Friday, November 25, 2022

মানুষ আর মানুষের ভালোবাসা

 

 

আমি, যা কিছু লিখি, পড়া যায় এমন অথবা পঠনযোগ্যতার থেকে বহুপিছনে পড়ে আছে, এমন, শ্রাব্য বা শ্রবণের কুহরে পৌঁছুনোর যোগ্যতামান সেইসব লেখাগুলোর দিকে তাকিয়ে ফ্যাকফ্যাকিয়ে হাসে, সেইসব লেখা, আমি কিন্তু একদম নিজের, এমনতর দাবী করি না, করি না, কারণ, যে প্রসঙ্গে লিখছি, অনেকটা রেইকি করার মতো, বিষয়বস্তুটাকে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিই, টেনিদার পিসিমার বানানো তিলের নাড়ু, যেটা, সকালের দিকে একবার মুখে গেলে সন্ধ্যেবেলাতেও অক্ষয়, অব্যয় হয়ে থাকে, মোলার জাষ্ট হেরে ভূতযেটা বলছিলাম, বিষয়বস্তুটাকে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার আগে ঈশ্বরের কাছে প্রাথর্না করি, কন্টেন্টটা যেন টেনিদার পিসিমার বানানো তিলের নাড়ুর মতো হয়; কেননা, যতবেশী কচলানো হবে, ততো স্পষ্ট হয়ে উঠবে আবছায়াতে থাকা বিষয়টিও

 

মা, বাবা, নাহ, বাবা কই, কোথা থেকে আর আসবে, তাই, বউ, এই দুজনকেই বলছিলাম, আমার এক অনুভূতির কথামানুষ ভালোবাসেমানুষ মরেও যায়কিন্তু তার দাহকার্য শেষ হলে 'পর সে কিন্তু পঞ্চভূতে লীন হয়ে গ্যালো, মানে, মিশে গেলোমানুষটা যে কিনা ভায়া ইল্যেক্ট্রিক ক্রিম্যেটর ওই পঞ্চভূত ব্লা ব্লা... সে কিন্তু ভয়েড হলো না, একটা বিশেষরকমের অস্তিত্ব নিয়েই কোথাও রয়ে গেলো

যে ভায়া কফিন বা ভায়া জানাজা মাটির ভিতরে সেঁধিয়ে গেলো, তার ক্ষেত্রেও একই কথা, মাটির গভীর, মাটির উপরিতল হয়ে সেই শালা পঞ্চভূত কেসঅর্থাৎ কেউ ভয়েড হয়ে মুছে যাচ্ছে নাআমাকে দিয়ে বিচার না করাই ভালো, কারণ, ডাঃ কোভুরের সম্পূর্ণ বিপ্রতীপে লোকাস ষ্ট্যান্ডাই আমারআমি ভূত, ভগবান, শয়তান (মানুষের দেহের খাঁচা বা খোলের ভিতরে থাকা শয়তানও), পিশাচ, মারণ, উচাটন, বশীকরণ, জন্মান্তর এসবকিছুতেই পরিপূর্ণ অকাট্য বিশ্বাস করিকরি তো করিআপনার অসুবিধা হলে করবেন নাকরবেন না তো করবেন নানাহ, গণতন্ত্র নিয়ে হ্যাজ নামাতে আমি এখানে চাইছিই না; আমার বক্তব্য ব্রিফ অ্যান্ড প্রিসাইজডশুধু তাই না, অ্যাসেম্বেলডও বটে

 

সেদিন কথায় কথায়, আগের দিন আমি আর জয়িতা একটা বিয়েবাড়ী গিয়েছিলাম, মারও নেমতন্ন ছিলো, কিন্তু মা আর কি করে ওতোটা ধকল নেবে; পরদিন সাপার, নাহ, এটা সঠিক শব্দ হলেও অব্যবহারে জীর্ণ, হ্যাঁ, ডিনার টেবলে বসে বিয়ে বাড়ী সম্পর্কে আলোচনা করছি; ঠিক সেইসময়, আমি, একদমই আমি যথা, বলে ফেললাম, আচ্ছা, এই যে * আর ** দের বিয়ে হলো, এদের তো প্রেম, নাহ, একটু ওয়াইডে গিয়ে বলি, এদের তো ভালোবাসা করে বিয়ে, ধরে নিলাম এই ভালোবাসা রয়ে যাবেএই ধরে নেওয়ার মধ্যে কোথাও একটা চিরন্তনতার, একটা  ক্ষয়হীনতা, ব্যয়হীনতাকে কি, প্রকারান্তরে, স্বীকৃতি দিচ্ছি না আমরা? কারণ এইসব স্বীকৃতিদানের আগে, আমরা, একটা গোটা বাক্যকে উহ্য রেখে কথাগুলো বলেছি; উহ্য রাখা বাক্যটা হলো - মানুষ মরণশীল, কেউ লার্জার, কেউ বা লেসার, কিন্তু মর্টাল মানে মরবেইমরেই ছাড়বেএবং মরে প্রমাণ দিয়ে যাবে, মানুষ মরিয়া প্রমাণ করিয়া দিলো সে অ্যাতোদিন জিন্দা ছিলো

 

কিন্তু একটা মানুষ মরে গেলে কি তার সম্পর্কগুলোও মরে যায় কি? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে, আমার বাবা চলে যাওয়ার প্রায় বছর দুয়েক পরেও, বাবার কথা উঠলে জয়িতা, তার পাপা কথা বলতে বলতে, মাঝেমধ্যেই, ফুঁপিয়ে ওঠে কেন? স্মৃতি আছে বলেই না? কিন্তু কিসের স্মৃতি? কেন, সম্পর্কেরতাহলে ব্যাপারটা কি এইরকম দাঁড়াচ্ছে না, যে, স্মৃতি একার, কিন্তু, সম্পর্ক, সে একতরফা নয়মানুষ মরে গেলেও সম্পর্কগুলো মরে না, কারণ অতি সহজ, সম্পর্কের কাচ্চে ধাগার দুদিকেই মানুষ, একজন কমন হলেও অনেকানেক সম্পর্করজ্জু আর অনেকানেক মানুষ, ওই একটা মানুষকে ঘিরে, যে, দড়ির ওপারে, কমন ফ্যাক্টর হিসাবে রয়েছে

 

প্রশ্ন হলো যে মানুষটাকে, এইমাত্র, জাষ্ট এইমাত্র, বিদ্যুৎ-চুল্লীতে ঢোকানো হলো, তার সব সম্পর্ক তার সঙ্গে, বাঁশের চ্যাঁচাড়ির চালিতে তোলার পরও তার সঙ্গে সঙ্গে গেলো ওই ক্রিমেট্যরের গেট অবধি; অতঃপর বিদায় বলে ফিরে এলোফিরে এলো, না, ভয়ে নয়, বরঞ্চ লজিকে যে, সদ্য দাহ শুরু হওয়া সেই মানুষটির সঙ্গে তারাও যেতে পারতো, হ্যাঁ, অনায়াসেই, কিন্তু, সেক্ষেত্রে অনেককে জ্যান্ত, মানুষকে সহমরণে যেতে হতো

 

অতএব সম্পর্কগুলো রয়ে যায়, অন্ততঃ ততোদিন, যতোদিন, সম্পর্কের অন্যদিকের মানুষটির আয়ু থাকেকিন্তু তারপর? তারওপর? মা হেসে বললো যে, হয়তঃ তারা পঞ্চভূতের জায়গায় একভূতে বিলীন হয়ে রইলো, তবে, আর যাই হোক, ভয়েড নয়জয়িতা যোগ করলো তাদের পরবর্তী প্রজন্ম ওই বাতাসেই প্রশ্বাস নেবে, নিঃশ্বাস ছাড়বে, মানে অক্সিজেন আর কার্বন ডাই-অক্সাইডের রুমাল চোর খেলা, আর এই খেলা বা আদান-প্রদান কিংবা দেওয়া-নেওয়ার মধ্যে থেকে, অ্যাড অন হিসাবে, তাদের মনের (আমি ধরে নিলাম যে, , মন বলতে, মগজ বোঝাতে চাইছে) গভীরে অঙ্কুরোদগম হয়ে গোকূলে বাড়িছে সে -এর মতনই ভালোবাসার জন্ম এবং পালন হতে থাকবে

 

আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে পলিউশন ফ্যাক্টর আছে কিনা; ঠোঁট দুটোকে সরু করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছি, জয়িতা আর আমার মা একসঙ্গে বলে উঠলো যে, বন কেটে বসত হচ্ছে, এটা ঠিক কথাতবে কি না মানুষের ভিতরেও বসত করে অনেকজনা; আর সেই বসতের স্পেস, উভয়তঃ, তৈরী করতে গিয়ে যে রেটে বন কাটা হচ্ছে, তাতে করে, একদিন না একদিন, মানুষের ব্রিদিংয়ের স্পেসটাই আর থাকবে না

আমার সিগারেট শেষ হয়ে এসেছে, ক্যারম খেলার স্টাইল মাফিক টোকা মেরে জানলার গ্রিল দিয়ে ফেলতে যাবো, চোখে পড়লো, উল্টোদিকে বাবার দু-দুটো ছবি

 

বাবা ছবি হয়েও বেঁচে আছে, তবে !

 

 

 

অনিন্দ্য ঘোষ ©

ফটোকার্টসিঃ ওই, সেই সে জন, যে জন কিনা সমান্তরালে আছে


 

ঋণঃ আমি সজ্ঞানে বা অজান্তেই একপ্রকার, আমার বাক্যের শুরু, মাঝখান বা শেষে, বহু গায়ক / গায়িকার গানের অংশ, অনেকসময় কবিতার কোনো অংশ, কারোর গদ্যের কোনো অংশ, নামকরণ ইত্যাদি প্রভৃতি ব্যবহার করে ফেলি এখানেও যদি করে থাকি, তো, সেইসব কবিদের, গদ্যকারদের আর গানের ক্ষেত্রে, গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক / গায়িকা ও সেইসব গানের অংশভুক সকলকে