Wednesday, November 16, 2022

ঐন্দ্রিলা, শিবু এবং বাকী আমরা

 

 

ঐন্দ্রিলা কে, আমি জানি না। জয়িতাকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, তিনি একজন অভিনেত্রী এবং তাঁর ক্যানসার, সেরেব্রাল অ্যাটাক এর কথা। তারপর আজ ফেসবুক থেকে জানতে পারলাম, তাঁর একটা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে গেছে এবং সর্বার্থে, তিনি ভালো নেই; এবং এতোটাই ভালো নেই, যে, তাঁর মৃত্যুর ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়েছিলো।

 

এটা দেখেছি, হয়; - সেরেব্রাল অ্যাটাকের পিছু ধরে আসে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ও ফলতঃ, মৃত্যু। অক্সিজেন স্যাচুরেশন, অ্যাবসল্যিউট সুগার ফল, হার্ট পাম্প, হার্ট-লাঙ মেশিনের আঁকিবুঁকি রেখা ইত্যাদি-প্রভৃতি মেডিক্যাল টেকনোলজির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে, মৃত্যু, এসে, সঙ্গে করে নিয়ে যায়; নিয়ে যায় কেননা তার সময় হয়েছে। যাওয়ার। আমি সবার জন্য একটা নির্দিষ্ট আয়ু কামনা করি। কেউ সেই সংখ্যা না পেরিয়ে চলে গেলে 'পর কাঁদি না, হাসিও না; চিনি না যে ! সে মৃত্যুর খবর কানের এপাশ দিয়ে ঢোকে, তো, অন্যপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সে সংখ্যা টপকানোর আগেই, কোনো স্বজন যখন টপকে যায়, তখন কিন্তু, দুখেই কেঁদে ওঠে মন, সুখে নয়।

 

যতো বড়োসড়ো রোগ, তার তত ভারী ভারী নাম, তার থেকেও জটিল উচ্চারণের মেশিন।

 

জানি আমি। খবরের কাগজ পড়ি না, নিউজ চ্যানেল দেখি না, তবুও, কেমন করে যেন নানান খবর মাধ্যাকর্ষণহীন ফটোফ্রেমের মতো ঝুলতে থাকে; কাটা ঘুড়ির চলন যথা লাট খেতে খেতে এগিয়ে যায়; এই যেমন কিনা আমরা সবাইও। এগোচ্ছি। কিংবা এও হতে পারে, যে, ত্যাঁদোড় ছেলের মতো ঘাড় কাত করে গোঁজ মেরে দাঁড়িয়ে আছি; কারোর ডাকাতেই ঘরে ঢুকছি না; কেননা বাবা, দুই থাপ্পড় কষিয়ে, বাড়ী থেকে বার করে দিয়েছে কিনা, তাই বাবাকেই ঘরে ডাকতে হবে। তাই একজায়গায় গ্যাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর একটা নির্দিষ্ট দূর থেকে ছুটে আসছে একটা ম্যাটাডোর, সেখানে ফুলেল আবহ, ধুপের গন্ধ, নামাবলী, গীতা সব পরিপাটি করে সাজানো। আমাকে জাষ্ট উঠে পড়তে হবে, চারটে কাঁধ, বোধকরি, জুটে যাবে, তুলে দেওয়ার জন্য। এদিকে তো আমাকে প্রস্তুত করা হয়েছে কি-যেন-বলে, হ্যাঁ, মরচুয়ারী র‍্যাপে। পাশে চশমাটা, নাহ, ওটা থাকবে না, জয়িতা ওটাকে তুলে রেখে দেবে, ওটা ওর একান্ত নিজস্ব স্মৃতির। এ যাওয়া সকলের, তবে একা এবং একার।

 

যে কথা হচ্ছিলো, গত পরশু কিংবা তার আগের দিন, এই বয়সে কি আর ওতো দিনক্ষণ মনে থাকে, দিনগত পাপক্ষয় করে এসে; - থাকে না, স্মৃতি বেহেড খচড়া মেরে যায়; তবু্ও দিন কয়েক আগে, আমাদের এগারো - বারো কেলাসের বন্ধুরা সস্ত্রীক ও সসন্তান বনভোজনে যাবো, সেই বনভোজন ইস্পেশ্যাল হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ বানিয়ে আমাদের কি হইহল্লা রে ভাই, সে কথা কি আর বলবো...

মেনুর কথা একবার উঠেছিলো, এবার মম ও বন্ধু-পত্নীরা কম্মিস্যরিয়েটের দায়িত্বে আছে, সে থাক, কিন্তু আমি, যখন কিনা মেনু প্রায় ঠিক হয়ে এসেছে, সেই তখন, সেই আমি, যে কিনা সবসময়েই ভুল সময়ে ভুল কথা বলেছে, এমনকি জীবনের যাপনটাই ভুলবশতঃ নয়, একজাতীয়  ইচ্ছাকৃতভাবেই, ভুল বাঁচা বেঁচেছে; সেই অনিন্দ্য  কি অপরিত্যাজ্যভাবেই বলে উঠবে না, যে, সারাক্ষণ চিকেন খেতে খেতে তো ইনসিসর্স তথা ডেনচার তথা মুখে, চিকেনের পালক ছাড়ালে যে মিহি ফোরস্কিন, সেই ঢাকাই মসলীন মাফিক একটা ছাল-বাকল গ্রো করে যাবে; তার চেয়ে লাঞ্চে ভেড়া কিংবা পাঁঠা হোক এবং অতঃপর একটা সম্মিলিত খিস্তির রোল খেয়ে, চুপ করে যাবে।

 

তারপর শুধু সেক্সুয়াল কনোট্যেশনময় জোকসের ছড়াছড়ি; মহাজ্ঞানী মহাজনদের যে পথে করে গমন, মানে, যৌনগন্ধের জোকসগুলোকে সঙ্গী করে, আমরাও বরণীয় হয়ে উঠবো, আয়্যাম আ কামাসূত্রা ডটেড বয় বলতে বলতে। কেউ বা বলবেঃ আয়্যাম ম্যানফোর্স ওয়াইল্ড চকোলেট ফ্লেবারড গার্ল, বলে উঠে, পাছা ঝেড়ে, স্লীপ চড়তে যাবে, বা ঢেঁকি, যেটা স্বর্গে গেলেও নাকি ধান ভানে

 

আমাদের সমষ্টিগত কথোপকথনে শিবু, ওর বউ সবথেকে মুখর ছিলো; সেই শিবুর, নাহ, খুব বড়োগোছের কোনো রোগ নয়, ডেঙ্গু বা ডেঙ্গি (আচ্ছা, এ দুটো কি আলাদা রোগ? - আমি জানি না), কিন্তু এটা নিশ্চিত জানি, কাল বিকেলেই আমরা, সব-ঠিক-হ্যায় গোছের খবর একটা পাবো, শিবুর প্লেটলেট চল্লিশ হাজার থেকে আশি ছুঁই ছুঁই হবে, টুয়া, মানে, জয়িতার ভাইয়ের তো ছাব্বিশ হাজারে নেমেছিলো; জানতে পারবো, শিবুকে কখন নার্সিংহোম থেকে ছাড়া হচ্ছে। অতএব কোনো ভারিক্কি নামের কিছুর ব্যাপার নয় এটা।

 

একদম সঠিক বলতে পারবো না, যে, শিবু এখন, নার্সিংহোমে কি করছে; - নির্ঘাত কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধের ফলে ঘুমোচ্ছে। ওর স্ত্রী মহুয়া আর ছেলেরও ডেঙ্গু / ডেঙ্গি ধরা পড়েছে, ওদেরকেও অ্যাডমিট করতে হবে। কিন্তু শিবু কি ওই ঘুমের অঘোরতার মধ্যে জানতে পারছে, কি পরিমাণ আর্ততায় সময় কাটছে ওর নিকটজনেদের, একটু দূরে, আমরা, ওর বন্ধুরা কতোটা উদ্বেল হয়ে পড়েছি; সুদীপ্ত তো খবর শুনেই চলে গেছে মেডিকাতে, সঙ্গে নির্ঘাত দেবু।

 

এই আর্ততা, এই উদ্বেলতাই শিবুকে থামতে দেবে না।

যেমন কোনো একটা মির‍্যাকল তো ঘটতেই পারে, যাতে করে, ঐন্দ্রিলা সেরে উঠলেন। পৃথিবীতে রোজ কত না কিছু হয়, সব কি আমরা জানি, জানতে পারি? না, পারি না, কিন্তু এটুকু জানি, আশা আছে, কারণ শ্বাস আছে।

 

আফটার অল, বাঙালী কিনা...

 

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ গুগল ইমেজেস

 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে

No comments: