়। যে। নারী। অঙ্গ। থেকে। সুরভি। ভেসে। আসে। কেউ কি কোনো ফরসা, আর্খেন্তিনিয়ান ক্লিভেজ দেখতে পেয়ে গেলেন? দেখে থাকলে, ভুল দেখেননি; আর যাঁরা শুভ্র সমুজ্জ্বলা, বুকভরা মধু, বাংলার বধূকে দেখলেন, মানে, বধুর মুখখানি নয়, মৌচাকের কানকি দেখলেন মনশ্চক্ষে, সেই তাঁরাও ভুল না। সব পুরুষ পুরুষ হয়েছে ভায়া ওই জায়গা হয়ে; বেঁচে থাকা ইস্তক শীতলতাও পাবে সে সেখানে। এখানে ভালোবাসার রস মারিয়ে ওসব ক্ষীর টির হয় না।

 

নাহ, ভাষাগত দূরত্ব থাকলেও, কলকাতা আছে কলকাতাতেই, আমার শহর যথা, দাদুমণি আছে জাদুমণিতেই, আমার রবীন্দ্রনাথ। যে রবীন্দ্রনাথ কোনো ফিকশনাল গদ্য লেখেনি। যা লেখা হয়েছে সেটা, সেগুলো সবই, ওই, ইয়ে, কলমগুলোকে সচল রাখার জন্য।

 

পাড়ার ওই পেঁচোয় পাওয়া মাইকওয়ালা প্যান্ডেলে গিয়ে টুক করে মা দুগ্গাকে দেখে আসবো। এসে কি এইরকম গাইবোঃ

 

কি ঠাউর দ্যাকলাম চাচা

কি দুগ্গ্যি দ্যাকলাম চাচা

একবেটি সিংহি চড়ে

ওসুরের টিকি ধরে

গলাতে সাপ জড়ায়ে

বুকে মারে খোঁচা

উঃ কি ঠাউর দ্যাকলাম চাচা...

 

আচ্ছা, এটা কি আগে কোনোদিন আমি লিখেছি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের রেকর্ড করা শেষ গানের প্রথম লাইনটা? বলিনি না? বলেছি? ওহ, তাহলে থাক। আর একবার লিখে দিতে হবে?

 

আর একটাই প্রশ্ন আমার

শ্মশানেতে কতো লোক হবে

 

২৬ তারিখ গানটা রেকর্ডেড হয়, আর ঊনত্রিশ তারিখ বেলভিউ (বেইয়েভ্যু) নার্সিংহোম থেকে ক্যাওড়াতলা শ্মশান অবধি সে কি ভিড়! আমার বাবা, যেমন চিরকেলে চাঁদকপালে, দু চোখ বেয়ে জলের ধারা (ঠাকুরদা মারা যেতে নিজের কেলাস টু'র ছেলের সঙ্গে হাসি-মস্করা করছিলো), হাতে ইয়া মোটা গোড়ের মালা, লরি (তখন কোথায় মরচুয়ারি এসি ভ্যান!) থেকে মহানায়ক উত্তম কুমারের ভাই তরুণ কুমার মালাটা নিয়ে তাঁর বুক থেকে গলা অবধি টেনে দিয়ে, একহাতে মুখ চেপে লরি থেকে নেমে গেলেন, লরির অন্য ধারে, ডালায় হেলান দিয়ে বসে নীরবে কেঁদে যাচ্ছেন অনুপ কুমার, দৃষ্টি আকাশে, তাঁর একটা হাত আলগোছে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পা ছুঁয়ে আছে। 

লরি তখন গড়িয়াহাট মোড়ের সামান্য আগে...

 

ঈশ্বরের দেওয়া কন্ঠটা নশ্বর ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছে। লোক হবে না!

 

 

 

লেখাটার নামকরণের অসংলগ্নতা হয়তঃ সবাইকে ঈষ বিরক্ত করে ছাড়বে; অনেকেই ভাবতে বসবেন যে পেটে ভাত নেই, চ্যাঁটে সিঁদুর মাফিক, পদ্য লিখতে পারার অক্ষমতা ষোলো আনার ওপর আঠেরো আনা, কিন্তু ঘুমিয়ে জেগে থাকা ইচ্ছেটুকুর কারণেই এসব নাঙছেনালী। নাহ, এটা কোনো ককেটিশ ব্যাপার-স্যাপার নয়। নিয়ম নয়, তবুও একটা অংশের জন্য ছাত্রবন্ধু দিতে হচ্ছে আমায়। ফেসিলিটেট করতে হচ্ছে, যা কিনা অবশ্যই ডোন্টস এর ঘরে পড়ে। তা আমার লাইফটাই তো পোকা আর পোকার ঘর মারার উদ্দেশ্যেই রয়েছে; আর কোনও কারণ তো দেখি না, এই বেঁচে থাকার; এনিওয়ে, পৃথিবীর সব সৃষ্টিই আদতে ছাইচাপা, ওই প্রাইমাল ছাই সরালে কি হবে? সবসময় যে অমূল্য রতনই উঠবে, সে গ্যারান্টি (পেয়ে গেলে পর ওয়ার‍্যান্টি) কেউ দেবে না; কিন্তু ওই, আশায় মরে চাষা, মরতে মরতে একদিন গেয়ে ওঠেঃ আশার আশা ভবের আশা, আসা মাত্র হলো (আমার পাঠ একটু আলাদাঃ আশার আসা ভবের আশা, আসা মাত্র হলো) করতে করতে ছাই সরিয়ে চলে। কলকাতার বুকে একদশকও হবে কি; - বোধহয় নয়; র‍্যাগ-পিকারদের তো সকলেই দেখেছেন; এই সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের ব্রেকার তৈরীর আগে, সেই র‍্যাগ-পিকারদের মতো, সেই স্ক্যাভেঞ্জারদের মতো, ছাই, নিয়তি যেন বা, ঘেঁটেই দিন গুজরান হবে তার। সে হোক, ছাই সে ঘাঁটে, কেননা, বেঁচে আছে, বেঁচে নিচ্ছে না সে; হাতে ছাইই লাগা সার হয়; আর লটারিভাগ্য প্রসঙ্গে চাঁদকপালে হলে? কি আর, রতন মিলবে। বাকীরা বলে উঠবেঃ রতনে রতন চেনে, যেমন কিনা, শ্যোর আর কচু। দুধ জাল দিতে দিতে গাঢ় হয়ে গেলে যেমন ক্ষীর, মানুষের ঈর্ষার দুধ জমলে পর, সে দার্শনিকঃ চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে, আমরা ভেবে করবো কি...

 

তো, রতনের কাঙ্খা, সে কি আমারও কম, ভেবেছেন? ছাই ঘাঁটতে ঘাঁটতেই তো পেয়েছি, কিছু গান, ভালোবাসা, সমবেদনা, সম্বল এই শুধু, আর কিছু না, তারই সাধনায়, সুখে দুখে সাথী হয়ে কাঁদি ও হাসি, আসে ঝড় বৈশাখী, সর্বনাশী, আমি আসি, বা ইচ্ছে করে সবার দু-হাত ভরে উঠুক, সবার রান্নাঘরে ভাতের গন্ধ ছুটুক, ফুলের চেয়ে ভাতের গন্ধ ইচ্ছে করে, আমার দেশে, সবার দেশে, সবার ঘরে, কিংবা ভূতুড়ে গাছের ছায়া, ফেলে আসা মোহমায়া ঝাঁক বাধে জগায়ের চোখে (আমার পাঠঃ চাক বাঁধে জগায়ের চোখে), জগাই তবুও হাসে, নেশা করে অবকাশে, তারা গুণে আনন্দে শোকে, হয়ত মনের কোনে জীবনের সুদ গোনে বেহিসাবী জীবিনের হাতে গোনা টাকা আনা পাই, কখনো হিংসে হয়, অবকাশে অসময়, আমিও কি জগাই হতে পারি! আমিও তো তারা গুণি, আকাশকে কাছে টানি, আমিও কি দিতে পারি পাড়ি? আসলে তো আমি লোভী, মন-ধনে থাকা কবি, পারব না হতে আমি, হেল্পার মুক্ত জগাই, তবে মুক্তির আগে এনসিওর করতে হবে, মঙ্গল গ্রহে জরিপ চলছে খুব, শুনছি সেখানে ঘরবাড়ী তোলা হবে, জল্পনা ছোটে পশ্চিম থেকে পূব, গ্রাম থেকে গ্রামে ডাক্তার যাবে কবে? আর তার জন্য পথে এবার নামো সাথী, পথেই হবে পথ চেনা; কেননা, আমরা পরাজয় মানবো না, তোমার মাটির একটি কণাও ছাড়বো না, আমরা পাঁজর দিয়ে দুর্গ ঘাঁটি গড়তে জানি, তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। মনে পড়ে, বিবেকানন্দ'র বলা একটা কথাঃ যতদিন ভারতবর্ষের একটা রাস্তার কুকুরও অভুক্ত থাকবে...

হায় স্বামীজী, আমরা তো এইটা ভাবি, কার ঘরে প্রদীপ জ্বলেনি, কার বাছার অন্ন মেলেনি, কার নেই আশ্রয় এ বর্ষায়, দিন কাটে ভাগ্যের ভরসায়, তুমি হও একজন তাদেরই, কাঁধে আজ তার ভার তুলে নাও। সবকিছুকে তার নিজস্ব জায়গায় রেখে, তবে না ছুটির ভাবনাঃ তবুও তোমায় বলি, ইদুঁরদৌড়ের গলি, চিনে হরদম, ইন্টারনেটে ঢুকে, খুঁজছি কপাল ঠুকে, ছুটি ডট কম। কিন্তু তাই কি? আসলে ছুটি ডট কম-এর ডোম্যেইনটা জেনে রাখতে চাইছি, তার আগে তো দেখতে হবেঃ কতো জানলার কাছে রাখা পোস্টার, কতো কথা, কতো খিদে, কতো চিকার, কতো জানলার কাছে কাতারে কাতার, মানুষ জমেছে, দাবী গরাদ ভাঙার, ভাঙে যেন জানলার গরাদ সবার।

 

আচ্ছা, গরাদ ভাঙলে কি হবে? ঠিক কি হবে? কি মুশকিল, যে ইস্পাতের বিজ্ঞাপন করে বিরাট কোহলি, কিংবা আর একটার সৌরভ গাঙ্গুলী (আচ্ছা, এরা দুজন, জিমি অ্যান্ডারসন নামে কোনো একটা ছেলেকে চেনে?), সেইসব শক্ত ইস্পাত উপড়ে গেলে মড়মড় করে উঠবে কংক্রিটের ঘর, তার কড়ি-বরগা, দরজা-জানলার ফিক্সারের পেরেকগুলো ককিয়ে কেঁদে উঠবে, আর সেই ক্রন্দনধ্বনি চিনিয়ে দেবে জ্যোতির্ময়কে যে, ঠিক কোন্‌ দুয়ারে লাথ মেরে ভেঙে ঢুকে গুটিয়ে থাকা আনহ্যাপী সোলকে, তার ওন ওয়ে (কোর্স বলাই ভালো, অনেক ব্যাপকতা নিজে থেকে উঠে আসে) ভুলিয়ে, কারণ, সে-ই তো প্রকৃত বন্ধু, তার বন্ধুতা যে পেয়েছে, সে-ই জানে, দোস্ত বিপদে পড়লে ওসব কোনো চাবি-টাবির ধার সে ধারে না, জাষ্ট একটা সপাট লাথে তালা-চাবি সমেত দুয়ারটা প্রথমে সে ভাঙবে, ঘরে ঢুকবে, ক্যাঁক্‌ করে ঘাড়টা ধরবে, তারপর বলবেঃ কি রে বোকাচোদা, প্রবলেমটা বলতে ঠোঁটে ব্যথা লাগছিলো, তাই না, রে? চল্‌। কোথায়, কেন, কতদিনের জন্য এসব বালের কথা পুছবার সময়ই মিলবে না, সে আমারে যথা নিয়েই যাবে, নিয়ে গিয়ে, ঠিকঠাক করে দিয়ে, হ্যাঁ, তারপর, ফেরত পাঠাবে, ওয়ান পিস্‌, আন্‌টাচড্‌; পাঠাবে সেই সাতরাজার ধন এক মাণিক হারানো রতন সমেত; সেই সে রতন, সেই দিবসে হারানো রতন, যা সে ছাই ঘেঁটে পেয়েছিলো, মোটেও ত্যাগাতে চায়নি, বুকে করে আগলে রেখে এসেছে পাওয়া ইস্তক, সেটাকে আঁধার রাতে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, ফিরিয়ে সেওয়া যায় তার অন্দরে, দিনের আলোকে নিজের চোখের আলো ভেবে যে রতন সে দেখে এসেছে চোখের বাহিরে, সেই হারিয়ে ফিরে পাওয়া সেই রতনকে সে আজ অন্তরে দেখবে, যখন কিনা বাহিরে রাত্রি, গাঢ় ত্বমসা, আলোক নাহি রে। দেখতে পেলেই একটিবার, ফিরে পাওয়াটা যে ঘটে গেছে, সেটা, নিশ্চিত বোঝার পর বলে উঠবেঃ তোমারই হোক জয়। এই জয়ধ্বনি, তারও তো নিজের মতো করে একটা সুর আছে; - তারের বীণা ভেঙে গেছে তো কি, হৃদয়-বীণায় গাহি রে, সেই সুরেই গাইছে সে; গাইছে, কেননা, তখন, তার অন্দরে-বাহিরে, আনন্দধারা বহিছে ভুবনে। তখন তার ডাকছে আকাশ, ডাকছে বাতাস, ডাকছে মাঠের সবুজ ঘাস; এই এতো আলো, এতো আকাশ সে আগে দেখেনি, তার চোখে পড়েনি, জ্যোতির্ময়ের গমনপথের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মানডেন রাত্রিকে তুড়িতে সরিয়ে, সে আবারও গাইবেঃ আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলোয় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন, বলাই বাড়তি যে সে চিহ্ন জ্যোতির্ময়ের, তার ফিরতিপথের। কেননা, তখন সে জেনে গেছে তার পরবর্তী যাওয়া কোন পথে হবে। হাতে তখনো মুঠো করে ধরে রাখা রতনটাকে তার অতিরিক্ত মনে হয়, জ্যোতির্ময়ের আসাটুকু, দরোজা ভাঙাটুকু যেন তার তৃতীয় নয়ন খুলে দিয়েছে, সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, যে সুখে দুখে অবিকার, সেই নিত্য উদারের উদাসী রাঙা পায়ের কাছে, তারকা, রবি, শশী তার খেলনা যেন বা, পড়িয়া আছে রাশি রাশি। তার শেষ হওয়ার প্রতি আগ্রহ জাগে, স্বার্থপর জাগরণ সেটা, কারণ সে বোঝে, সেই তথাকথিত শেষ মানে জাষ্ট একটা রাইডের প্রান্তিক ষ্টেশন, সেই ষ্টেশনে তাকে ছাড়ি সুখ কৈলাস, রিসিভ করতে এসেছেন স্বয়ং শ্যামা মা, লম্বা, ভীষণই লম্বা জার্নি করে এসেছে সন্তান, তাকে তো বরাভয় রূপে মা শ্মশানে রিসিভ করবেনইঃ জ্বলিয়া মরিলি কে সংসার-জ্বালায়, তাহারে ডাকিছে মা, চলে আয়, তাহারে ডাকিছে মা কোলে আয়, কোলে আয়’, জীবনে শ্রান্ত ওরে, ঘুম পাড়াইতে তোরে, কোলে তুলে নেয় মা মরণের ছলে। তাহলে মামুলি একটা ক্লান্তিকর ভ্রমণ, উম? হ্যাঁ, কারণ শেষ নেই, এ অনন্ত, যাকে শেষ বলে মনে হয়, সেটা আপাত একটা শেষ, আ মিয়্যার পজ, তার পরে আরম্ভ আছে। আবারও।

 

অনেক গান মিলে আমার লেখার একটা বড়ো চাঙ্ক লিখে দিলো। যাঁরা পড়বেন, তারা প্রায় সবাই, বিপন্ন হতাশা নিয়ে বলবেনঃ (চান্স খুবই কম; আরে, হেঃ হেঃ, পড়লে পর তবে তো হতাশ হওয়ার কথা ওঠে; তবে এটা জানি, আমার লেখালিখি নিয়ে একটা গ্রস হতাশা নিরানব্বই দশমিক নয় নয় শতাংশ লোক পোষণ করে) একটাও প্রেমের গান নেই?! মানুষ-মানুষীর প্রেমের গান! স্মিত হেসে তাঁদেরকে বলারঃ হৃদয়ের সাথে কোনো হৃদয়ের, যোগ করা যখনই শিখেছি, অঙ্কতে হয়নি তো কোনো ভুল, শূন্য যে বারেবার পেয়েছি।

 

লেখাটা লিখে একটু আড়চোখে তাকিয়েছিলাম, মন্দ সাইজের হয়নি কিন্তু! শারীরিক ধকলই আসল কথা, বিরক্তিকরও বটে, না ধকলটা নয়, সে তো বয়স মেপেই এসে গিয়ে স্বাভাবিক, বিরক্তিকর হলো গিয়ে লেখাটা; তো, ধ্বস্ত আমি অপাঙ্গে চেয়েছিলাম লেখাটার আকারের দিকে, আর শান্ত নদীটি, পটে আঁকা ছবিটির দিকে ফিরে তাকানো মানেই আই থ্র্যেউ আ পেবেল ইন আ ব্রুক, অ্যান্ড ওয়াচড দ্য রিপল্‌স রান অ্যাওয়ে, অ্যান্ড দ্য নেভার মেড আ সাউন্ড, অ্যান্ড দ্য লিভস দ্যাট আর গ্রীন টার্ন টু ব্রাউন। তা দেখলাম, লেখাটার প্রাসঙ্গিক লিখন থেকে ফাকিং শব্দটাকে অনায়াসে গ.সা.গু করে নেওয়া যায়, আর করে নিলে মন্দ হতো না, সবই জানেন সবাই, কিন্তু ভদ্রচোখে খটকা লাগে, হাম্প ভর্তি রাস্তায় বাজে সক্‌ অ্যাবজর্ভারের গাড়ী যেমন, এই আর কি, নচে; - ফাকিং স্থান, ফাকিং কাল, ফাকিং পাত্র, ফাকিং জাগরণ, ফাকিং সৃস্টি, ফাকিং ধ্বংস, ফাকিং অফিস, ফাকিং টাকা, ফাকিং মস্তি, ফাকিং অবসাদ, ফাকিং আনন্দ, ফাকিং অশ্রু, ফাকিং দিন, ফাকিং রাত, ফাকিং কাজ, ফাকিং আড্ডা, ফাকিং অতিথি, ফাকিং গৃহকর্তা, ফাকিং মঙ্গল, ফাকিং সর্বনাশ, ফাকিং অধিকার, ফাকিং কর্তব্য, ফাকিং প্রেম, ফাকিং কলেরা, ফাকিং ক্যানসার, ফাকিং অস্তিত্ব, ফাকিং আয়ু, ঘাড়, নেহাত সামান্য নয়, প্রথম তিনশো ষাট ডিগ্রী ব্যাটার দক্ষিণ আফ্রিকা দলের এ. বি. ডেভিলিয়ার্সের মতো অতোটা না হলেও, একশো আশি ডিগ্রী ঘোরালেই, অ্যাত্তো অফল, লাউড-কিন্তু-আদত-কথনে-অরব হতে পারে একটা মানুষ জন্ম! সুতরাং, ফাকিং বেঁচে থাকা...

 

তারপর? তার পরে আর জানি না; তবে আন্দাজ করতে পারি; - পারানির নির্দিষ্ট কড়ি, কড়কড়ে কড়ে গুণে নিয়ে কর্ণধার, নৌকা ছাড়লে, একসময় অশ্রুনদীর সুদূর ওপার, সে পাড়ে উঠে প্রগাঢ়-কিন্তু-দীর্ঘ-ঘুমটা ঘুমোতে যাওয়ার আগে, আর একবারের জন্য ঘাড় ঘুরিয়ে বেঁচে থাকার দিকে তাকালে পর তার শেষটুকু, সুখ স্বপনে, শান্তি শ্মশানে, সেই শ্মশানেই, মরচুয়ারী ভ্যান থেকে ওই নামানো হচ্ছে আমার লাশ, মানে, বডি, মানে, কন্‌টেইনারটাকে; শ্মশানে, বামুনে-ডোমে মিলে ওই, হিন্দু রীতি রেওয়াজ; মরেছে, আপদ গেছে; কিন্তু কিছু একটা করা হচ্ছে, এমন একটা ভাব আফটার অল, ফুটিয়ে তুলতে হবে তো! ওই কে একটা পাটকাঠিগুচ্ছে আগুনে নুড়ো জ্বালিয়ে প্রদক্ষিণ করছে, আর একবার করে থোবড়ায় ঠেকাচ্ছে; আহা, কি দরদ দিয়ে করছে মাইরি, কে ও?! জয়িতা তো দেখছি একপাশে আনমনা দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। আকাশ... অসীম আকাশ, তারই নীচে চেয়ে দেখো ঘুমায় মানুষ, জাগে শুধু কতো ব্যথা হাহাকার, ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট আশা, কে রাখে খবর তার... নীল অজানা আকাশ, তবু খাঁচা ভেঙে উড়ে যায় পাখি। কেন যায়, কেন যায়, গুলমোহরের ফুল ঝরে যাওয়ার মতো করে? কারণ সেও আকাশ পাবে কোনোদিন, শেষ নেই যার কোনো। তা কি তীর মেরে এলাম, এই বেঁচে থাকায়, অক্সিজেন নেওয়া আর কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া বাদ দিলে? - কেন, আমি চেয়েছি অনেক, বারবার অবস্ট্রাক্টেড হলে কি করবো? ও রিয়েলি? হ্যাঁ, অবশ্যই; আর মৃত্যু তো আমায় দ্বিতীয় সুযোগ দেবে না, এবার তো প্রগাঢ়-কিন্তু-দীর্ঘ-ঘুমটার সময় অতঃপর, পরবর্তী জার্নি; আমি তো কোনওভাবেই মেরামত করে নিতে পারবো না, আমার জাষ্ট কিছুক্ষণ আগে ফেলে আসা বেঁচে থাকাটা আই সী, ইন দ্যাট কেস, বলতেই হয়, ফাকিং মৃত্যু।

 

তো, সখী মুছে দিতে, ডিলিট বাটনটা, অঙ্গুলিমেয়বার, হিট করতে হবে মাত্র। তাহলেই, ফতেহঃ - শুভ-সিন্দুর। ভালোবাসার রস? ইলেক্ট্রিক ক্রিমেট্যরে তো ছিলাম প্রায় ঘন্টাখানেক। ওই সাড়ে আটশো থেকে নশো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে (যেদিন বাবু যেমন দ্যান আর কি) সে রস শুকিয়ে কির্‌কিরে বালি হয়ে গেছে।

 

ছাই না হয় আবছা রকমের হলেও, অংশতঃ বোঝা গেলো। শ্যাওলা কেসটা কি? কেসটা, কেষ্টার থেকেও সহজ; - গান আমি নিজে চালিয়ে শুনতে বসিনি; অর্থা, এ আমার আর্ন্ড ক্রেডিট নয়; এ দূরাগত, আমি কর্ণদ্বয় কর্মক্ষম হওয়ায় আমি শুনতে পেরে ফেলেছি মাত্র। অতএব এ শুভ-সিন্দুর আমার কাছে ভাসতে ভাসতে এসেছে শুধু; অন্য কোনো গানও আসতে পারতো; এই তো এখন শুনছি; না, যেও না, তুমি যেও না, থামবে এ ঝড় থামবে, এখনই বৃষ্টি নামবে, রুক্ষ এ দিন শেষ হবে... একই অনুভূতির জলছাপ নিয়ে আর একটা গান মনে পড়ছে, অনেক পরের গান; সেটাও নিজস্ব মহিমায় ভাস্বর। কি গান সেটা? এবার আপনারা ভাবুন, আমি একটু ঘুমোতে যাই? অনেকটাই তো লিখলাম, হ্যায় কি নেহি?

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ !!!

 

ঋণঃ তালিকা ধরে এক্সপ্লিসীট্লি বলা উচিত ছিলো; আর ভালো লাগছে না; শরীরে দিচ্ছে না, আর কি! এখনো তো এই মরদেহতেই আছি; তবে সবাই তো জানেন, আমি, অনেকের প্রভাবে আছিইংরেজি গানের দিকে যাইনি জাতে মাতাল তালে ঠিক জ্ঞানে, আরও লিখতে হতো, এবং ফাটতো আমারইহাউএভার, আমি, সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

 



 

No comments: